পাকিস্তানি সেনার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন চূড়ান্ত
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাবেক এক সদস্যের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। অবসরপ্রাপ্ত ওই সেনা সদস্যের নাম শহীদুল্লাহ।
মঙ্গলবার দুপুরে ধানমন্ডিতে তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। এর ফলে প্রথম কোনো বাঙালি পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত চূড়ান্ত করা হলো। ক্যাপ্টেন (অব.) শহীদুল্লাহর বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর তদন্ত শুরু হয়। প্রায় দেড় বছর তদন্ত শেষে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলো। তার বিরুদ্ধে কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার বিভিন্ন এলাকায় হত্যা, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগের তিনটি অভিযোগ আনা হয়েছে।
গত বছরের ২ আগস্ট তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। সেদিনই কুমিল্লার দাউদকান্দির আমিরাবাদ গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে ৩ আগস্ট ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে ক্যাপ্টেন শহিদুল্লাহকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার আমিরাবাদ গ্রামের আসামি ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ (৭৫) মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগে থেকেই পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঢাকা সেনানিবাসে পাকিস্তান দখলদার সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। পরবর্তীতে ঢাকা সেনানিবাস থেকে কুমিল্লার সেনানিবাসে যোগ দিয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে নিজ এলাকা দাউদকান্দি সদরে ক্যাম্প স্থাপন করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই এলাকাতেই আটক, নির্যাতন, অপহরণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাসহ অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত সংস্থার প্রধান হান্নান খান বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত বাঙালি কোনো সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এটিই প্রথম তদন্ত প্রতিবেদন। আর তদন্ত সংস্থার এটি ৪৯তম প্রতিবেদন। মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ না দেয়ায় তার বিষয়ে কোনো রেকর্ড সেনাবাহিনীর কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। তবে আসামি এখনও এলাকায় ক্যাপ্টেন নামেই পরিচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর এ আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে তদন্ত চলছে। আজই তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের কাছে দাখিল করা হবে।’সংবাদ সম্মেলনে জ্যেষ্ঠ তদন্ত কর্মকর্তা এম সানাউল হক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেডএম আলতাবুর রহমানসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে সানাউল হক বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে এমন অনেক বাঙালি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আমাদের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। তদন্তের স্বার্থেই তাদের নাম-ঠিকানা বা পরিচয় প্রকাশ করতে চাই না। আশা করি পরবর্তীতে ধাপে ধাপে আপনাদের কাছে তা তুলে ধরা হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত কর্মকর্তা আলতাফুর রহমানের দেয়া তথ্যমতে, এ আসামির বিরুদ্ধে ১৯ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এ ছাড়া জব্দ তালিকার সাক্ষী করা হয়েছে আরও তিনজনকে। ফলে মোট সাক্ষী হলেন ২১ জন।
এফএইচ/আরএস/ওআর/এমএস