জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের প্রশ্ন ফাঁস হয় না
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা বলেছেন, ‘পাবলিক সার্ভিস কমিশনসহ দেশের প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় প্রতিদিন পত্রিকায় নিউজ হচ্ছে। কিন্তু জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন একমাত্র প্রতিষ্ঠান যেখানে কোনো প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি। কারণ এখানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতিদের নেতৃত্বে একটি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। ওই বোর্ড মিটিংয়ের বৈঠকের পর প্রশ্নপত্রের দুটি সেট তৈরি করা হয়। কোন সেটের ওপর পরীক্ষা হবে তা বোর্ড চেয়ারম্যান নিজেই জানেন না। তাই প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।’
এসকে সিনহা বলেন, ‘বিজি প্রেস জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের প্রশ্নপত্র ছাপাতে রাজি না হওয়ায় অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আমরা জাপান থেকে ডুপ্লেক্স মেশিন এনে স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠান করেছি। সুতরাং স্বল্প বাজেটের মধ্যেও এই কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী দক্ষতার সঙ্গে যেভাবে কাজ করে চলেছেন তা সবার কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’
একটি মহল প্রশাসনকে বিচার বিভাগ সম্পর্কে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে চলেছে। এজন্য বিচার বিভাগের সঙ্গে প্রশাসনের ভুল বোঝাবুঝি চলছে বলে মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি।
শনিবার রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সেমিনার হলে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন রেজিস্ট্রেশন সিস্টেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘পাকিস্তান আমল থেকে দেখলে বোঝা যায় বিচার বিভাগকে ক্ষতি করেছে বিচার বিভাগের কয়েকজন। আমাদের বিচার বিভাগের কয়েকজন এজন্য দায়ী। বলা হয়, বিচার বিভাগ প্রশাসনের প্রতিপক্ষ। এটা কখনও ঠিক নয়। প্রত্যেক সরকারের আমলেই কিছু বিষয়ে বাড়াবাড়ি হবে। সে বিষয়গুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখবে বিচার বিভাগ। এজন্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রয়োজন।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাসদার হোসেন মামলার রায়ের মাধ্যমে আমরা বিচার বিভাগকে আলাদা করেছি। বিচার বিভাগ স্বাধীনতা রক্ষার জন্য। আমেরিকা সরকার বাড়াবাড়ি করলে বিচার বিভাগ তা নিয়ন্ত্রণ করে সমতা বজায় রাখছে। ভারতেও তাই ঘটছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, জেল হত্যা মামলা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, চট্টগ্রামে জাহাজ ভাঙার ক্ষেত্রে নিয়ম, মেডিকেল ভর্তির গাইডলাইন- এর সবটাই সুপ্রিম কোর্টের (বিচার বিভাগ) দ্বারা হয়েছে।’
প্রধান বিচারপতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বিচার বিভাগে তিন হাজার কোটি টাকা খরচ হয়। অথচ আমাদের জন্য কোনো খাত নেই। একটি মহল থেকে বিচার বিভাগ নিয়ে প্রশাসনে উল্টো মত তুলে ধরা হয়। তাই বিচার বিভাগের সঙ্গে প্রশাসনের ভুল বোঝাবুঝি চলছে।’
বিচার বিভাগকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিলে দেশে সন্ত্রাস ও অন্যায় কার্যক্রম অনেকাংশে কমে আসবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধান বিচারপতি। সভায় স্বাগত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ও আপিল বিভাগের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি খোন্দকার মূসা খালেদ, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির কান্ট্রি ডিরেক্টর সুদীপ্ত মুখার্জি, বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের সচিব পরেশ চন্দ্র শর্মা।
এফএইচ/বিএ/ওআর/জেআইএম