ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

বিজিএমইএ ভবন ভাঙার বিষয়ে শুনানি ১২ মার্চ

প্রকাশিত: ১১:১১ এএম, ০৯ মার্চ ২০১৭

পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন বিজিএমইএ’র বহুতল ভবন ভাঙার বিষয়ে করা আবেদন শুনানির জন্য ১২ মার্চ দিন ধার্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

ভবন থেকে অফিস সরিয়ে নিতে তিন বছর সময় চেয়ে বিজিএমইএ’র করা আবেদনটি উপস্থাপন করা হলে বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বে তিন সদস্যের আপিল বিভাগ বেঞ্চ এদিন ধার্য করে আদেশ দেন।

আদালতের শুনানিতে এদিন বিজিএমইএ’র পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী। তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

আইন না মেনে গড়ে তোলা বিজিএমইএ’র ১৬ তলা ভবন ভাঙতে রায় দেন সুপ্রিম কোর্ট। সর্বোচ্চ আদালতের এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদন গত রোববার খারিজ হওয়ায় রাজধানীর বহুল আলোচিত এই ভবন ভাঙার বিষয়ে আইনি সব প্রক্রিয়া শেষ হয়। বিজিএমইএ অফিস অন্যত্র স্থানান্তরে কত দিন সময় লাগবে, তা জানিয়ে ৯ মার্চের মধ্যে আবেদন করতে বলেছিলেন আদালত। এর ধারাবাহিকতায় ৮ মার্চ সময় চেয়ে বিজিএমইএ আবেদন করে।

বিজিএমইএ’র পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, আদালতের আদেশ মোতাবেক রাজধানীর হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকায় অবস্থিত বহুতল ভবন সরানোর জন্য তিন বছর সময় চাওয়া হয়েছে।

এর আগে, ৫ মার্চ বিজিএমইএ ভবন ভাঙার রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। রিভিউর রায়ের পর আইনজীবী ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, আদালত রিভিউ আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। তবে ভাঙার জন্য ওই ভবন খালি করতে কি পরিমাণ সময় দরকার আদালত সে বিষয়ে আমাদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন। তারা মৌখিকভাবে তিন বছর সময় চেয়েছেন।

আদালত বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ বিষয়ে লিখিতভাবে আবেদন করতে বলেছেন। ওই দিনই সময় আবেদনের বিষয়ে আদালত আদেশ দেবেন। সে অনুযায়ী আজ এই আবেদন করা হল, জানান ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম।

ভবন ভাঙার নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে বিজিএমইএ’র আপিল ২০১৬ সালের ২ জুন খারিজ করে দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের বেঞ্চ। একই বছর ৮ নভেম্বর আপিলের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। রায়ে বিজিএমইএ’কে অবিলম্বে ভবন ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়। অন্যথায় রাজউককে ৯০ দিনের মধ্যে ভবনটি ভেঙে ফেলতে বলা হয়। তবে রাজউক ভাঙলেও খরচ বিজিএমইএকে বহন করতে হবে বলেন আদালত।

রায়ের অনুলিপি প্রকাশের এক মাসের ব্যবধানে রিভিউ করে বিজিএমইএ। সেই রিভিউ আবেদনও খারিজ হয়ে গেলে ভবন ভাঙা ছাড়া এখন আর কোনো বিকল্প পথ নেই।

মামলার বিবরণে জানা যায়, রাজউক অনুমোদন ছাড়া বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ বিষয়ে ২০১০ সালের ২ অক্টোবর একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন আদালতের দৃষ্টিতে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ডিএইচএম মুনিরউদ্দিন। পরের দিন ৩ অক্টোবর হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন।

রুলে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। ওই রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ বিজিএমইএ ভবন অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন।

হাইকোর্ট রায়ে বলেছিলেন, ‘বিজিএমইএ ভবনটি সৌন্দর্যমণ্ডিত হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যান্সারের মতো। এ ধ্বংসাত্মক ভবন অচিরেই বিনষ্ট না করা হলে এটি শুধু হাতিরঝিল প্রকল্পই নয়, সমস্ত ঢাকা শহরকে সংক্রামিত করবে।’ হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, ‘বিজিএমইএ যাদের কাছে ওই ভবনের ফ্ল্যাট বা অংশ বিক্রি করেছে, দাবি পাওয়ার এক বছরের মধ্যে তাদের টাকা ফেরত দিতে হবে।

হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ৫ এপ্রিল চেম্বার বিচারপতি হাইকোর্টের রায়ের ওপর ছয় সপ্তাহের স্থগিতাদেশ দেন। পরে এ সময়সীমা বাড়ানো হয়।

ভবনটি ভেঙে ফেলতে হাইকোর্টের দেওয়া ৬৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ প্রকাশিত হয়। এরপর ওই বছর ২১ মে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় লিভ টু আপিল করে। সেই আপিল আবেদনটি গত বছর ২ জুন খারিজ হয়ে যায়।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে ১৯৯৮ সালে বিজিএমইএ তাদের প্রধান কার্যালয় ভবন নির্মাণের জন্য সোনারগাঁও হোটেলের পাশে বেগুনবাড়ী খালপাড়ের এ জায়গা নির্ধারণ করে। পরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) কাছ থেকে ৫ কোটি ১৭ লাখ টাকায় জমিটি কেনে। ওই বছরের ২৮ নভেম্বর ভবনটি তৈরির কাজ শুরু হয়। ভবনটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্মাণ কাজ শেষে ২০০৬ সালের অক্টোবরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ভবনটির উদ্বোধন করেন।

এফএইচ/এমএআর/পিআর

আরও পড়ুন