ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ

প্রকাশিত: ০৭:২৫ এএম, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

সনদ বাণিজ্য, ঢাকার বাইরে একাধিক ক্যাম্পাস, মালিকানা দ্বন্দ্ব ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে বেসরকারি দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধে হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এ রায়ের ফলে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় কার্যত বন্ধ হয়ে গেল।

বুধবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন- বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।

আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী খায়রুল আলম চৌধুরী।

পরে অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের জানান, এখন থেকে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেল। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়মের ক্ষেত্রে আদালত অত্যন্ত কঠোর। এ রায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য একটি বার্তা।

বার কাউন্সিলের সনদ গ্রহণ পরীক্ষায় দুই বছর মেয়াদী কোর্স সম্পন্ন করার পর সনদ গ্রহণ সংক্রান্ত বিষয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিয়ে রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে ২০১৬ সালের ২৫ জুলাই এলএলবি কোর্স সম্পর্কে কিছু নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের নির্দেশও দেন আদালত। হাইকোর্টের সেই রায়ের বিরুদ্ধে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় আপিল করেছিল। ওই আপিলের শুনানি নিয়ে আজ দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের আপিল খারিজ করেছেন। এছাড়া এই মামলায় অন্য যেসব বিশ্ববিদ্যালয় পক্ষভুক্ত হয়েছিল আবেদন নিষ্পত্তি করেছেন আপিল বিভাগ।

হাইকোর্টের রায়ের পরদিন ২৬ জুলাই দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়ে পরিপত্র জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরিপত্রে বলা হয়, কোনো শিক্ষার্থী ক্ষতিপূরণ চাইলে সরকার সহায়তা করবে। শিক্ষার্থীরা সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ চাইতে পারবে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের আউটার ক্যাম্পাসসহ সব কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে অন্য সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আউটার ক্যাম্পাসগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

জানা গেছে, রাজধানীর ধানমন্ডিতে বিশ্ববিদ্যালয়টি সরকারের সাময়িক অনুমোদন পায় ১৯৯৩ সালে। তখন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের দারুল ইহসান ট্রাস্ট নামের একটি ট্রাস্টি বোর্ড ছিল। এর সেক্রেটারি ছিলেন সৈয়দ আলী নকী আর সদস্য ছিলেন ছয়জন। পরবর্তী সময়ে মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বে উদ্যোক্তারা চার ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এরপর সারা দেশে শাখা ক্যাম্পাস খুলে রীতিমতো সার্টিফিকেট বাণিজ্য শুরু হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এর বিরুদ্ধে একপক্ষ মামলা করার পর মঞ্জুরি কমিশনের সিদ্ধান্ত স্থগিত হয়ে যায়।

২০০৭ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আউটার ক্যাম্পাস বন্ধের নির্দেশ জারি করার পর সৈয়দ আলী নকী হাইকোর্টে রিট করেন। এর মাধ্যমে তারা ২৯টি আউটার ক্যাম্পাস পরিচালনা সম্পর্কে স্থগিতাদেশ পান এবং বিভিন্ন স্থানে ৩৩টি আউটার ক্যাম্পাস চালাতে শুরু করেন। ওই স্থগিতাদেশের সুযোগে আরো তিনটি ট্রাস্টি বোর্ড পরিচালিত তিনটি ক্যাম্পাস বিভিন্ন স্থানে ১৩৫টিরও বেশি শাখা ক্যাম্পাস খোলে।

দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা সংকট, অনিয়ম-দুর্নীতি ও আউটার ক্যাম্পাসের মাধ্যমে ‘সনদ বাণিজ্য’ বন্ধ করাসহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে ২০১০ সালের অক্টোবরে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কাজী এবাদুল হককে প্রধান করে এক সদস্যের বিচার বিভাগীয় কমিটি করে সরকার। ২০১৩ সালের মার্চ মাসে সেই কমিটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়, যাতে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সুপারিশ করা হয়।

এফএইচ/এআরএস/পিআর

আরও পড়ুন