বিচারকদের শৃঙ্খলা সংক্রান্ত গেজেট নিয়ে আপিলে অসন্তোষ
নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধি চূড়ান্ত করতে সরকারকে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের মাধ্যমে সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি আজ অসন্তোষ দেখিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ।
নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা আগামী ২৪ নভেম্বরের মধ্যে গেজেট আকারে প্রণয়ন করতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে ঐদিন গেজেটটি আপিল বিভাগে দাখিল করতে বলা হয়েছে। আদালত বলেছেন, এটা শেষ সময়। আর কোনো সময় দেয়া হবে না।
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বে ৯ সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এই আদেশ দেন। বেঞ্চের অন্যান্য বিচারপতিরা হলেন- বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার, বিচারপতি মো. নিজামুল হক এবং বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান।
রোববার শুনানি শেষে মামলাটি আজকের (সোমবার) কার্যতালিকায় আদেশের জন্য ছিল। সে অনুযায়ী আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের কার্যতালিকার শীর্ষেই ছিল আবেদনটি। সোমবার সকালে শুনানির শুরুতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ৮ সপ্তাহের সময় প্রার্থনা করেন আদালতে।
সকালে চাকরি সংক্রন্ত বিধিমালা প্রণয়নের কাজ কতদূর এগিয়েছে সে বিষয়ে একটি এফডিভেট দাখিল করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তাতে বলা হয়, চাকরির শৃঙ্খলা বিধির খসড়া রাষ্ট্রপতির দফতরে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কবে পাঠানো হয়েছে সুনির্দিষ্টভাবে তা দিনক্ষণ উল্লেখ না থাকায় আপিল বিভাগ বলেছে, আপনাদের এই আবেদন অস্পষ্ট।
এ সময় আপিল বিভাগ বলেন, এর আগে আমরা দুই মাসের বেশি সময় দিয়েছিলাম, এর মধ্যে আপনারা রুল তৈরি করতে পারেননি। জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন প্রস্তুতকৃত বিধিমালাটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়েছে। আইনমন্ত্রী দেশের বাইরে আছেন, বিধি চূড়ান্ত করে গেজেট আকারে জারি করতে সময় প্রয়োজন।
আপিল বিভাগ বলেন, আপনারা বারবার সময় আবেদন করছেন। আপনারা যদি ভেবে থাকেন রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করলেই তা মঞ্জুর করব, এটা দুর্ভাগ্যজনক। পরে আদালত ২৪ নভেম্বর দিন ধার্য করে দেন। এ পর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল আরো চারদিন সময় বাড়ানোর জন্য অনুরোধ জানান। কিন্তু আপিল বিভাগ আবেদনটি নাকচ করে দেন।
আদালত আরো বলেন, শেষবারের মতো সময় দিচ্ছি। এর মধ্যে বিধি চূড়ান্ত করে গেজেট আকারে জারি করবেন। এর আগে বিধি প্রণয়ন সংক্রান্ত এই মামলার শুনানি হয় গত ২৮ আগস্ট। সেদিনই ৬ নভেম্বর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছিল। আজ আবার ২৪ নভেম্বর পরবর্তী দিন ঠিক করেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুরি, নিয়ন্ত্রণ, শৃঙ্খলা বিধান এবং চাকরির অন্যান্য শর্তাবলী) বিধিমালা-২০০৭ অনুযায়ী এখন অধস্তনও আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলা পৃথক বিধি তৈরি না হওয়া পর্যন্ত ১৯৮৫ সালের গভর্নমেন্ট সার্ভিস রুল অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত হবে।
১৯৯৯ সালে মাসদার হোসেন মামলার রায়ের ৭ নম্বর নির্দেশনা অনুযায়ী পৃথক শৃঙ্খলা বিধি তৈরি হয়নি। মাসদার হোসেন মামলার রায় ঘোষণার আট বছর পর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করা হয়। ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেন মামলায় ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেয়া হয়। ওই রায়ের আলোকে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল।
এফএইচ/এআরএস/আরআইপি