ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

‘ষোড়শ সংশোধনী বাতিলে সাংবিধানিক শূন্যতা বিরাজ করছে’

প্রকাশিত: ০৭:৪৬ এএম, ২৪ অক্টোবর ২০১৬

সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি অপসারণসংক্রান্ত সংবিধানের ১৬তম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ফলে বর্তমানে বিচারপতি অপসারণে সাংবিধানিক শূন্যতা বিরাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

সোমবার দুপুরে অ্যাটর্নি জেনারেলের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এমন মন্তব্য করেছেন তিনি।  এ সময় তিনি আরও বলেন, এ অবস্থায়  সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতির বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অভিযোগ আসলে আপাতত ব্যবস্থাগ্রহণ করা সম্ভব হবে না।

তবে অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের আরও জানান, ষোড়শ সংশোধনীর রায়কে অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে এক মাসের মধ্যে আপিল করা হতে পারে।

তিনি বলেন, আপিলে আমরা সব্বোর্চ চেষ্টা করবো যেন হাইকোর্টের রায় বাতিল হয়ে যায়। তবে সব কিছু সব্বোর্চ আদালত সুপ্রিমকোর্টের ওপর নির্ভর করছে।

তিনি বলেন, ৭২ এর মূল সংবিধানে ফিরে যাওয়ার প্রচেষ্টা ১৬ তম সংশোধনীর মাধমে সম্পন্ন হয়েছে। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান পাকিস্থানের আইয়ুব খান করেছিলেন সেটাতে আমরা যদি ফিরে যাই তাহলে এত ত্যাগ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বৃথা হয়ে যাবে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশনে এত লোকের প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।

এর  আগে গত ১০ আগস্ট বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছ থেকে সংসদের হাতে ন্যাস্ত করে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ, বাতিল ও সংবিধানপরিপন্থী ঘোষণা করে দেওয়া হাইকোর্টের দেওয়া ১৬৫ পৃষ্ঠার রায়ের অনুলিপি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ওই দিন বিকালে প্রকাশ করা হয়।
 
গত ৫ মে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ বলে রায় ঘোষণা করেন।
 
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আইনসভার কাছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা রয়েছে। দেশের সংবিধানের শুরুতে এই বিধান ছিল। তবে সেটি ইতিহাসের দুর্ঘটনা মাত্র।
 
ওই রায়ে আরও বলা হয়, কমনওয়েলথভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর ৬৩ শতাংশের অ্যাডহক ট্রাইব্যুনাল বা ডিসিপ্লিনারি কাউন্সিলরের মাধ্যমে বিচারপতি অপসারণের বিধান রয়েছে।
 
রায়ে বলা হয়, মানুষের ধারণা হলো, বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হবে। সে ক্ষেত্রে বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা দুর্বল হয়ে যাবে। মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
 
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধানটি তুলে দিয়ে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস হয়। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন এনে বিচারকের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে পুনরায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়। যেটি ১৯৭২ সালের সংবিধানেও ছিল।
 
সংবিধানে এই সংশোধনী হওয়ায় মৌল কাঠামোতে পরিবর্তন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করবে, এমন যুক্তিতে ওই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একই বছরের ৫ নভেম্বর হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়। ওই রিটের ওপর প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর রুল জারি করেন।
 
রুলে ওই সংশোধনী কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, আইন সচিব ও সংসদ সচিবালয়ের সচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
 
এই রুলের ওপর ২০১৫ সালের ২১ মে শুনানি শুরু হয়। ওইদিন আদালত মতামত দিতে অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) হিসেবে জ্যেষ্ঠ পাঁচ আইনজীবীর নাম ঘোষণা করেন। এর মধ্যে ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও আজমালুল হোসেন কিউসি অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন।
 
রিটকারীদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ জানান, সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ড. কামাল হোসেনসহ বেশিরভাগ আইনজীবী মত দেন, এই সংশোধনীর ফলে সংবিধানের মৌল কাঠামোতে পরিবর্তন হবে।
 
গত ১০ মার্চ মামলাটির চূড়ান্ত শুনানি শেষে ৫ মে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীকে অসাংবিধানিক বলে রায় দেন হাইকোর্ট।
 
রায় ঘোষণার পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছিলেন, তিনজন বিচারপতির মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠের রায়ে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করেছেন এবং বাতিল করেছেন। তারা যুক্তি দেখিয়েছেন যে, বিচারকদের যদি পার্লামেন্টের দ্বারা অপসারণের বিধান রাখা হয়, তাহলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হবে। তারা বলতে চেয়েছেন এ বিষয়ে আলাদা ট্রাইব্যুনাল থাকে। এই ট্রাইব্যুনালই বিচারকদের অপসারণের বিষয়টি সম্পন্ন করে।
 
অপরদিকে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলে হাইকোর্টের রায় প্রকাশের পর এই রায়কে ঐতিহাসিক বলে আখ্যা দিয়েছিলেন আইনজীবীরা।

এফএইচ/জেডএ/আরআইপি