শাজনীন হত্যা মামলা : একজনের ফাঁসি বহাল, চারজন খালাস
বহুল আলোচিত শাজনীন তাসনিম রহমানকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলার পাঁচ আসামির মধ্যে শহীদুল ইসলাম শহীদের ফাঁসির রায় বহাল রেখেছেন আদালত। বাকি চারজনকে খালাস দিয়েছেন আপিল বিভাগ। খালাসপ্রাপ্তরা হলেন- হাসান, বাদল, মিনু ও পারভীন।
মঙ্গলবার সকালে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এসকে) নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।
গত ১১ এপ্রিল আপিলের ওপর শুনানি গ্রহণ করে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ বিষয়টি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রেখেছিলেন। তিন মাস পর আসামিদের আপিল রায় ঘোষণার জন্য কার্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
আজ চূড়ান্ত রায়ে আসামিদের মধ্যে কেবল শাজনীনদের বাড়ির কর্মচারী শহীদুল ইসলাম ওরফে শহীদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে। আর খালাস পেয়েছেন সেই সময় শাজনীনদের বাড়ির সংস্কার কাজের দায়িত্বে নিয়োজিত ঠিকাদার সৈয়দ সাজ্জাদ মইনুদ্দিন হাসান, হাসানের সহকারী বাদল এবং গৃহপরিচারিকা দুই বোন এস্তেমা খাতুন (মিনু) ও পারভীন।
আসামিরা সবাই বর্তমানে কারাগারে বলে বাদীপক্ষের আইনজীবী এ এস এম আবদুল মোবিন জানিয়েছেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী এসএম শাজাহান বলেন, ‘ন্যায়বিচার পেয়েছি। ওই ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছিল। আপিল বিভাগ আজ একটি মামলার রায় দিয়েছেন। জজ আদালতে থাকা অন্য মামলাটি বাতিল হয়ে গেছে।’
আপিলের ওপর শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তাকে সহযোগিতা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল খোন্দকার দিলীরুজ্জামান। বাদীপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী (হাইকোর্টের অবসরে যাওয়া বিচারপতি) নজরুল ইসলাম চৌধুরী, এ এম আমিনউদ্দিন। আসামিপক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও এস এম শাহজাহান।
শাজনীন হত্যাকাণ্ডের প্রায় ১৮ বছর পর গত ২৯ মার্চ প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের বেঞ্চে হাইকোর্টে ফাঁসির আদেশ পাওয়া আসামিদের আপিলের শুনানি শুরু হয়। তিন সদস্যের ওই বেঞ্চের অপর দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।
গত ৫ এপ্রিল বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা ও বিচারপতি মো. ইমান আলীকে যুক্ত করে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ গঠন করা হয়। ৬ এপ্রিল থেকে ওই বেঞ্চে আসামিদের আপিল শুনানি শুরু হয়।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ১৯৯৮ সালের ২৩ এপ্রিল রাতে ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের মেয়ে শাজনীন তাসনিম রহমান গুলশানে নিজ বাড়িতে খুন হন। ওই ঘটনায় আনা মামলায় ২০০৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত রায় ঘোষণা করেন। রায়ে শাজনীনকে ধর্ষণ ও খুনের পরিকল্পনা এবং সহযোগিতার দায়ে ছয় আসামিকেই ফাঁসির আদেশ দেন আদালত।
আসামিরা হলেন- শাজনীনের বাড়ির সংস্কার কাজের দায়িত্ব পালনকারী ঠিকাদার সৈয়দ সাজ্জাদ মইনুদ্দিন হাসান ও তার সহকারী বাদল, বাড়ির কর্মচারী শহীদুল ইসলাম (শহীদ), বাড়ির গৃহপরিচারিকা দুই বোন এস্তেমা খাতুন (মিনু) ও পারভীন এবং কাঠমিস্ত্রি শনিরাম মণ্ডল।
বিচারিক আদালতের রায়ের পর এ মামলার মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের (ডেথ রেফারেন্স) জন্য হাইকোর্টে যায়। একই সঙ্গে আসামিরাও আপিল করেন। ২০০৬ সালের ১০ জুলাই হাইকোর্ট পাঁচ আসামি হাসান, শহীদ, বাদল, মিনু ও পারভীনের ফাঁসির আদেশ বহাল রেখে রায় দেন।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন (লিভ টু আপিল) করেন চার আসামি। তারা হলেন- হাসান, বাদল, মিনু ও পারভীন। ২০০৯ সালের ২৬ এপ্রিল সাজাপ্রাপ্ত চার আসামির ‘লিভ টু আপিল’ মঞ্জুর করেন আপিল বিভাগ। ফাঁসির আদেশ পাওয়া আরেক আসামি শহীদ জেল আপিল করেন। প্রায় সাত বছর পর গত ২৯ মার্চ ওই পাঁচ আসামির আপিলের শুনানি একই সঙ্গে শুরু হয়।
রায়ের পর আসামি পক্ষের সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, এই মামলায় একমাত্র স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আসামি শহীদুল। আদালত তার ফাঁসির রায় বহাল রেখেছেন। তিনি বলেন, আপিল বিভাগ চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলায় দৃঢ়তার সঙ্গে যে ন্যায়বিচার করেছেন তাতে আমরা সন্তুষ্ট।
আসামি পক্ষের অন্যতম আইনজীবী এস এম শাজাহান বলেন, এই হত্যার ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। একটি করেছিলেন শাজনীনের পিতা লতিফুর রহমান। সেটি দণ্ড বিধির ৩০২ ধারায় দায়ের করা হয়েছিল। এই মামলাটির তদন্ত চলা অবস্থায় সিআইডির তদন্তকারী কর্মকর্তা নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে আরেকটি মামলা করেন। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ আজ রায়ে বলেছেন, একই ঘটনায় দুটি মামলা হতে পারে না। কারণ ধর্ষণ ও হত্যা ঘটনার দুটি মামলার অভিযোগ একই। ফলে প্রথম মামলাটি বাতিল ঘোষণা করা হয়।
এফএইচ/এআরএস/পিআর