সময় আবেদনের বিষয়ে প্রসিকিউশনকে ট্রাইব্যুনালের সতর্কতা
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলা পরিচালনায় সময় চাওয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
এখন থেকে প্রসিকিউশনকে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী হাজির করার জন্য আর সময় না চাওয়ার আহ্বান করা হয়েছে।
এ সময় আদালত বলেন, ইতোপূর্বে আমরা অনেক সময় মঞ্জুর করেছি, এখন থেকে আর সময় চাওয়া যাবে না।
নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার ছয়জনের বিরুদ্ধে রোববার সাক্ষী হাজিরে সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ নির্দেশনা দেন।
আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল ও সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি।
পরে মোখলেসুর রহমান বলেন, নেত্রকোনার মজিদসহ ছয়জনের মামলায় ৬ নম্বর সাক্ষী হাজিরের জন্য সময় চেয়েছিলাম। কারণ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান মারা যাওয়ার পর অনেক দিন আদালত বন্ধ ছিল। এরপর ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠিত হওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ ছাড়া এ মামলায় ইতোপূর্বে পাঁচ সাক্ষীর জবানবন্দি শেষ হয়েছিল। এখন সাক্ষীরা নিজ এলাকায় কৃষিকাজসহ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত। তারা আদালতে আসার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। তাই সার্বিক প্রস্তুতির জন্য সময় চেয়েছিলাম। আদালত এ মামলায় পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ১ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন।
তিনি বলেন, এ সময় আদালত আমাকে এখন থেকে সব মামলায় সাক্ষী হাজিরের বিষয়ে প্রসিকিউশন যেন কোনো ধরনের সময় আবেদন না করে, সেটি সবাইকে (প্রসিকিউটর) জানিয়ে দিতে বলেছেন।
এর আগে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের এ মামলায় নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার ছয়জনের বিরুদ্ধে ১৯ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন।
গত বছরের ২২ মে এদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেছিল প্রসিকিউশন। এ মামলার আসামিরা হলেন- শেখ মো. আব্দুল মজিদ ওরফে মজিদ মওলানা (৬৬), মো. আব্দুল খালেক তালুকদার (৬৭), মো. কবির খান (৭০), আব্দুর রহমান (৭০), আব্দুস সালাম বেগ (৬৮) ও নুরউদ্দিন ওরফে রদ্দিন (৭০)।
ছয় আসামির মধ্যে গত বছরের ১২ আগস্ট গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন আব্দুর রহমান। বাকি পাঁচজন পলাতক। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা-গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী সাতটি অভিযোগ আনা হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে আটজন নিরীহ মানুষকে অপহরণের পর হত্যা, তিনটি বাড়ির মালামাল লুট, আটটি ঘরে অগ্নিসংযোগ ও একজনকে ধর্ষণের অভিযোগ।
তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের সময় তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়কারী আব্দুল হান্নান খান জানান, চার ভলিউমে মোট ৩০৯ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে ৪০ জনের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে, যারা ট্রাইব্যুনালে আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষী দেবেন।
আসামিদের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে সানাউল হক জানান, মজিদ মওলানা মুক্তিযুদ্ধের সময় নেজামে ইসলামির নেতা হিসেবে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আর খালেক তালুকদার একাত্তরে মুসলিম লীগের কর্মী হিসেবে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। পরবর্তীতে বিএনপি, জাতীয়পার্টি ও জামায়াতের সঙ্গে জড়িত থাকলেও বর্তমানে তিনি পূর্বধলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।
এ ছাড়া কবির খান মুসলিম লীগের কর্মী হিসেবে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন, বর্তমানে উপজেলা বিএনপির সদস্য। আব্দুর রহমান, আব্দুস সালাম বেগ ও নুর উদ্দিনও মুক্তিযুদ্ধের সময় মুসলিম লীগের কর্মী হিসেবে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন, বতর্মানে তারা বিএনপির সমর্থক।
গত বছরের ১২ আগস্ট গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর পূর্বধলার জারিয়া ইউনিয়নের গণকপাড়া গ্রামের মৃত মৌলভী হোসেন আহম্মদ ওরফে হোসেন মৌলভীর ছেলে আব্দুর রহমান ও ঘাগড়া ইউনিয়নের সুনাইকান্দা গ্রামের মৃত আইয়ুব আলীর ছেলে আহাম্মদ আলীকে নিজ নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে স্থানীয় পুলিশ। ১৩ আগস্ট তাদের আদালতে হাজির করা হলে কারাগারে পাঠিয়ে দেন ট্রাইব্যুনাল।
পরে কারাগারে থাকা অবস্থায় অসুস্থ হয়ে মারা যান আহাম্মদ আলী। ট্রাইব্যুনালের অনুমতি নিয়ে গত বছরের ২০সেপ্টেম্বর সেফহোমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে গ্রেফতারকৃত আব্দুর রহমানকে।
আসামিদের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের ২১ আগস্ট দুপুরে রাজাকার বাহিনী নিয়ে বাড়হা গ্রামের আব্দুল খালেককে গুলি করে হত্যার পর কংস নদীর পানিতে মরদেহ ভাসিয়ে দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। ২০১৩ সালে শহীদ আব্দুল খালেকের ছোট ভাই মুক্তিযোদ্ধা আ. কাদির বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
এফএইচ/এমএমজেড/জেআইএম