ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাগো উপকূল

মাছ ধরা নিষিদ্ধ সময়ে অনাহারে-অর্ধাহারে জেলেরা

প্রকাশিত: ০৪:৩৪ এএম, ২৪ অক্টোবর ২০১৬

‘কেন্নে (কিভাবে) সংসার চলবো? ২২ দিন দাইরাত (নদীতে) যাইতাম (যেতে) হাইত্তান্ন (পারবো না)। মাছ ধরোন নিষেধ। অভিযান চলে। আন্ডাও (আমরাও) চাই না কেউ মাছ মারুক। কিন্তু অন আন্ডা (এখন আমরা) কি করুম (করবো)? আঙ্গো (আমাদের) তো একমাত্র উপায় মাছ ধরা। মাছ ধরলে হেডে (পেটে) ভাত আইয়ে, না ধরলে উপাস (উপবাস)।’

ঠিক এভাবেই জাগো নিউজের কাছে কথাগুলো বলছিলেন নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের জেলে বেচু মাঝি।

কষ্টের প্রহরগুনে সুখের স্বপ্ন দেখছেন একই গ্রামের বাসিন্দা ইসমাইল মাঝি। তিনি বলেন, ‘সামনে আর কয়টা দিন। শুধু বসে বসে গুনছি। এখন না খেয়ে সংসার চললেও অভিযান শেষে তো মাছ ধরতে পারবো। তখন এ দুঃখ ভুলে যাবো।’

নিজের ভাষায় হতাশা ব্যক্ত করে পঞ্চাশোর্ধ এই জেলে বলেন, ‘হুইছি (শুনেছি) সরকার আঙ্গোল্লাই (আমাদের) কার্ড কইচ্ছে (করেছে)। হেই (সেই) কাডের চাইল (চাল) হায় (পায়) মিয়া-ভূঁইয়ারা। আন্ডা (আমরা) নাকি জাইল্লা ন (জেলে না)! চেরমন মেম্বরেগো (চেয়ারম্যান-মেম্বারদের) ধরি ঘুষ দি কার্ড করি আঙ্গো চাইল নিয়ে যা, আন্ডা হাই না। অন (এখন) ঘরে চাইল নাই। বেনে (সকালে) হানি ভাত (পান্তাভাত), দুরপে (দুপুরে) ডাইল ভাঙি (ডাল ভাজা) আর রাইতকা (রাতে) উপাস (উপবাস) থাকি ঘুমাই যাই।’

শুধু বেচু মাঝি কিংবা ইসমাইল মাঝি নন, উপকূলের বিভিন্ন জেলেপল্লী ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। তবে উপজেলা মৎস্য অফিস বলছে, চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় তারা সব জেলেকে এ সুবিধা দিতে পারছেন না।

upokul

পূর্বপুরুষের রেখে যাওয়া এ পেশাতেই প্রতিষ্ঠিত উপকূলের এসব জেলে। ইলিশের ভরাপ্রজনন মৌসুম চলায় তারা মাছ শিকারে যেতে পারছেন না। চলছে অলস সময়। নিষিদ্ধ এ সময় সরকারের পক্ষ থেকে যে বরাদ্দ রয়েছে তা পাননি ইসমাইল মাঝি। বিকল্প কোনো কর্মসংস্থানও পাচ্ছেন না। দাদনের টাকা পরিশোধ করতে করতে অতিষ্ঠ তিনি। স্বপ্ন দেখলেও এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারছেন না। ফলে আয় রোজগার না থাকায় অনাহারে-অর্ধাহারে চলছে তার সংসার।

গত কয়েক দিনে উপকূলের জেলেপাড়াগুলো পরিদর্শন করে দেখা গেছে, দীর্ঘ ২২ দিনের নিষিদ্ধ সময়ে বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় তারা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। চরম হতাশায় দিন কাটছে অনেকেরই। কীভাবে পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকবেন- সেই চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে সবার সংসারে। কাজ না থাকায় খণ্ডকালীন এ সময়টির জন্য অন্য পেশা খুঁজছেন  অনেকেই। মিলছে না তাও।

ইলিশ প্রজননের এ মৌসুমে জেলেদের মাছ ধরা থেকে বিরত রাখতে বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে সরকার। নিষিদ্ধ এ সময়টিতে বেকার জেলেদের ভর্তুকি হিসেবে ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে ৪০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা মৎস্য অফিসের মাধ্যমে এসব বরাদ্দ বিতরণ করায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিতে কার্ড বিলি বণ্টন হয় এমনটাই অভিযোগ এখনকার জেলেদের।

upokul
 
স্থানীয়রা জানান, তাদের জন্য বরাদ্দকৃত ভিজিডি কার্ড প্রকৃত জেলেরা পান না। বেশিরভাগ জেলেরই দিন কাটছে অর্ধাহারে-অনাহারে।

রহমত বাজারের জেলে ইব্রাহীম মাঝি জানান, সাত সদস্য নিয়ে তার সংসার। এ বছর ইলিশ বেশি ধরা পড়ায় বিগত বছরের মহাজনদের ধারদেনা শোধ করেছেন। তবে টাকা-পয়সা না থাকায় ৪০ হাজার টাকা দাদন নিয়ে নৌকা মেরামত করছেন। এজন্য সরকারের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাননি।
এমএসএস/এমএমজেড/এমএস