কভার লেটার হোক আপনার প্রতিচ্ছবি
একটি চাকরিতে আবেদনের জন্য সিভি বা জীবনবৃত্তান্ত যেমন গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক তেমনি কভার লেটারও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কভার লেটারের মাধ্যমেই সিভি বা জীবনবৃত্তান্ত যিনি দেখেন বা পরীক্ষা করেন তার সাথে সরাসরি যোগবন্ধন তৈরি হয়ে যায়। এ কভার লেটারের মাধ্যমে আপনি আপনার দক্ষতা, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, ক্ষমতা ও উদ্যমতা সহজেই তুলে ধরতে পারবেন। তাই পছন্দের চাকরিটি পেতে যথার্থ এবং আকর্ষণীয় কভার লেটার উপস্থাপন করা জরুরি। গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি নিয়েই আজকের আলোচনা।
কভার লেটার কেন জরুরি
যুগ পাল্টেছে। আর যুগের চাহিদামত এখন চাকরিদাতাদের আকৃষ্ট করতে এখন আপনার কেবল জীবনবৃত্তান্ত পাঠালেই হচ্ছে না। আপনার পুরো সিভির একটা সংক্ষিপ্তরূপ কিংবা আপনি কোন পদে আবেদন করছেন এবং এইচআর ম্যানেজারকে আপনার সিভিটি দেখতে বাধ্য বা আকৃষ্ট করার জন্য আধুনিক যুগের অন্যতম হাতিয়ার হলো ‘কভার লেটার’। চাকরিদাতা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের তথ্য মতে, কোনো প্রতিষ্ঠান যদি কেবল সিভি দেয়ার কথা বলে, তারপরও সিভির সাথে একটা আবেদনপত্র বা কভার লেটার দেয়া বর্তমান সময়ে চাকরিপ্রার্থীকে অনেকটাই এগিয়ে রাখে। তাই যেকোনো চাকরিতে সিভি দিতে হলে অবশ্যই সিভির কাভার পেইজ বা সিভির গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে উল্লেখিত এইচআর ম্যানেজার বরাবর একটা কভার লেটার দেয়া জরুরি হয়ে উঠছে।
এবার তাহলে জেনে নেয়া যাক, কীভাবে চাকরির জন্য ভালো মানের কভার লেটার লিখতে হয়-
গবেষণা
কভার লেটার লেখার আগে আপনি যে কোম্পানিতে সিভি দিচ্ছেন সে কোম্পানি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন। ঐ কোম্পানির কাজ, কর্মকর্তার-কর্মচারীবৃন্দের কর্মকাণ্ড, চাকরি প্রত্যাশী ও প্রতিযোগিদের ধরন ইত্যাদি সম্পর্কে ভালোভাবে জানুন। এর প্রতিটি তথ্য হয়তো আপনি কভার লেটার এ লিখতে পারবেন না। কিন্তু যদি ঐ কোম্পানির কাজ ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে আপনার সম্যক জ্ঞান থাকে, তবে তা আপনার জন্য একটি উন্নত মানের কভার লেটার লেখা সহজ হবে।
অ্যাড্রেসিং ইউর কভার লেটার
কভার লেটারে সম্বোধন করার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। চাকরির আবেদনপত্র যিনি দেখাশোনা করছেন, আপনি যদি তাকেই সম্বোধন করে কভার লেটার লেখেন, তাহলে তাকে অভিভূত করা বা বাগে আনা অনেক সহজ হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, আপনি যে কাঙ্ক্ষিত কোম্পানিতে চাকরি করার ব্যাপারে আসলেই আগ্রহী, তা প্রকাশ পাবে আপনার কভার লেটারে লেখা এবং উপস্থাপনের প্রকাশভঙ্গির মাধ্যমেই।
যদিও এখন অনেকটা সহজ হয়ে গেছে সম্বোধন/বরাবর/টু লেখার ব্যাপারটা- কেননা এখন অনেক কোম্পানিই উল্লেখ করে দেয়, কার বরাবরে কভার লেটার পাঠাতে হবে। আর যদি তা না হয়, তাহলে ওই কোম্পানির এইচআর তথা মানবসম্পদ বিভাগকেও ফোন করে বিনয়ের সাথে জেনে নেয়া যেতে পারে, বরাবর লেখার নির্দিষ্ট নাম, পদবি বা সংশ্লিষ্ট পরিচয়। অথবা ইন্টারনেটে খোঁজ নিয়েও দেখা যেতে পারে। তাতে আপনি কিছুটা তথ্যসমৃদ্ধও হবেন বৈকি। একেবারেই কোনো তথ্য না পেলে Dear Sir লিখে কভার লেটার পাঠানো যেতে পারে।
কভার লেটারে যেসব বিষয় থাকবে
ক. প্রথমেই আপনার কভার লেটার লেখার কী উদ্দেশ্য তা পরিষ্কার করবেন। একইসাথে আপনি কোথা থেকে চাকরির বিজ্ঞপ্তিটি পেয়েছেন, তা উল্লেখ করলে আরও ভালো হবে।
খ. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে আপনি কেন এ চাকরির জন্য যথার্থ তা লিখুন সংক্ষেপে। এ অংশে আপনার দক্ষতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে লিখুন।
গ. তৃতীয় ধাপে, আপনি যে কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানে চাকরির সিভি দিতে বা চাকরি নিতে চাচ্ছেন, সে প্রতিষ্ঠানে চাকরি হলে, আপনি প্রতিষ্ঠানটির জন্য কী কী ভালো সুযোগ-সুবিধা এনে দিতে পারবেন তা সম্পর্কে জানান। আপনার চাকরিতে যোগদান একইসাথে ক্যারিয়ারের লক্ষ্য এবং এ কোম্পানির সঙ্গে তা কীভাবে সম্পৃক্ত তা তুলে ধরুন।
ঘ. চতুর্থ অনুচ্ছেদে কেন আপনি এ চাকরিটি করতে চান এবং কেন আপনি নিজেকে যথার্থ মনে করেন, পুনরায় সারমর্ম হিসেবে ব্যাখা করুন। এককথায়, চাকরিদাতা যেন আপনার কভার লেটার পড়েই কল করতে বাধ্য হয়, তেমন কিছু ইতিবাচক ও সাহসী শব্দ এখানে ব্যবহার করুন।
কভার লেটারে লক্ষ্যণীয় বিষয়সমূহ
১. কভার লেটার যেন বেশি বড় না হয়ে যায়। কেননা, এটা এক ধরনের আবেদনপত্র বলে এক পাতা-ই যথেষ্ট। অর্থাৎ A4 সাইজের একপাতা। অবশ্য অনেক প্রতিষ্ঠান বর্তমানে কভার লেটারে কত শব্দ উল্লেখ করা যাবে, তা-ও উল্লেখ করে দেয়। সেক্ষেত্রে নিজেকে প্রেজেন্ট করতে হবে নির্দিষ্ট পরিমাণ শব্দের মাধ্যমেই।
২. স্মরণীয় যে, কভার লেটারের ভাষা যেন সহজবোধ্য ও সুস্পষ্ট হয়। ব্যকরণ ও বানানরীতিতে যেন ভুল না থাকে। গার্ডিয়ান জবসের এক জরিপে দেখা গেছে, ৮৩% আবেদনকারীর আবেদন বাতিল হয়ে যায় শুধু বানান ভুল থাকার কারণে।
৩. অবশ্যই কভার লেটার লিখতে বা তৈরি করতে বসার আগে চাকরির বিজ্ঞাপনের বর্ণনা ভালোভাবে পড়ে নিবেন। ওখানকার টার্মগুলোই লেটারে ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন। এতে মানবসম্পদ কর্মকর্তার নজর কেড়ে নেয়া যাবে সহজেই। আর তাতে আপনার আবেদন বাতিল হওয়ার সম্ভাবনাও অনেকাংশে কমে যাবে।
লেখক: সিইও এবং কো-ফাউন্ডার, ড্রিম ডিভাইজার।
এসইউ/পিআর