আজব জীবনবৃত্তান্ত!
আগে দর্শনধারী, পরে গুণ বিচারী। জীবনবৃত্তান্ত (সিভি) হচ্ছে দুই পেজের এমন একটি ডকুমেন্ট যা কিনা আপনাকে একজন অপরিচিতের সামনে তুলে ধরবে। যিনি তার কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব আপনার হাতে তুলে দিবেন। কাজেই আপনার সিভিটি এখানে আপনার ধারক এবং বাহক।
আপনার রুচিবোধ, ফলাফল, অভিজ্ঞতা সবকিছুই প্রকাশ পাবে আপনার সিভি থেকে। যারা সিভি নিরীক্ষণের ব্যাপারে দক্ষ, তারা কিন্তু সহজেই বুঝতে পারে আপনার সিভি দেখে যে আপনার রুচি কেমন। সিভি গুছিয়ে লেখা দ্বারা বোঝায়, আপনি ঘুছিয়ে কাজ করেন। একটা ভদ্র ছবি যুক্ত থাকলে সেটাও মানব সম্পদ বিভাগে থাকা লোকদের কাছে একটা পজিটিভ মেসেজ দেয়।
অনেকে নিজেকে ইউনিক বলে প্রমাণ করার জন্য ইউনিক সিভি তৈরি করেন। সেটাকে বলা হয় ক্রিয়েটিভ সিভি। আমি বলি সেটা হচ্ছে আজব জীবনবৃত্তান্ত (সিভি)। প্রথমে আমাদের জানা দরকার ক্রিয়েটিভিটিটা আসলে কী? ক্রিয়েটিভিটিটা কীসে আসবে? ক্রিয়েটিভিটি আনুন কাজে। সিভি রাখুন সিম্পল, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও রুচিশীল। সেটাই আপনাকে অন্যদের সামনে আরো ভালো ভাবে তুলে ধরবে, আপনাকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিবে।
সেদিন এক ভাইয়ের মেইল পেলাম, তার সিভিটা ওপেন করেই দেখি প্রথমে একটি ভবনের ছবি, কী ব্যাপার? সিভিতে ভবন আসলো কোথা থেকে? পরে দেখি সেটা তার বর্তমান ঠিকানা। বর্তমান নগরায়নের যুগে তার এই ক্রিয়েটিভ চিন্তা কতটা রুচিশীল- ভাবুন। যাই হোক, দ্বিতীয় পেজে গিয়ে দেখি একটি চৌচালা ঘর। এটা ওনার স্থায়ী ঠিকানা প্রকাশ করছে। এখন আপনিই বলুন- উনি কি ক্রিয়েটিভ? উনার এই ক্রিয়েটিভিটির সাথে চাকরি পাওয়ার সম্পর্ক আছে?
অনেক সিভি পাই, খুলেই দেখি বিরাট মোমবাতি, কেক। কাহিনি কিছু না, এটা দ্বারা তিনি তার জন্মদিন বুঝিয়েছেন। হাসবেন হয়তো, কিন্তু আপনার সিভিও হয়তো এরকমই। মনে রাখবেন, এই ধরনের সিভি কোনোদিনই বাংলাদেশের চাকরির বাজারে টিকবে না। দেশের প্রায় ২০ জন মানব সম্পদ বিভাগের লোকের সাথে কথা বলেছি লেখাটা তৈরি করার সময়। একজনও বলেননি যে, তারা এরকম সিভি আলাদা ভাবে মূল্যায়ন করেন। সবাই এসব সিভি ফেলে দেন বলে জানিয়েছেন। সবার একটাই মত, কাজকে ভালো ভাবে ফুটিয়ে তোলা। সবাই বলেছেন, ‘১৫-২০ সেকেন্ড সময় পাওয়া যায় একটি সিভি দেখতে। এর মধ্যে আমরা কাজটাই শুধু লক্ষ্য করি।’ মনে রাখবেন, ‘What is simple, That is Beauty.’
চলুন, আরো কিছু স্যাম্পল দেখাই। এক ভাইয়ের সিভি। দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আমি কিছু বলছি না, এটা কি ক্রিয়েটিভ? এটা কি রুচিশীল? আপনি হলে কি চাকরি দিতেন?
কিছু কিছু সিভি পাই যাতে পিঙ্ক, হলুদ ইত্যাদি নানান কালার যা মোটেই প্রফেশনাল নয়। তাই কালার ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাবধান। আসলে সাদা কাগজে কালো লেখাই সর্বোত্তম পছন্দ।
ভাষা দক্ষতা আরেকটি ক্ষেত্র। অনেকে টেবিল দিয়ে টিক দিয়ে দিয়ে ভাষা দক্ষতা প্রকাশ করেন। এরকম একটি টেবিল আপনাদের দেখাই, দেখে কি মনে হচ্ছে? এরকম টেবিল কি সিভিতে থাকা ভালো?
অনেকের সিভিতে কারওয়ান বাজারের সিগনালের মত ভাষা দক্ষতা অথবা মোবাইল নেটওয়ার্কের মত ভাষা দক্ষতা। একটি স্যাম্পল দেখুন। উনি বাংলা ৫ বাতি, ইংরেজি ৪ বাতি জানেন। কিন্তু বলুনতো ৪ বাতি ফ্লুয়েন্সি, সেটা কোন ভাষার জন্য? বাংলা নাকি ইংরেজি? লেখার দক্ষতা ৫ বাতি। তাও ভালো উনি ৭ ঘোড়া বা হাতি ডেকে এনে উনার দক্ষতা মাপেননি।
পরের আরেকটি স্যাম্পল দেখুন, একজন তার শখ লিখেছেন। আপনার কাছে কি মনে হয়, সিভিতে কাঁটাচামচ, চাকা, হেডফোন, হকিস্টিক থাকা প্রফেশনাল? আপনার সিভিও কি এরকম ক্রিয়েটিভ?
অনেকে বলতে পারেন, তাই বলে কি ক্রিয়েটিভ সিভি তৈরি করবো না? আমার উত্তর- শুধু গ্রাফিক্স ডিজাইন ও ফ্যাশন ডিজাইন পদ ছাড়া এদেশে আর কেউ এরকম ক্রিয়েটিভ সিভির কদর করে? দেশে ও দেশের বাইরে সবাই খোঁজে কাজের লোক। ইনফরমেটিভ সিভি চায় সবাই। তাই সিভিতে তথ্য দিন, তাতেই লোকের চোখে পড়বে।
এসইউ/এমএস