ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাগো জবস

নিজেকে সবসময় ছোট ভাবতে হবে : নাজিয়া আন্দালিব প্রিমা

প্রকাশিত: ০৭:১১ এএম, ২৮ এপ্রিল ২০১৬

নাজিয়া আন্দালিব প্রিমা। প্রখ্যাত ভিজ্যুয়াল আর্টিস্ট। পড়াশোনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায়। নিয়েছেন পশ্চিমা বিশ্ব থেকে ডিগ্রিও। তার আলোচিত ভিডিও পারফরমেন্সের মধ্যে রয়েছে মোনাজাত, অ্যান্ড স্টার কন্টিনিউস, ম্যারি মাই এগ, মনোলগ উইথ লাইট, এইজড উইথ সেলফোন, আইসোলেশন প্রভৃতি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অংশ নিয়েছেন চিত্রকলা প্রতিযোগিতা ও ওয়ার্কশপে। বাংলাদেশসহ ভারত, থাইল্যান্ড, শ্রীলংকা, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইস্তাম্বুল এবং মরক্কোসহ কয়েকটি দেশে একক চিত্রপ্রদর্শনী করে প্রশংসা কুঁড়িয়েছেন। ঘুরেছেন ইউরোপ, আমেরিকা, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া এবং চীনসহ অন্তত ২০-২৫টি দেশ।

২০১৪ সালে আউটস্ট্যান্ডিং ভিডিও আর্টের জন্য পেয়েছেন অনন্যা পুরস্কার, মোশন চিত্রকলার জন্য ২০০৯ সালে পেয়েছেন জাতীয় মহিলা পরিষদ পুরস্কার, ২০০৭-০৮ সালে পেয়েছেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন পদক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে পেয়েছেন ওয়েব আর্ট অ্যাওয়ার্ড, ২০০৩ সালে যুক্তরাজ্য থেকে পেয়েছেন রয়্যাল ওভারসিজ লীগ স্কলারশীপ এবং ১৯৯৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্কালপচার ও গ্রোবার্স সোসাইটি পদকসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চারুকলা অনুষদের নানা আয়োজনে সম্মানিত হয়েছেন পদক ও সম্মাননায়।

Andalib-Preema

প্রিমা বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের ডিরেক্টর ও ক্রিয়েটিভ এডিটর হিসেবে দেশ ও দেশের বাইরে তুলে ধরেছেন বাংলাদেশের সম্মান এবং ইতিবাচক নানা দিক। নারীদের ক্ষমতায়নসহ অধিকার আদায়ে যুক্ত আছেন উইমেন ইন লিডারশিপ, উইল নামে একটি সংগঠনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে। সংগীত ও টেলিভিশনে উপস্থাপনাসহ যুক্ত আছেন ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি হিসেবেও।

চিত্রশিল্পী এবং ব্র্যান্ড ফোরামের দক্ষ-যোগ্য এ কর্মকর্তার সঙ্গে ক্যারিয়ারের নানা দিক নিয়ে জাগো জবসের পক্ষ থেকে কথা বলেছেন গোলাম রাব্বী।

Andalib-Preema

জাগো জবস : শুরুতেই আপনার পড়াশোনা নিয়ে যদি একটু বলতেন-
নাজিয়া আন্দালিব প্রিমা : আমি পড়াশোনা করেছি ফাইন আর্টসে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায়। অবশ্য এখানেই থেমে থাকিনি, কাজ-পড়ালেখার পাশাপাশি আমি পশ্চিমা বিশ্বের চিত্রকলায় উর্বর ভূমিতে বহু ওয়ার্কশপ ও সার্টফিকেট কোর্স করেছি। আর এখনো শিখছি। যদিও ক্রিয়েটিভ ওয়ার্ল্ডে শেখার ধারা সবসময়েই চলমান।

জাগো জবস : আপনার ভিডিও আর্টিস্টিক মুডটি বেশ জনপ্রিয়- এ বিষয়ে কী বলবেন?
নাজিয়া আন্দালিব প্রিমা : মূলত কনটেম্পোরারি ওয়ার্ল্ডে যে প্র্যাকটিসটা হচ্ছে সেটা হচ্ছে- আর্ট এখন শুধু একটা জায়গায় সীমাবদ্ধ নেই। এখন আর্টের যে ফর্ম সেটা শুধু ছবি আঁকা বা পেইন্টিংসের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এটা চলে গেছে; ভিডিও আর্ট, ডিজিটাল আর্ট ও ইন্সটলেশনে, কনসেপ্টচুয়াল আর্টের মধ্যে এগুলো পড়ছে। কারণ শিল্পীরা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড নতুন কনসেপ্ট ডেভেলপ করছে। আর্ট এখন শুধু পেইন্ট না; তার সাথে আরো অনেক ইনগ্রেডিয়েন্টস, এলিমেন্ট এগুলো যোগ করে একে একটা ভিন্ন মাত্রা দেয়া হয়েছে যাকে কিনা আমরা কনসেপ্টচুয়াল আর্ট বলে অভিহিত করি। তো এরই এক ধারাবাহিকতায় আমি এই ভিডিও আর্ট নিয়ে চিন্তা-ভাবনা শুরু করি। যেমন- আমি ১৪ বছর ধরে ছবি আঁকছি প্রফেশনালি। তো একটা পর্যায়ে আমার কাছে মনে হল, যে ব্যাপারটা আমি বলতে চাই বা যে বিষয়টা আমি তুলে ধরতে চাই পেইন্টিংসের মাধ্যমে সেটা যথেষ্ট হচ্ছে না। তখন আমার কাছে অন্য একটা মিডিয়া খুঁজে নেয়া বেশ জরুরি বলে মনে হল। দেখা গেল যে, আমার কাজ আস্তে আস্তে একটা সোশ্যাল মুভমেন্টের দিকে চলে যাচ্ছে। তো যখন নিজের রিয়েল ভাবগুলো প্রকাশ করতে চাইলাম তখন কখনো যেমন শব্দের প্রয়োজন হয়, কখনো রঙের প্রয়োজন হয়, ঠিক তেমনি কখনো আরো বেশি কিছু, আরো ভাস্ট কোনো মাধ্যম; মানে বড় একটা থ্রি ডাইমেনশনাল প্ল্যাটফর্ম দরকার হয়। থ্রি ডাইমেনশনাল মাধ্যম বা যাকে বলে সিনেমাটোগ্রাফির মতো একটা জিনিস, যেটার সাহায্যে মানুষকে অনেক সহজে কিছু জানানো সম্ভব। এভাবেই মোশন বা ভিজ্যুয়াল মাধ্যমের সঙ্গে বসবাস।

Andalib-Preema

জাগো জবস : ব্র্যান্ডিংয়ের সঙ্গে আপনার যাত্রা বা শুরুটা কীভাবে?
নাজিয়া আন্দালিব প্রিমা : আসলে চিত্রকলা কিন্তু এক ধরনের ব্র্যান্ডিং-ই। কেননা আমরা চিত্রের মাধ্যমে আমাদের নিজস্ব সত্তাকেই ব্র্যান্ডিং করি। অনেক চিন্তা করে ও দেশ-বিদেশ ঘুরে দেখলাম সব দেশই নিজস্বতাকে বেশ ইতিবাচক করে প্রেজেন্ট করে। তখন ঠিক এক প্রকার দায়বদ্ধতা থেকেই লাল-সবুজের উদ্যানেও ব্র্যান্ড-ভ্যালু প্রতিষ্ঠায় শিল্পসত্তাটিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি। অবশ্য এক্ষেত্রে আমরা ব্র্যান্ড ফোরাম শতভাগ সফলও।

জাগো জবস : ব্র্যান্ড ফোরামের কর্মকাণ্ড, সফলতা ও ব্যর্থতা নিয়ে যদি বলতেন-
নাজিয়া আন্দালিব প্রিমা : ব্র্যান্ড ফোরাম মূলত দেশের নানা ইতিবাচক কাজকে ছড়িয়ে দিতে ব্র্যান্ডিং করছে। এর সফলতা আছে তবে এখনো ব্যর্থতা নেই। যেমন- আমাদের পর্যটন শিল্প, পোশাক শিল্প, ছয় ঋতুর পরিবর্তন এবং এখানকার মানুষের আতিথেয়তাসহ সব ইতিবাচক তথ্যাবলী নিয়ে কাজ হচ্ছে। আর প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধিতে আমরা কাজ করছি। বিশেষ করে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতিযোগিতা এবং পণ্যের মান ও ব্র্যান্ড ভ্যালু ক্রিয়েট করতে বা ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট রাখতে প্রতিবছর তাদের উৎসাহিত করতে ব্র্যান্ড ফোরাম সম্মাননাসহ নানা আয়োজন করে থাকে।

Andalib-Preema

জাগো জবস : কার অনুপ্রেরণায় এমন চ্যালেঞ্জকে ভালোবেসে ফেললেন?
নাজিয়া আন্দালিব প্রিমা : আমি সবসময় আমার পরিবার ও দেশ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে থাকি। দেখেন, এদেশের মানুষ কত শ্রমের বিনিময়ে, ঘামের বদলে সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করেছে এবং এখনো করছে। রাস্তায় বের হলেই গার্মেন্টস ছুটির প্রাক্কালে দেখি কত নারী-পুরুষ কতভাবে কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে দেশটাকে এগিয়ে নিচ্ছে। আর প্রাণপ্রিয় কৃষক, আমাদের মুখে অন্ন তুলে দিতে কত ঝড়-বৃষ্টিই না সহ্য করছে। এসব থেকেই আমি অনুপ্রেরণা পাই, আর এসবের মাঝে আমি যত পজিটিভ তথ্য পাই, সেগুলোকেই ব্র্যান্ডিং করি সারাবিশ্বে।

জাগো জবস : কোন কোন প্রতিষ্ঠানে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে?
নাজিয়া আন্দালিব প্রিমা : এরআগে আমি বহু সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছি। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য- বাংলাদেশ ইনফো ডটকম ও গ্রামীণ সাইবার নেট লিমিটেড। এছাড়া আমি নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি হিসেবেও যুক্ত রয়েছি।

Andalib-Preema

জাগো জবস : একইসঙ্গে এতো কাজ কীভাবে সামাল দিচ্ছেন?
নাজিয়া আন্দালিব প্রিমা : নিজের ভালো লাগা থাকলে; বড় হওয়ার জেদ ভেতরে লুকানো থাকলে- এটা আপনার পক্ষেও সম্ভব হবে। মনে রাখতে হবে, সবার আগে দরকার ‘নিজে কি চাই’- এটা জানা। এটা জানতে পারলে আপনি হাজারটার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও করা সম্ভব হবে। যেমন আমি। আর এর চেয়ে অনেক বেশি কিছু করে এমন লোকও এ পৃথিবীতে লক্ষ-কোটি সমমান হবে। আর সে তুলনায় আমার পরিধি ছোটই বলা চলে।

জাগো জবস : যারা আপনার মতো হতে চান- তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
নাজিয়া আন্দালিব প্রিমা : নিজেকে সবসময় ছোট ভাবতে হবে। চারপাশ থেকে শেখার মানসিকতা থাকতে হবে। নিজেকে ও নিজের দেশ, মা এবং মাটিকে বড় করে তোলা ও বিশ্বে নিজেদের সুনাম ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য দেশ সম্পর্কে জানতে এবং এখানকার মাটি ও মননকে সম্মান জানানোটাকে শিখতে হবে। সময় অপচয় করা যাবে না। কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিনোদন বা হাসি-ঠাট্টা করে মনকে প্রফুল্ল রাখতে হবে। ঘুরতে হবে। নিজের দেশটাকে অবশ্যই ভালোবাসতে হবে। আমাদের সব পজিটিভ কথাবার্তা সারাবিশ্বে ব্র্যন্ডিং করার জন্য বর্তমান তরুণ-তরুণীই হতে পারে প্রধান নিয়ামক।

Andalib-Preema

জাগো জবস : আপনাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া কেমন?
নাজিয়া আন্দালিব প্রিমা : আমি তো বহু প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি, এখনো করছি। সর্বত্রই এবং বিশেষ করে ব্র্যান্ড ফোরামে আমরা যখন কাউকে যুক্ত করার চেষ্টা করি, তখন প্রথমত দেখি ব্যক্তিটির বয়স যা-ই হোক, তার মানসিকতা কতটুকু তরুণ। তার প্রযুক্তিগত বিশেষ করে কম্পিউটার নলেজ এবং বর্তমানের ডিজিটাল ও স্মার্ট টেকনোলজি দক্ষতা কতটুকু। আর অবশ্যই কাজ করা ও প্রতিনিয়ত শেখার আগ্রহ আছে কিনা- সেটাও আমরা নিয়োগের ক্ষেত্রে খুব বিবেচনায় নেই।

জাগো জবস : সফলতা বলতে আপনি কী বোঝেন?
নাজিয়া আন্দালিব প্রিমা : পছন্দের কাজের সঙ্গে থাকতে পারাটাকেই আমার কাছে সফলতা বলে মনে হয়। আমি মনে করি, যিনি নিজকে চিনবেন, আর নিজেকে জেনে-বুঝে, নিজের ভালোবাসা বা ভালো লাগার বিষয়টির সাথে থাকতে পারবেন। সেই বিষয়টিতে তিনি প্রথম হতে পারেন বা না পারেন, আমি মনে করি, এই যে তিনি তার ভালো লাগার সঙ্গে থাকতে পারলেন, এটাই ওই ব্যক্তির সফলতা।

Andalib-Preema

জাগো জবস : ক্যারিয়ারে নেতৃত্বস্থানীয় পর্যায়ে যেতে চাইলে আপনার পরামর্শ কী?
নাজিয়া আন্দালিব প্রিমা : আমার পরামর্শ হলো- বসে না থেকে, সবসময় নিজেকে নিজের শ্রেষ্ঠ বা কাঙ্ক্ষিত বিষয়ের কাছে নিয়ে যেতে পরিশ্রম চালিয়ে যেতে হবে। আমি মনে করি কেউ যদি তার চাওয়া-পওয়ার সঙ্গে থাকে, তাহলে সে নারী-পুরুষ যা-ই হোক না কেন, বিজয়ী হবেনই।

জাগো জবস : আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান সময় দেয়ার জন্য।
নাজিয়া আন্দালিব প্রিমা : আপনাকে এবং জাগো নিউজকেও ধন্যবাদ আমাকে সুযোগ দেয়ার জন্য।

এসইউ/আরআইপি

আরও পড়ুন