নারী উদ্যোক্তারা ঝুঁকছেন নকশিকাঁথায়
বাংলাদেশের প্রাচীনতম ও জনপ্রিয় একটি শৈল্পিক ঐতিহ্য হলো নকশিকাঁথা। নকশিকাঁথা মূলত হস্তশিল্প, যা একসময় প্রায় প্রতিটি বাঙালি পরিবারের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। এটি প্রাচীন বাংলার নারীদের শৈল্পিক দক্ষতার একটি উজ্জ্বল নিদর্শন। বর্তমানের নারী উদ্যোক্তারা ঝুঁকছেন এই নকশিকাঁথার দিকে। ফলে অদূর ভবিষ্যতে পেশা হিসেবে নিতেও আগ্রহী হবেন তারা।
নকশিকাঁথার উৎপত্তি ঠিক কখন, তা নির্দিষ্ট করে বলা কষ্টসাধ্য। ধারণা করা হয়, প্রাচীন বাঙালি নারীরা তাদের ব্যবহৃত পুরোনো কাপড় ও শাড়ি ব্যবহার করে এই কাঁথা তৈরি করতেন। মূলত আর্থিক সীমাবদ্ধতা ও পুনর্ব্যবহারযোগ্যতার কারণে এ ধরনের কাঁথা তৈরির প্রচলন শুরু হয়। পরে এটি শিল্পে রূপ নেয় এবং ঐতিহ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
নকশিকাঁথার মূল আকর্ষণ হলো এর মনোমুগ্ধকর নকশা। প্রতিটি কাঁথায় বাঙালির জীবনের সুখ-দুঃখের ইতিহাস ফুটিয়ে তোলা হয়। এ ছাড়া ফুল, ফল, পাখি, মাছ, গ্রামের দৃশ্য, ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান ইত্যাদি নকশিকাঁথার অন্যতম বিষয়বস্তু। প্রিয়জনকে উপহার হিসেবেও দেওয়া হয় এ কাঁথা।
নকশিকাঁথা তৈরিতে প্রয়োজন হয় পুরোনো কাপড়, সুতার টুকরা এবং সুই। এই নকশাগুলো তৈরি করতে প্রচুর সময় ও মনোযোগের প্রয়োজন হয়, যা এই শিল্পের বিশেষত্ব। ফলে নকশিকাঁথার দাম এর আকার, নকশার জটিলতা এবং কারুকার্যের ওপর নির্ভর করে নির্ধারণ করা হয়। স্থানীয় বাজারের অবস্থা ও চাহিদার ওপরও এটি নির্ভর করে।
আরও পড়ুন
যারা নকশিকাঁথা তৈরি করেন, তারা সাধারণত কম দামে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। ব্যবসায়ীরা নকশিকাঁথা কেনার পর শহরের বাজারে বা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিক্রি করেন। শহরে বা আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁথাগুলোর দাম অনেক বেশি রাখা হয়। যা অনেকের মতে অনুচিত। তবে ব্যবসায়ীদের মতে, দামের পার্থক্যের মূল কারণ পরিবহন, বিপণন এবং অন্যান্য খরচ।
নকশিকাঁথা শুধু একটি শিল্প নয়, বাঙালি সমাজের গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। নারীরা এ শিল্পকর্মের মাধ্যমে তাদের সৃজনশীলতা প্রকাশ করেন। এটি পরিবারের মূল্যবান সম্পদ হয়ে ওঠে। আধুনিক সময়ে নকশিকাঁথা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারেও মূল্যবান পণ্য হয়ে উঠেছে, যা অর্থনৈতিকভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ফলে এ সময়ের নারী উদ্যোক্তারা নকশিকাঁথার দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছেন।
যে কারণে বর্তমানে নকশিকাঁথার কদর আরও বেড়েছে। ফ্যাশন ডিজাইনাররা এ ঐতিহ্যবাহী কাঁথাকে তাদের কাজের সঙ্গে সংমিশ্রণ করে নতুন নতুন ডিজাইন তৈরি করছেন। বিভিন্ন দেশীয় মেলা এবং আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে নকশিকাঁথা প্রদর্শিত হয়। উচ্চবিত্ত শ্রেণি এবং আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের মধ্যে এর জনপ্রিয়তা বাড়তে শুরু করেছে।
যেহেতু নকশিকাঁথা আমাদের নারীদের সৃজনশীলতা ও পরিশ্রমের উজ্জ্বল নিদর্শন। তাই এ ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখা সবার দায়িত্ব। নতুন প্রজন্মের নারীদের এ শিল্পকর্মের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে প্রশিক্ষণ ও অর্থনৈতিক সহায়তা দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। সুতরাং সরকারি ও বেসরকারিভাবে আরও বেশি উদ্যোগ নিলে আমাদের নারী উদ্যোক্তারা আরও সফল হবেন।
এসইউ/জিকেএস