বিসিএস হচ্ছে একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া: মোজাম্মেল হোসেন
মোজাম্মেল হোসেন মামুন ৪৩তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে (ব্যবস্থাপনা) সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নে। গ্রামেই কেটেছে তার শৈশবের সোনালি দিনগুলো। তিনি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। ব্যবসায়ী বাবাই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম। তিনি ছদাহা কেঁওচিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং সাতকানিয়া সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য চট্টগ্রাম শহরে পাড়ি জমান। সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনার্স এবং মাস্টার্স পাস করেন।
সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে তিনি বিসিএস জয়, ক্যারিয়ার পরামর্শ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—
জাগো নিউজ: ৪৩তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডার পেয়েছেন, অনুভূতি কেমন?
মোজাম্মেল হোসেন মামুন: এটি একটি দারুণ অনুভূতি। কাল যেটা স্বপ্ন ছিল; আজ সেটা বাস্তব মনে হচ্ছে। নিজের ওপর ভরসা পাচ্ছি যে, গত চার বছরের পরিশ্রম কিছুটা হলেও সার্থক।
জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?
মোজাম্মেল হোসেন মামুন: সব সময় স্বপ্ন ছিল ভালো একটি চাকরি করবো, প্রতিষ্ঠিত হবো। কিন্তু সেটি যে বিসিএসই হতে হবে এমন লক্ষ্য ছিল না। অনার্স শেষ করে যখন বন্ধুরা মিলে বিভিন্ন বিসিএস সেমিনারে যাই; তখনই বিসিএসের প্রতি আকর্ষণ শুরু হয়। যখন কোনো বিসিএস ক্যাডারকে দেখতাম; তখন এই আকর্ষণ আরও তীব্র হতো। এভাবেই বিসিএস আমার ফার্স্ট প্রায়োরিটিতে চলে আসে।
জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই, প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছেন?
মোজাম্মেল হোসেন মামুন: ২০১৯ সালের শেষের দিকে আমি বিসিএস প্রস্তুতি শুরু করি। করোনার পুরো সময়টাতে নিজের প্রস্তুতির ভিত গড়েছি। পাশাপাশি কোচিংয়ে প্রচুর মডেল টেস্ট দিয়েছি। কম বা বেশি হোক নিয়মিত পড়ার টেবিলে বসাকে রীতিমতো অভ্যাসে পরিণত করেছি। প্রতিনিয়ত নিজের দুর্বলতা খুঁজে বের করে প্রস্তুতিকে শাণিত করেছি। দুই-তিনটি টিউশন করাতাম। চাকরির প্রস্তুতিকালীনও টিউশন ছিল আমার প্রধান অবলম্বন। এর বাইরে যা সময় পেতাম, পড়ার টেবিলে দিতাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে পড়তে বসতাম আর রাতে পড়া শেষ করে ঘুমাতে যেতাম। এই ছিল আমার গত চার বছরের রুটিন। বিসিএস ছাড়া অন্য পরীক্ষায়ও অংশগ্রহণ করতাম, যাতে প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে না যাই।
আরও পড়ুন
জাগো নিউজ: আড়াল থেকে কেউ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন?
মোজাম্মেল হোসেন মামুন: আমার মা-বাবা, বিশেষ করে আমার পুরো পরিবার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণার উৎস ছিল। সব সময় চেয়েছিলাম আমি এমন কিছু করি, যেটা আমার পরিবারের সম্মান বৃদ্ধি করবে এবং তাদের একটি সুন্দর ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা দেবে। সব সময় যার অনুপ্রেরণা পেয়েছি, তিনি আমার মামা। আমি যখনই কোনো চাকরির পরীক্ষা দিয়ে হল থেকে বের হতাম; তখন ফোনে প্রথম কলটা আসতো তার কাছ থেকে। ফোনে জানতে চাইতেন, পরীক্ষা কেমন দিয়েছি? মামা সব সময় আমাকে দিকনির্দেশনা দিতেন। প্রস্তুতিকালীন সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট পেয়েছি ছোট ভাইয়ের। দুই ভাই একসাথে থাকতাম। আমার প্রায় কাজে সে হেল্প করতো। যেটি আমার অনেক সময় বাঁচাতো। আমি তার জন্য যা-ই করি না কেন, এই ঋণ কখনো শোধ করতে পারবো না।
জাগো নিউজ: নতুনরা বিসিএসের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?
মোজাম্মেল হোসেন মামুন: নতুনদের সব সময় একটা কথাই বলি, বিসিএস হচ্ছে একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া। প্রথম পরীক্ষাতেই বাজিমাত করে দিলাম বিষয়টা এমন নয়। এর জন্য লক্ষ্য হতে হবে অটুট। মানে আমি এটাকে যে কোনো ভাবেই চাই। অনেক ঝড়-ঝঞ্ঝা আসবে কিন্তু গন্তব্য থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া যাবে না। এ ছাড়া সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী আগাতে হবে। ধারাবাহিক পরিশ্রম করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকতে হবে। প্রস্তুতির শুরুতে আমি মনে মনে শপথ করেছিলাম, আগামী পাঁচ বছর নিজের সর্বোচ্চটা দেবো। তারপরে হিসাব করবো, কী পেয়েছি আর কী পাইনি। সৃষ্টিকর্তা আমাকে পরিশ্রমের ফল দিয়েছেন।
জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
মোজাম্মেল হোসেন মামুন: আমি সব সময়ই সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করতে আনন্দ বোধ করি। সমাজ বা বৃহৎ স্বার্থে কিছু করতে পারলে তৃপ্ত হবো। যে পেশাতেই থাকি না কেন, দেশসেবাই আমার প্রধান লক্ষ্য। যদি সেটা প্রশাসন বা পুলিশ ক্যাডার থেকে করতে পারি হয়তো বেশি ভালো হতো। তবে শিক্ষা ক্যাডার থেকে করতে পারলেও অতৃপ্ত হবো না।
এসইউ/জিকেএস