আমার সব কাজের প্রেরণা আমি নিজেই : জাহিদ হাসান
জাহিদ হাসান। বর্তমানে নিউজ ব্রডকাস্টার হিসেবে যুক্ত আছেন রেডিও ধ্বনিতে। এর আগে কাজ করেছেন রেডিও টুডে’র স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে। এছাড়া কয়েকটি অনলাইন ও পত্রিকায়ও কাজ করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে পড়াশোনা শেষ করে পেশা হিসেবে সাংবাদিকতাকেই বেছে নিয়েছেন। ছাত্রজীবনে বিভিন্ন সময়ে বির্তক, সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতা ও উপস্থিত বক্তৃতায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পেয়েছেন বেশ কয়েকটি পুরস্কার।
রেডিওতে কাজের ক্ষেত্র ও সাংবাদিকতায় নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে জাগো জবসের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন গোলাম রাব্বী।
জাগো জবস : শুরুতেই আপনার পড়াশোনা নিয়ে যদি কিছু বলতেন-
জাহিদ হাসান : আমার ছাত্রজীবন মোটেই সুখকর ছিল না। প্রতিকূল পরিবেশে নিজেকে টিকিয়ে রেখে পড়াশোনা করতে হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাটানো সময়গুলো অনেক সংগ্রামী ছিল। আমি কখনো ভাবিনি যে, পড়াশোনা শেষ করতে পারবো। শুধু কঠিন অধ্যবসায়, ধৈর্য্য আর সাহস সর্বোপরি বাবা-মায়ের দোয়া আমাকে এই পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে।
জাগো জবস : মিডিয়ায় যোগসূত্র স্থাপন করলেন কীভাবে?
জাহিদ হাসান : আমি মূলত মামা বাড়িতে বড় হয়েছি। মামা বাসায় পত্রিকা রাখতেন। তখন থেকে আমার নিয়মিত পত্রিকা পড়ার অভ্যাস গড়ে ওঠে। এরপর কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার পর স্থানীয় পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করি। একসময় ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়লেও লেখালেখি অব্যাহত ছিল। পরে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষে রেডিও টুডে’তে রিপোর্টিয়ের কাজ শুরু করি। রেডিও টুডে’র পুরো টিমের সঙ্গে কাজ করার পরই এ পেশাটাকে বেশি ভালো লাগে। সেই থেকেই ব্রডকাস্টিং জার্নালিজমের পথচলা শুরু।
জাগো জবস : সাংবাদিকতার আগে অন্য কোনো পেশায় যুক্ত হয়েছিলেন?
জাহিদ হাসান : ছাত্রজীবন থেকেই আমি বেশকয়েকটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থায় পার্টটাইম কাজ করেছি। তবে পূর্ণাঙ্গ পেশা হিসেবে সাংবাদিকতাই প্রথম। তবে আমার কাজগুলো সবসময়ে মিডিয়া রিলেটেড ছিল।
জাগো জবস : পত্রিকার অভিজ্ঞতা রেডিওর ক্ষেত্রে সহায়ক কিনা?
জাহিদ হাসান : আমি সংবাদপত্রে সংবাদদাতা হিসেবে কিছুদিন কাজ করেছি। কয়েকটি সাপ্তাহিক ও মাসিক ম্যাগাজিনেও কাজ করেছি। ঢাকায় বসে আমাদের স্থানীয় পত্রিকার সঙ্গেও কাজ করেছি। বলতে গেলে, স্থানীয় দু’টি পত্রিকার প্রতিষ্ঠা আমার হাত ধরেই হয়েছিল। ফলে পত্রিকায় কাজের অভিজ্ঞতা আজকের কাজের ক্ষেত্রে খুব সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
জাগো জবস : কার অনুপ্রেরণায় রেডিও অনুষ্ঠান, সংবাদ এবং টক-শো’র উপস্থাপক হলেন?
জাহিদ হাসান : আসলে আমার জীবনে সব কাজের প্রেরণা আমি নিজেই। প্রেরণা বলতে সরাসরি কেউ নেই। এটা ঠিক যে, অনেকের সহযোগিতা ছিল ও আছে। এছাড়া যারা মিডিয়াতে সফল তাদের কাজ দেখে অনুপ্রেরণা পেয়েছি। আবার পারিপার্শ্বিক অনেক ঘটনা আমার কাজের মূল অনুপ্রেরণা।তবে রেডিও অনুষ্ঠান উপস্থাপক হিসেবে কাজ করার সুযোগটা করে দিয়েছেন রেডিও ধ্বনির চিফ নিউজ কো-অর্ডিনেটর শ্রদ্ধেয় শরিফ মুজিব ভাই।
জাগো জবস : রেডিওতে আপনাকে আর কী কী করতে হয়?
জাহিদ হাসান : নিউজ এডিটিং, সংবাদ উপস্থাপনা, সাউন্ড এডিটিং, প্রোডিউসিং, প্রোগ্রাম উপস্থাপনা এবং অনুষ্ঠান পরিকল্পনার কাজও করতে হয়।
জাগো জবস : বর্তমানে ফ্যানদের কমিউনিকেশন কেমন উপভোগ করছেন?
জাহদি হাসান : আসলে আমি কাজ করতে পছন্দ করি। পরিচিতির পরিধি বেড়ে যাওয়ায় কাজের অনেক সুযোগ বাড়ছে। আর ভক্তদের সমালোচনা ও কাজের ভালো দিকগুলো তুলে ধরার মাধ্যমে নিজেকে নিয়মিত সংশোধন করার সুযোগ পাচ্ছি। কাছের মানুষগুলোর পরামর্শ আর ভক্তদের সাথে যোগাযোগটা কাজের ক্ষেত্রে সাহস ও প্রেরণা জোগায়।
জাগো জবস : আপনার পেশায় আয় ও সুযোগ-সুবিধা কেমন?
জাহিদ হাসান : আয়টা ভালোই। নিজে স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে পারি। আর মিডিয়ার কারণে অনেক সেক্টরে কাজ করার একটা সুযোগ তৈরি হয়। কারণ নিজেকে উপস্থাপন করা মিডিয়ার মাধ্যমে অনেক সহজ হওয়ায় সমাজে অনেক কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়। আমি মনে করি, মিডিয়াতে কাজ করার কারণে পিছিয়ে পড়া মানুষদের স্বার্থ নিয়ে অনেক কাজ করা যায়। মানুষের পাশে সহযোগিতার জন্য দাঁড়ানোর বড় একটি সুযোগ হচ্ছে মিডিয়া।
জাগো জবস : যারা রেডিওতে কাজ করতে চান, তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
জাহিদ হাসান : তথ্যনির্ভর মেধা থাকতে হবে। পরিশ্রম আর ধৈর্যে্যর কোন বিকল্প নেই। ভাষাজ্ঞান ও শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ থাকলে তারা রেডিওতে ভালো করতে পারবেন। আর মার্জিত ও রুচিশীল পরিকল্পনা থাকলে ভালো করা সময়ের ব্যাপারমাত্র।
জাগো জবস : এ পেশায় প্রশিক্ষণের ব্যাপারে আপনার মতামত এবং এ থেকে উত্তরণের উপায় কী?
জাহিদ হাসান : নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, স্বল্পমেয়াদী প্রস্তুতি দিয়ে প্রতিযোগিতায় দীর্ঘসময় টিকে থাকা যায় না। নিজের দুর্বল বিষয়গুলোকে উন্নত করতে না পারলে খুব ভালো করা যায় না। এখন যেনতেন ভাবে লোক নিয়ে স্টেশন চালু করাই প্রধান কাজ মনে করছেন অনেকে। দক্ষ ও যোগ্য লোকবল না থাকলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা যায় না। আমি মনে করি, দক্ষ ও সৃজনশীল লোকবল তৈরির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। আর এ সমস্যা উত্তরণের জন্য দরকার টেকসই পরিকল্পনা। আর নিজেকে তৈরি না করে মিডিয়াতে কাজ করতে আসা ঠিক নয়। তাতে কাজের ক্ষেত্রে নানারকম সমস্যায় পড়তে হয়।
জাগো জবস : সফলতা বলতে আপনি কী বোঝেন?
জাহিদ হাসান : সফলতা সঠিক কোনো মাপকাঠিতে নির্ণয় করা কঠিন ব্যাপার। তবে নিয়মিত কাজ করে যেতে পারাটাই ক্যারিয়ারে বড় ধরণের একটি সফলতা। পর্যায়ক্রমে ক্ষুদ্র অবস্থা থেকে বৃহত্তর পরিসরে নিজের কাজের ক্ষেত্র তৈরি করাকে সফলতা মনে করি। এক কথায় যদি বলি, ক্যারিয়ারে মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত অন্যের কাছে নিজের চাহিদা ধরে রাখার নামই সফলতা। তবে জীবনের উত্থান-পতনের বাঁকে বাঁকে সফলতা একটি আপেক্ষিক বিষয়।
জাগো জবস : তরুণদের উদ্দেশে আপনার কোন পরামর্শ-
জাহিদ হাসান : কাজকে ভালোবেসে যত্ন নিয়ে করতে হবে। সহকর্মীদের পরামর্শকে সম্মান দিতে হবে। পরিশ্রমী হতে হবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের সব বিষয়ে ধারণা রাখতে হবে। যখন যেখানে যে কাজ করার সুযোগ পাওয়া যাবে; নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে সেই কাজটি করতে হবে।
জাগো জবস : আপনার মূল্যবান সময় দেয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
জাহিদ হাসান : নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ারের সুযোগ করে দেয়ার জন্য জাগো জবস ও আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।
এসইউ/পিআর