ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাগো জবস

স্কুল থেকে বের করে দেওয়া রাফসানের বিসিএস জয়

তাসনিম আহমেদ তানিম | প্রকাশিত: ০৩:৩৬ পিএম, ১২ জানুয়ারি ২০২৪

সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ৪৩তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফল। এতে বিভিন্ন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন ২ হাজার ১৬৩ জন। ৪৩তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) শিক্ষার্থী রাফসান রুবেল। তিনি তার বিসিএস যাত্রার গল্প শুনিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জাগো নিউজের প্রতিনিধি তাসনিম আহমেদ তানিম—

জাগো নিউজ: আপনার শৈশবের গল্প দিয়ে শুরু করতে চাই—
রাফসান রুবেল: আমার জন্ম মিরপুর-১১ এর প্যারিস রোডে। ছয় ভাই এক বোনের মাঝে আমি তৃতীয়। শৈশবে খুবই ডানপিটে ছিলাম। আমার শৈশব কেটেছে তুরাগ নদীতে সাঁতার কেটে, বেড়িবাঁধ-বোটানিকাল গার্ডেনে ঘুরে ফিরে। পল্লবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২য় শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার মাধ্যমে শিক্ষাজীবন শুরু। স্কুলে পরীক্ষা ছাড়া যেতাম না বললেই চলে। ৩ ভাই এক ক্লাসে পড়তাম, স্কুল ফাঁকি দিয়ে ভাইয়েরা মিলে মিরপুর চষে বেরিয়েছি। শৈশবে স্কুলজীবনের থেকে স্কুলের বাইরের স্মৃতিই বেশি।

জাগো নিউজ: পড়াশোনায় কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল?
রাফসান রুবেল: সত্য বলতে স্কুলে দশম শ্রেণির আগ পর্যন্ত পড়াশোনায় কখনো সিরিয়াস ছিলাম না। দশম শ্রেণিতে পরিবারের প্রতি ভাইয়ার ত্যাগ আর সংগ্রাম দেখে সিরিয়াস হই। ক্লাসে পজিশন করা শুরু করি তখন। কলেজে প্রথমে সরকারি বিজ্ঞান কলেজে ভর্তি হলেও পরে আমার জমজ ভাইয়ের সাথে পড়বো বলে ট্রান্সফার নিয়ে স্কুলেরই কলেজ শাখায় চলে আসি। কলেজে কখনও প্রথম কখনও দ্বিতীয় হতাম। সুখের ব্যাপার হলো স্কুলে আমাদের ফার্স্ট বয় এবং আমি এখন একই ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত। স্কুলে ওর থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছি, বিসিএসে এক সাথে প্রিপারেশন নিয়েছি। এখন একসাথে একই চাকরি করবো।

তবে ২০০৫ সালে পরিবারে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয়। তখন ৪ ভাই পড়তাম স্কুলে। আর্থিক সমস্যার কারণে স্কুলের বেতন, পরীক্ষার ফি দিতে না পারায় স্কুল থেকে আমাদের বের করে দেওয়া হয়। ৩ মাস বাসায় থাকার পর আম্মা ঋণ করে একটি কম খরচের স্কুলে ভর্তি করেন, ভাইয়া শুরু করেন টিউশনি। শুরু হয় নতুন শিক্ষা-সংগ্রাম। যার কথা উল্লেখ না করলেই নয়, তিনি আমার আহছানিয়া মিশন কলেজের অধ্যক্ষ মো. মফিজুর রহমান স্যার। তিনি বিনা বেতনে আমাদের পড়তে দেওয়ায় কলেজ জীবন সহজ হয়। বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র হয়েও কখনও প্রাইভেট পড়ার মতো আর্থিক সংগতি ছিল না। তবু আল্লাহর রহমতে সাফল্যের সাথে প্রতিটি স্টেজ পার হয়েছি জিপিএ-৫সহ। আমিও এসএসসির পর টিউশনি শুরু করি। ৩ ভাইয়ের টিউশনির টাকা দিয়ে আমাদের ৯ জন সদস্যের থাকা, খাওয়া, পড়াশোনা চলতো।

আরও পড়ুন: হতাশ না হয়ে পরিশ্রম করে যেতে হবে: দিপক কুমার শীল 

জাগো নিউজ: কবে কীভাবে বিসিএসের ঝোঁক তৈরি হলো?
রাফসান রুবেল: মানুষ তার একজীবনে যতগুলো স্বপ্ন দেখে, তার সবগুলো তো আর পূরণ হয় না। তবে এই যে বিসিএস দিয়ে পুলিশ হবো এটি আমার স্বপ্ন নয়, আমার পিতাসম বড় ভাইয়ের স্বপ্ন। তিনি সেই ২০০৬ সাল থেকে আমাদের ৯ জনের পরিবারের সব দায়িত্ব পালন করে আসছেন। গ্রাজুয়েশনের পর ভাইয়া যখন বললেন, বিসিএস দিয়ে পুলিশ হও; তখন নিজকে বললাম পুলিশ আমাকে হতেই হবে। তবে আমার ইচ্ছা ছিল অনার্স শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশ যাবো। ২০১৯ সালে অনার্স শেষ হলে (২০১৭ সালে শেষ হওয়ার কথা) ডিসেম্বর ২০১৯ সালে একদিন ভাইয়া এসে বললেন, বিসিএস দাও। আমার এই এতদূর আসার পেছনে বাবা-মার মতো অবদান যার, তার একটা ইচ্ছা পূরণ করতেই হবে; এই ব্রত নিয়ে শুরু করলাম বিসিএস যাত্রা ২০২০ সালের জুন মাস থেকে।

জাগো নিউজ: ফলাফলে পুলিশ ক্যাডার দেখে অনুভূতি কেমন হয়েছিল?
রাফসান রুবেল: আল্লাহ চাইলে একটি ক্যাডার পাবো নিশ্চিত ছিলাম। কিন্ত এভাবে আমি যে আমার ভাইয়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পারবো বিশ্বাসই হচ্ছিল না। মুখস্থ ছিল রোল নাম্বার। ফলাফল চেক করে যখন বিশ্বাস হচ্ছিল না। প্রবেশপত্র খুঁজতে লাগলাম। মাথা ব্ল্যাংক হয়ে গিয়েছিল। ২-৩ মিনিট পর মিলিয়ে শুকরিয়া আদায় করে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়লাম। জায়নামাজে অনিচ্ছায় অঝরে কাঁদলাম। প্রথম কলটা দেই ভাইয়াকে। পুলিশ ক্যাডারে নাম আসছে বলার পর ওপাশে যে আনন্দ-কান্না মিশ্রিত স্বরে আলহামদুলিল্লাহ শুনলাম, নিজেকে তখন সফল মনে হলো। ধন্য মনে হলো।

জাগো নিউজ: লিখিত, প্রিলি এবং মৌখিকে কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন?
রাফসান রুবেল: প্রিলি হলো সবচেয়ে কঠিন। কারণ এখানে ভালো প্রস্তুতির সাথে ভাগ্যও সুপ্রসন্ন হতে হবে। তবে আমার মতে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো লিখিত। এখানে ‘don’t work hard, work smart’ নীতি জরুরি। এখানে ক্যাডার নির্ধারণ হয়ে যায়। কেননা এখন ভাইভায় গড় নাম্বার দেওয়া হয়। আর নিজের শক্ত বেসিকের সর্বোচ্চ উপযোগ নিশ্চিত করতে হয়। বিজ্ঞানের ছাত্র হওয়ায় প্রিলিতে ম্যাথ, বিজ্ঞান, মেন্টাল না পড়েই উতরে গেছি বেসিক আর টিউশন অভিজ্ঞতার কারণে। বাংলা গ্রামার, সাহিত্য, ইংরেজি সাহিত্যে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছিলাম। কম্পিউটার আর সাধারণ জ্ঞানে স্মার্ট প্রিপারেশন নিয়েছিলাম। বিগত প্রশ্ন অ্যানালাইসিস করে টপিক ভিত্তিক প্রস্তুতি নিয়েছি। তবে আমার মতে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো পরীক্ষা দেওয়া। প্রস্তুতি যা-ই হোক না কেন, নিয়মিত পরীক্ষা দেওয়া চাই।

আরও পড়ুন: বিসিএস জয়ই সবকিছু নয়: আবদুল আজিজ 

জাগো নিউজ: নতুনরা প্রস্তুতি কীভাবে শুরু করবেন?
রাফসান রুবেল: বিসিএস ক্যাডার হওয়ার প্রথম শর্ত হলো ধৈর্য। সেই সঙ্গে সিলেবাস জানা আর প্রশ্ন প্যাটার্ন বোঝা। তাই প্রস্তুতির প্রথম ধাপ হলো বিগত প্রশ্ন ব্যাখ্যাসহ পড়ে প্যাটার্ন বোঝা, সিলেবাস রপ্ত করা। প্রতি ৩-৪ বিসিএস পর পর প্রশ্নের ধরন পরিবর্তন হয়। তাই প্রশ্নের ধরন বুঝে, নিজের সক্ষমতাকে ঝালাই করতে হবে। নতুনরা যে ভুল করেন, তা হলো অনেক বেশি বই কিনে কোনোটাই ভালোমত শেষ না করা। ভালো সিরিজের এক সেট বই, নিয়মিত অনুশীলন আর আল্লাহর ওপর বিশ্বাসই যথেষ্ট।

জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
রাফসান রুবেল: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো, পুলিশের মতো এই মহান একই সাথে চ্যালেঞ্জিং পেশায় যেন সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব সহকারে পালন করে দেশ ও দশের সেবা করে যেতে পারি। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় যেহেতু আমার বেতন হবে, তাদের সেবা দানে যেন নিজের মধ্যে এতটুকু কার্পণ্য না আসে কখনও। দেশের প্রতি যে ঋণ তার আংশিক হলেও যেন শোধ করতে পারি। নিজেকে দেশের সেবায় নিয়োজিত করার মাধ্যমে।

এসইউ/জিকেএস

আরও পড়ুন