ইচ্ছেটা সম্পূর্ণই নিজের : রিশাদ হাসান
কাইয়ুম হাসান রিশাদ। ডাকনাম রিশাদ হাসান। তিনি সিটি এফএমে প্রোডিউসার ইনচার্জ এবং রেডিও জকি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সম্প্রতি তিনি পূর্ণাঙ্গ সম্প্রচারের অপেক্ষায় থাকা টেলিভিশন নিউজ টুয়েন্টিফোরে ব্রডকাস্টার জার্নালিস্ট হিসেবে যাত্রা শুরু করেছেন। এরআগে ম্যাজিক কিডস টেলিভিশনে ক্রাইম অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন রিপোর্টার ছিলেন।
রিশাদ হাসান পড়াশোনা করেছেন যোগাযোগ ও গণমাধ্যম শিক্ষা বিভাগে ইউওডা’য়। নেতৃত্বগুণ অর্জনে ছাত্রজীবনে করেছেন বিএনসিসি এবং ২০০৭ সালে জুনিয়র ডিভিশনে বেস্ট ক্যাডেট, বেস্ট কমান্ডার এবং বেস্ট বেয়নেট ফাইটার ছিলেন। সেই সঙ্গে একই বছর সর্বোচ্চ পদবী ক্যাডেট আন্ডার অফিসারও হন।
রিশাদ হাসানের রেডিও থেকে টিভিতে বিচরণ, বিশেষ করে ক্যারিয়ার হিসেবে আরজে তথা মিডিয়া জব তার দৃষ্টিতে কেমন; এসব বিষয় নিয়েই জাগো জবসের সঙ্গে আজকের আলাপ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন গোলাম রাব্বী।
জাগো জবস : আপনার পড়াশোনা নিয়ে যদি কিছু বলতেন-
রিশাদ হাসান : প্রথমেই বলতে হয় আমার স্কুলের কথা। আমি গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের ছাত্র ছিলাম। পরে সেই কলেজ থেকেই পাস করি। আর সর্বশেষ ইউওডা থেকে যোগাযোগ ও গণমাধ্যম শিক্ষা বিভাগে পড়ালেখা করেছি।
জাগো জবস : নিজের পড়াশোনার সঙ্গে আজকের পেশার যোগসূত্র স্থাপন করলেন কীভাবে?
রিশাদ হাসান : আসলে ইচ্ছেটা আগে থেকেই ছিল। ছোটবেলায় টেলিভিশনে যেই টিভিসিগুলো প্রচারিত হতো সেগুলো অনুকরণ করে বলতে খুব আনন্দ পেতাম। স্কুল জীবনে চশমা ব্যবহার করতাম বলে বন্ধুরা খেলায় নিতো না। তাই একদিন চৌধুরী জাফর উল্লাহ সারাফাত স্যারের কণ্ঠ নকল করে খেলায় ধারা বর্ণনা করে সবাইকে চমকে দেই। সেই থেকে অনেকেই আমাকে জাফর উল্লাহ বলে ডাকতে শুরু করে। তারপর থেকে-ই ইচ্ছে ছিল কণ্ঠ দিয়ে কিছু করা যায় কিনা। পরবর্তীতে ভাবলাম প্রতিদিন ৯টা-৫টা চাকরিটা হয়ত আমার জন্য নয়। দরকার ভিন্ন কিছু; সে থেকেই লেখাপড়াটা মিডিয়া বিষয় নিয়ে এবং আরজে হওয়াটাও পুরোটা-ই আমার অদম্য ইচ্ছার ফসল।
জাগো জবস : মিডিয়ার আগে অন্য কোন চাকরিতে জয়েন করেছিলেন?
রিশাদ হাসান : আমার চাকরি জীবন শুরু হয়েছিল ভিন্ন ভাবে। এসএসসি’র পর বাবা বন্ধুদের সাথে বেড়াতে যেতে দেননি। সেই অভিমান থেকে ভাবলাম নিজের খরচ নিজেই চালাবো। আর প্রথম চাকরিটাও ছিল একটু আলাদা ধরনের। একটা ফাস্ট ফুডের দোকানে ওয়েটারের চাকরি এবং ওটাই আমার জীবনের প্রথম চাকরি। আর যদি মিডিয়ায় প্রথম চাকরির কথা জিজ্ঞাসা করেন, তবে প্রথম চাকরি ছিলো উত্তরবঙ্গের একটি স্থানীয় পত্রিকায় প্রুফ রিডারের চাকরি।
জাগো জবস : কার অনুপ্রেরণায় রেডিও প্রোগ্রাম উপস্থাপক হয়ে গেলেন?
রিশাদ হাসান : আসলে অনুপ্রেরণাটা কার ছিল তা জানি না। তবে ইচ্ছেটা সম্পূর্ণই নিজের। মূলত নিজের ইচ্ছা থেকেই রেডিও-তে আসা।
জাগো জবস : উপস্থাপনা ছাড়া আর কী কী করতে হয়?
রিশাদ হাসান : যেহেতু আমি প্রোডাকশন ইনচার্জ তাই উপস্থাপনা ছাড়াও বিভিন্ন প্রোগ্রামের পরিকল্পনা, ডিজাইন করা, রেডিও বিজ্ঞাপন-প্রোমো মেকিং, নিউজ এডিটিং, নিউজ পড়াসহ আরও অনেক কাজ করতে হয়।
জাগো জবস : কীভাবে আরজে’র এর মতো একটা ভিন্ন ও আধুনিক টাইপের প্রফেশনে যুক্ত হলেন?
রিশাদ হাসান : ২০০৯ সালের দিকে এক ভয়েস কম্পিটিশনে সাড়ে ৩শ’ জনের মধ্যে প্রথম হই। তখন ভাবলাম আরজে পেশাটা হলে আমার জন্য দারুণ হবে। তারপর শুরু হলো পথচলা। ২০১১ সালে অন্য একটি বেসরকারি এফএম রেডিও-তে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল, তবে সেখান থেকে বয়স এবং পরিপক্কতার কারণে বাদ পড়ে যাই। এরপর সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম। এক সময় আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলাম। পরে এক বান্ধবীর মাধ্যমে সুযোগ সৃষ্টি হয়। সে সিটি এফএমের খবরটা আমাকে দেয়। আগের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এখানে সুযোগটা পেয়ে যাই।
জাগো জবস : এ বিষয়ে আপনার কি কোন প্রশিক্ষণ রয়েছে?
রিশাদ হাসান : ২০০৮ সাল থেকে শুরু করে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দেশের বেশ কিছু নমকরা আরজে’র অনুষ্ঠান শুনেছি, সবার ভালো দিকগুলো নিতে চেষ্টা করেছি। প্রতিদিন নিজে নিজে চর্চা করেছি প্রচুর, রেডিও শুনেছি, খবর শুনেছি, বই এবং পত্র-পত্রিকা পড়েছি। মূলত এটা নিজেই নিজের প্রশিক্ষণ নেয়ার মত ছিলো। এমনিতে তেমন কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিলো না।
জাগো জবস : বর্তমানে ফ্যানদের কমিউনিকেশন্স কেমন উপভোগ করছেন?
রিশাদ হাসান : আমি কখনও নিজেকে আরজে হিসেবে আলাদা করে দেখি না। সবসময় নিজেকে সাধারণ মানুষ হিসেবে ভেবেছি। আর ফ্যানদের ব্যাপারে বলতে গেলে সহজ করে বলতে হয়, তারা আমাকে শোনেন বলেই আমি বলতে পারি। তাদের প্রতি সবসময় কৃতজ্ঞ থাকবো। আমাকে তাদের মনে জায়গা দিয়েছেন এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কী হতে পারে?
জাগো জবস : এ পেশা আয় ও সুযোগ-সুবিধা কেমন?
রিশাদ হাসান : আসলে এই প্রফেশনে এসে যে কেউ চাইলেই ভালো করতে পারবেন এটা ভাবা ভুল। সবাই মেধাবী বা ভালো পারফর্মার হতে পারেন, কিন্তু এক সাথে দু’টো হতে পারাটা খুবই চ্যালেঞ্জিং। যদি তা হতে পারা যায় সেক্ষেত্রে আয়ের দিকটা অনেক এগিয়ে যাবে। যদিও আমাদের দেশে এই পেশা এখনো সর্বজন গৃহীত নয়। তারপরেও এ পেশাতেও আয়ের সুযোগ রয়েছে। আর সুযোগ-সুবিধার ভেতরে সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো এখান থেকে ভয়েস আর্টিস্ট, টেলিভিশন উপস্থাপক, অভিনেতাসহ বহুমুখী পেশায় যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
জাগো জবস : যারা আপনার মতো আরজে হতে চান- তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
রিশাদ হাসান : প্রথম পরামর্শ হচ্ছে, এ পেশায় সাফল্য আসাটা সময়ের ব্যাপার। একই সঙ্গে ধৈর্য্য ধরে প্রচুর জানার চেষ্টা করতে হবে, চর্চাটা অবশ্যই করতে হবে, পরবর্তী দিনের জন্য আপডেট হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। আরও একটা ব্যাপার উল্লেখ্য, বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতাটা এখানে অনেক বড় একটা জিনিস, এটাকে কাজে লাগাতে জানতে হবে।
জাগো জবস : পেশাগত ব্যাপারে কোর্স বা প্রশিক্ষণটাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
রিশাদ হাসান : আসলে বেশি রেডিও হওয়াটা ভালো দিক, এতে কর্মক্ষেত্র এবং সুযোগ বেশি সৃষ্টি হয়। খারাপ দিকটা হলো, ছোট কোর্স বা সামান্য শিখে ঐ জায়গাগুলোতে পারফর্ম করা। কারণ এটা আমাদের জন্যই ক্ষতিকর। অল্প জেনে বা ভাসা-ভাসা জেনে কাজটা করাটা হয়ত সহজ কিন্তু এ ধরনের পেশায় কাজ সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা না থাকলে বেশিদিন কাজ করা যাবে না। এছাড়াও আমার কাছে মনে হয়, নিজের থেকে বড় শেখার জায়গাটা কোথাও নেই। এসব কোর্স করে সত্যিকার অর্থে কোনো লাভ নেই। আপনি যদি নিজে নিজেকে পরিবর্তন না করেন, তাহলে মূলত কোর্স করে আরজে বা উপস্থাপক হওয়া যায় না।
জাগো জবস : সফলতা বলতে আপনি কী বোঝেন?
রিশাদ হাসান : আমার কাছে সফলতা বিষয়টা একটু আলাদা ধরনের। অনেকেই আত্মতৃপ্তি বা অনেক বড় পর্যায়ে যাওয়াকে সফলতা ভাবেন, কিন্তু দেখুন আত্মতৃপ্তির শেষ নেই। আমার কাছে মানুষের জন্য কাজ করে তাদের সন্তুষ্ট করতে পারাটাই সফলতা। দেশের জন্য জাতির জন্য নিজ অবস্থান থেকে সবচেয়ে ভালো কাজ করাটাই সফলতা।
জাগো জবস : আমাদের সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
রিশাদ হাসান : আপনাকেও ধন্যবাদ।
এসইউ/এবিএস