যেভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরির প্রস্তুতি নিয়েছেন শাকিল
মোহাম্মদ শাকিলুজ্জামান বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘সহকারী পরিচালক’ (২০২৩ ব্যাচ) পদে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিং বিষয়ে বিবিএ এবং এমবিএ করেছেন। জীবনে বড় কিছু হওয়ার স্বপ্ন থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরির পরীক্ষা দেন। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ‘সহকারী পরিচালক’ পদে উত্তীর্ণ হন।
তার চাকরি পাওয়ার গল্প ও নতুনদের পরামর্শ নিয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সেই গল্প শোনাচ্ছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—
স্বপ্ন এবার সত্যি হলো
রেজাল্ট দেওয়ার সময় ভিন্ন রকমের অনুভূতি হয়েছিল। স্বপ্ন এবার সত্যি হলো। অশ্রুস্নাত চোখে স্মৃতিচারণ হচ্ছিল বিগত সাড়ে ৩ বছরের পরিশ্রম এবং আত্মত্যাগের কথা। স্বপ্নের চাকরি অর্জন করতে অনেক কিছু ত্যাগ করতে হয়েছে। সাড়ে ৩ বছরে গ্রামের বাড়ি গিয়েছি মাত্র ৩-৪ বার। চাকরির পাওয়ার পর যখন গ্রামে যাই, অনেকে আমাকে অনেক দিন পর হঠাৎ দেখে চিনতে পারছিল না। কোনো প্রকার সামাজিক অনুষ্ঠান, বন্ধুদের আড্ডায় আমাকে দেখা যায়নি। নিজের মধ্যে এই দৃঢ় মানসিকতা তৈরি করেছিলাম, আমি আমার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। বাকিটা সৃষ্টিকর্তার ওপর ভরসা।
চাকরির পাশাপাশি প্রস্তুতি নিয়েছি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যায়ের বাণিজ্য অনুষদে পড়ার সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং তার কাজ সম্পর্কে জানতে পারি। গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারক হিসেবে দেশের ব্যাংক ও বাণিজ্য খাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে পেরে বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরির স্বপ্ন দেখেছি। এই স্বপ্নের পূর্ণাঙ্গ রূপ পায় যখন আমি একটি প্রাইভেট ব্যাংকের ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি অফিসার পদে চাকরিকালীন বাংলাদেশ ব্যাংক সম্পর্কে আরও বিশদভাবে জানতে পারি। চাকরির পাশাপাশি নিজেকে প্রস্তুত করতে থাকি বাংলাদেশ ব্যাংক সহকারী পরিচালক পদের পরীক্ষার জন্য। এখনো মনে পড়ে চাকরিকালীন এক নাগাড়ে সাত-আট মাস কোনো শুক্র-শনিবারে বিশ্রাম না নিয়ে লাইব্রেরিতে গিয়ে পড়াশোনা করেছি।
আরও পড়ুন: বাবার মৃত্যুতেও হাল ছাড়েননি নাসিম
ধারাবাহিক পড়াশোনা ছিল মূল শক্তি
আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অর্জন আমাকে এতদূর আসার জন্য অনুপ্রাণিত করেছে। ইয়ুথ ফেস্ট বিজনেস প্ল্যান কম্পিটিশনে ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপ, সিঙ্গাপুরে স্পাইকস এশিয়া ফেস্টিভ্যাল এবং যুক্তরাজ্যে ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাডি ভিজিট অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে ক্যারিয়ার নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখতে। সব সময় চেষ্টা করেছি পরিকল্পনা মাফিক পড়াশোনা করতে। ধারাবাহিকভাবে পড়াশোনা করা ছিল আমার মূল শক্তি। ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করে, সে মাফিক পড়াশোনা করার চেষ্টা করেছি। পরীক্ষার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে অধিক পড়াশোনার চাপ না নিয়ে নিজেকে নির্ভার রাখার চেষ্টা করেছি।
ব্যর্থ হয়েও ভেঙে পড়িনি
করোনা মহামারি আমাকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। মানসিক চাপ থেকে অসুস্থ ছিলাম অনেক দিন। আমি বরাবরের মতোই ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর ভক্ত। হতাশা এবং ব্যর্থতা কাটিয়ে কীভাবে আরও শক্তিশালী রূপে ফিরে আসা যায়, এই যেন আমার আদর্শেই ছিল। একটা সময়ে চাকরির পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জন করতে পারছিলাম না, নিজের দুর্বলতা কাটিয়ে পরে ঠিকই ভালো ফলাফল অর্জন করা সম্ভব করেছিলাম। কখনো ব্যর্থ হয়ে ভেঙে পড়িনি।
সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার
হ্যাঁ, সোশ্যাল মিডিয়ায় চাকরি সম্পর্কিত দিকনির্দেশনা এবং সাজেশন পেয়েছি। যা আমাকে চাকরির প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করেছে। আমি বিশ্বাস করি, সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের জন্য আশীর্বাদ। যদি আমরা এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারি।
আরও পড়ুন: পরিবার আমাকে সাহস জুগিয়েছে: মীম জাহান তন্বী
নতুনদের ব্যাংকে চাকরির প্রস্তুতি
সাধারণত প্রিলি পরীক্ষার পরে লিখিত পরীক্ষার জন্য মাত্র একমাস সময় পাওয়া যায়। এই স্বল্প সময়ে লিখিতের ভালো প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ট নয়। তাই প্রিলি ও লিখিতের প্রস্তুতি একসঙ্গে নিলে লক্ষ্য সহজতর হয়ে যায়। শুরুতেই বিগত প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণ করে ধারণা অর্জন করতে হবে প্রশ্নপত্রের ধরন সম্পর্কে। নিজের শক্তিমত্তা ও দুর্বলতা জানাও প্রয়োজন। সবমিলিয়ে প্রস্তুতির পরিকল্পনা সাজাতে হবে এবং ধারাবাহিক পড়াশোনা করার চেষ্টা করতে হবে। বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় হাতের লেখায় দক্ষ হতে হবে। যেহেতু লিখিত পরীক্ষায় অধিকাংশ মানবণ্টন হচ্ছে ফোকাস রাইটিং। এজন্য নিয়মিত বাংলা ও ইংরেজি পত্রিকা পড়া এবং হাতের লেখা অনুশীলন করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। গণিত বুঝে বুঝে অনুশীলন করতে হবে। না বুঝে একটি অঙ্ক চার-পাঁচ বার অনুশীলন করার চেয়ে ভালোভাবে বুঝে একবার অনুশীলন করা উত্তম। এতে ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। যাদের গণিত বেসিক দুর্বল, নবম-দশম শ্রেণির গণিত বই দিয়ে প্রস্তুতি শুরু করতে পারেন। ইংরেজি ব্যাকরণের ক্ষেত্রে নিয়ম উদাহরণসহ অনুশীলন করলে মনে থাকবে। প্রতিদিন অল্প অল্প করে ইংরেজি ভোকাব্যুলারির অর্থ ইংরেজিতেই প্রয়োগসহ শিখলে আত্মস্থ করা সহজ হয়। সাধারণ জ্ঞান অংশ পড়ার সময় সাম্প্রতিক, মুক্তিযুদ্ধ, ব্যাংক-অর্থ-বাণিজ্য, আন্তর্জাতিক সংগঠন অংশ বিশদ প্রস্তুতি নিতে হবে। যাতে একসঙ্গে প্রিলি, লিখিত এবং ভাইভার প্রস্তুতি হয়ে যায়। আইসিটি অংশ পড়ার সময়ে মাইক্রোসফট অফিস, কী বোর্ড ফাংশন কম্পিউটারে অনুশীলন করে নেবেন। তাহলে সহজেই আত্মস্থ হবে।
ব্যাংক ভাইভায় ভালো করতে
ভাইভার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বোর্ডে পজিটিভ আচরণ প্রদর্শন করা এবং আত্মবিশ্বাসী থাকা। সাধারণ ভাইভায় একটি প্রশ্ন প্রায় সবাইকে করে থাকেন, আপনার পঠিত বিষয়ের আলোকে ব্যাংকে কী অবদান রাখবেন? এ প্রশ্নের জন্য গোছানো উত্তর প্রস্তুত রাখা প্রয়োজন। এ ছাড়া নিজ সম্পর্কে, পঠিত বিষয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, জেলা, মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশ ব্যাংক, ব্যাংকিং টার্ম, অর্থনীতি-বাণিজ্য ও সাম্প্রতিক সংবাদ নখদর্পণে রাখতে হবে।
এসইউ/এমএস