বিসিএস লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি : শেষ পর্ব
দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে প্রথম শ্রেণির চাকরি সবার কাছেই বহু প্রত্যাশিত একটি ব্যাপার। আর তা যদি হয় বিসিএস, তাহলে তো কথাই নেই। সবার কাঙ্খিত সেই বিসিএস নামক সোনার হরিণের খোঁজ পেতে এ পরীক্ষার দ্বিতীয় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো লিখিত পরীক্ষা। তাই লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতিতে আপনাকে এগিয়ে রাখতে নিজেদের বিসিএস অভিজ্ঞতা ও বর্তমান পরীক্ষার ধরণ-ধারণ বিশ্লেষণ করে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন যুগ্মসচিব ও সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক- অর্থ ও হিসাব কর্মকর্তা দেওয়ান সাইদুল হাসান এবং বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা সামিয়া আলম। লিখেছেন গোলাম রাব্বী।
বাংলা
বাংলা বিষয়ে শেষ সময়ে সাধারণ জ্ঞান নির্ভর বিশেষ করে এক কথায় উত্তর দিতে হবে, এমন সব গ্রামার বা সাহিত্যের অংশে আরেকবার চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন। এজন্য আরও একবার দেখে নিতে পারেন বিগত ১০ম বিসিএস থেকে ৩৫তম বিসিএসে আসা প্রশ্নগুলো। আর রচনা এবং পত্র লেখা সাধারণত সাম্প্রতিক বিষয়গুলোতে হয়। তাই আপনার নোট করা সব সাম্প্রতিক ইস্যুগুলোর নানা তথ্য-উপাত্ত আরেকটু মাথার মধ্যে সাজিয়ে নিতে পারেন। আর মনে রাখবেন, রচনা লেখার ক্ষেত্রে সেটা ‘উইথ ক্লু’ বা ‘উইদাউট ক্লু’ যা-ই হোক না কেন, চেষ্টা রাখবেন নিজের মতো করে যতটা যুক্তি বা ডিফারেন্ট আইডিয়া, ইনফরমেটিভ ও গোছানো প্রেজেন্টশন দেয়া যায়।
ইংরেজি
ইংরেজিতে মোটামুটি অনেকেরই দুর্বলতা থাকে। তাদের জন্য অল্প সময় হলেও বেশি বেশি ইংরেজি দৈনিকের কলামগুলো পড়া জরুরি। একইসঙ্গে অনুবাদচর্চাটিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে অনুবাদের ক্ষেত্রে- রাফ করে লেখাটা উত্তম। কেননা, আপনি যদি রাফ করে না লিখেন তাতে সময় বাঁচলেও ওয়ার্ড সিলেকশন অতটা মজবুত বা যুতসই হবে না- এটাই স্বাভাবিক। আর রচনা লেখার ক্ষেত্রে অবশ্যই বাংলার মতো আপনার নোট করা সব সাম্প্রতিক ইস্যুগুলোর নানা তথ্য-উপাত্ত আরেকটু মাথার মধ্যে সাজিয়ে নিতে পারেন। আর মনে রাখবেন, রচনা যতটা ইনফরমেটিভ বা তথ্য-উপাত্ত নির্ভর করা যায়।
গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা
গণিতের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত চর্চা চালিয়ে যান। আর পরীক্ষার হলে যে নম্বরের সব ক’টি অঙ্ক আপনি পারবেন সেইগুলো আগে সম্পাদন করুন। আর অবশ্যই রাফ করার সুযোগটা গণিতে মিস না করাই ভালো।
অন্যদিকে এ বিষয়ের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো মানসিক দক্ষতা। এ বিষয়টি যেহেতু এমসিকিউ এবং যেহেতু এখানে ভুল উত্তরের জন্য নম্বর কাটা যায়, তাই এমন উত্তর দেয়া যাবে না যেটা ভুল হবে। সেজন্য মাথা ঠান্ডা রেখে, সামনে এগিয়ে যাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। কেননা গণিত পার্টের পরীক্ষায় অংশ নেয়ার পর অনেক ক্ষেত্রেই আর মাথা ঠান্ডা রাখাটা কষ্টের বটে। তথাপিও গণিত ও মানসিক দক্ষতা প্রমাণে আপনার ঠান্ডা মাথার আচরণটা বড় বেশি জরুরি।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
নম্বর তোলার ক্ষেত্রে দুই পার্টে হওয়া এ পরীক্ষাটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কেননা গণিতের মতোই এ বিষয়টিতেও যথাযথ উত্তর দিতে পারলে চলে আসে পুরো নম্বর। তাই খাতা ভরে লেখা নয় বরং যা চাওয়া হয়েছে ততটুকুই চিত্র ও যুক্তি সহকারে স্পষ্ট করে লিখুন।
আর প্রযুক্তি অংশে সচরাচর সাম্প্রতিক উদ্ভাবন নিয়ে অনেক ক্ষেত্রে প্রশ্ন আসে। তাই বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় বা মিডিয়ায় আসা বা প্রযুক্তির নিত্য-নতুন পরিবর্তন ও চমকপ্রদ বিষয়গুলোতে নজর দেয়ার পরামর্শ এ দু’জনের পক্ষ থেকেই।
বাংলাদেশ বিষয়াবলী
বাংলাদেশ বিষয়াবলির জন্যও সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত ঘটনা, ভূ-প্রকৃতি, জলবায়ু, ইতিহাস, অর্থনীতি, সরকারব্যবস্থা, আর্থসামাজিক অবস্থা-ব্যবস্থাসহ মৌলিক নীতি ও অধিকার বিষয়ে পরিপূর্ণ ধারণা নিয়ে ফেলুন চট করে। বাংলাদেশ বিষয়াবলি দ্বিতীয় পত্রের জন্য বাংলাদেশের সংবিধানের ওপর বিশেষভাবে নজর দেয়া উচিৎ বলে মনে করেন অভিজ্ঞরা।
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
যুগ্ম সচিব দেওয়ান সাইদুল হাসান বলেন, বিশ্বের নানা প্রান্তে বর্তমান সময়ে যেসব ঘটনা ঘটছে, সেদিকে নজর দেয়াসহ বেশি বেশি সংবাদপত্র, টেলিভিশন ও রেডিওতে পড়া, বলা ও শোনাটা জরুরি। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক সংস্থা, বিশ্বের নানা আইন-আদালত ও রাষ্ট্রের নতুন নতুন কর্মকাণ্ডে জ্ঞান থাকলে আপনিই পারবেন।
প্রফেশনাল ও বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি
এ বিষয়ে ভালো করতে হলে বিগত বছরগুলোর প্রশ্ন সংগ্রহ করে ধারণা নেয়াটা উত্তম। কেননা লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কয়েকজন বলেন, প্রফেশনাল ক্যাডারের ক্ষেত্রে আপনার অনার্স ও মাস্টার্সে পড়া বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ভিত্তিক টার্ম ও টপিকে নজর দিতে পারেন। তাতে বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান যেমন বাড়বে, তেমন বেশি নম্বরসহ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ারও সহায়ক হবে।
এসইউ/এমএস