ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাগো জবস

বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে ষষ্ঠ তন্ময়

সাজেদুর আবেদীন শান্ত | প্রকাশিত: ১১:৪৮ এএম, ১৯ আগস্ট ২০২৩

মো. তন্ময় ইসলাম ৪১তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে ষষ্ঠ হয়েছেন। ১৯৯৫ সালের ১৯ অক্টোবর দিনাজপুর সদরে জন্ম তার। পিতা মো. নজরুল ইসলাম ছিলেন চাকরিজীবী। তিন ভাই-বোনের মধ্যে তন্ময় সবার বড়। তিনি রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করেছেন।

তিনি বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির (বাউয়েট) প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে তিনি বিসিএস জয়, ক্যারিয়ার পরামর্শ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাজেদুর আবেদীন শান্ত—

জাগো নিউজ: আপনি বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে যষ্ঠ হয়েছেন, অনুভূতি কী?
মো. তন্ময় ইসলাম: অসাধারণ অনুভূতি। রেজাল্ট প্রকাশ হওয়ার পরেই আমি ও আমার স্ত্রী সার্চ অপশনে গিয়ে একসঙ্গে রেজিস্ট্রেশন নম্বরটি সার্চ দিই। ২৫২০টি পদের ক্যাডার তালিকার প্রথম লাইনেই নিজের রেজিস্ট্রেশন নম্বর খুঁজে পেয়ে অবিশ্বাস্য লাগছিল। আব্বু, আম্মু, শ্বশুর, শাশুড়িসহ সবার দোয়া নিই। আমার ২ মাসের ছেলের সঙ্গে রেজাল্টের মুহূর্তটি অসাধারণ ছিল।

jagonews24

জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রায় প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা কতটুকু ভূমিকা রেখেছে?
মো. তন্ময় ইসলাম: বিসিএস পরীক্ষা একজন পরীক্ষার্থীর সারাজীবনের অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার প্রতিফলন। আমার কাছে মনে হয়েছে, বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি স্কুলজীবন থেকেই শুরু হয়েছিল। আমি দিনাজপুর জিলা স্কুল থেকে ২০১১ সালে এসএসসি ও দিনাজপুর সরকারি কলেজ থেকে ২০১৩ সালে এইচএসসি পাস করি। ৮ম শ্রেণিতে সাধারণ বৃত্তি ও মাধ্যমিকে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাই। এরপর ২০১৩-২০১৪ সেশনে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হই। ভার্সিটি জীবনের শুরু থেকেই সিজিপিএর প্রতি সচেতন ছিলাম। তবে শুধু একাডেমিক কারিকুলামে নিজেকে আবদ্ধ রাখিনি। বিভিন্ন এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস ও ভলান্টিয়ার কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। যেমন শীতবস্ত্র বিতরণ, চিকিৎসার জন্য আর্থিক ব্যবস্থা, শিক্ষার সহায়তা, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা ইত্যাদি। লেখাপড়া ছাড়াও ভার্সিটির বিভিন্ন শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম, সেমিনার, ওয়ার্কশপ, কনফারেন্সে অংশ নিই। রুয়েটের অ্যাস্ট্রোনমি ও সায়েন্স সোসাইটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করি। বিভিন্ন স্কুল ক্যাম্প, স্কাই অবজারভেশন ক্যাম্প, বিজ্ঞান উৎসব আয়োজনে অংশ নিই। নবায়নযোগ্য শক্তির প্রতি আগ্রহ থেকে সোলার ইনভার্টার নিয়ে গবেষণা করি। আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে এ বিষয়ক পেপার পাবলিশ হয়। অবশেষে রুয়েট ইইই ডিপার্টমেন্ট থেকে সিজিপিএ ৩.৭৮ অর্জন করে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করি।

আরও পড়ুন: প্রথম বিসিএসেই কাস্টমস অ্যান্ড এক্সসাইজে প্রথম সাব্বির 

জাগো নিউজ: কার অনুপ্রেরণা সবচেয়ে বেশি ছিল?
মো. তন্ময় ইসলাম: আমার পরিবার, বিশেষ করে বাবা-মার স্বপ্ন ছিল যেন বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে চাকরি করি। আমার বাবা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় দিনাজপুরে চাকরি করতেন। আব্বুর চাকরির সুবাদে ছোটবেলা থেকেই আমার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যাওয়া হতো। সেখান থেকেই প্রশাসনে চাকরির ইচ্ছার সূত্রপাত ঘটে। আব্বু সব সময় চাইতেন যেন বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করে ম্যাজিস্ট্রেট হই। এভাবেই পরিবারের উৎসাহে আমি বিসিএসের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠি। এ দীর্ঘ যাত্রায় আমার স্ত্রী সব সময় অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।

জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখছিলেন কবে থেকে?
মো. তন্ময় ইসলাম: ছোটবেলায় আমার বন্ধুর বাবা তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্যারের কাজ সরাসরি দেখেছি। তিনি আমাদের একটি বৃদ্ধাশ্রম ও এতিমখানা পরিদর্শনে নিয়ে যান। এভাবে বিভিন্নভাবে সরাসরি মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করার সুযোগ আমাকে আকৃষ্ট করে। বড় হয়ে যখন জানতে পারি বিসিএসে কাজের বৈচিত্র্য, সরাসরি দেশের মানুষের সেবা করার সুযোগ, প্রান্তিক পর্যায়ে সরকারি সেবাগুলো মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া যায়; তখন বিসিএসের প্রতি আরও আগ্রহী হয়ে উঠি। তাছাড়া সিভিল সার্ভিসে থেকে গবেষণা ও উচ্চশিক্ষার সুযোগ আমাকে অনুপ্রাণিত করে।

জাগো নিউজ: বিসিএস জয়ের গল্প শুনতে চাই—
মো. তন্ময় ইসলাম: আমি রুয়েট থেকে গ্র্যাজুয়েশনের পর বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজিতে (বাউয়েট) প্রভাষক হিসেবে যোগদান করি। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা আমার জীবনের সোনালি একটি সময়। এ সময়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অনেক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা পেয়েছি। কিন্তু আমার ও পরিবারের স্বপ্ন ছিল বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে চাকরি করি। তাই বিসিএসের প্রস্তুতি শুরু করি। নতুন চাকরিতে যোগদানের কিছু সময় পরই ৪০তম বিসিএসে অংশ নিই। নতুন চাকরি ও সংসারের মাঝে সময় বের করে বিসিএসের প্রস্তুতি নিতে হতো। সময় স্বল্পতার জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি সম্পন্ন না হওয়ায় কিছু বিষয়ে দুর্বলতা উপলব্ধি করি। তবে ভাইভায় এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস, একাডেমিক রেজাল্ট, উপস্থাপনা ও আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলন হওয়ায় বোর্ড অনেক সন্তুষ্ট ছিল বলে মনে হয়েছে। ৪০তম বিসিএসে বিসিএস (তথ্য) ক্যাডারে সহকারী বেতার প্রকৌশলী পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হই। যেহেতু আমার বিসিএস জার্নি শুরু করেছিলাম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের স্বপ্ন নিয়ে। তাই ৪১তম বিসিএসে পূর্ণ প্রস্তুতি নিতে থাকি। বিসিএসের প্রস্তুতিতেই বেশ কিছু সরকারি চাকরি ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের লিখিত পরীক্ষায় টিকে যাই। বিডিবিএলে সিনিয়র অফিসার হিসেবে নিয়োগপত্র পাই। যদিও পরে জয়েন করা হয়নি। ৪১তম বিসিএস পরীক্ষা বেশ ভালো দিই। অবশেষে ৪১তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফল বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে ষষ্ঠ স্থান অর্জন করে সুপারিশপ্রাপ্ত হই। বিসিএস পরিশ্রমের পাশাপাশি ধৈর্যের পরীক্ষা। তাই এ দীর্ঘ পরীক্ষায় সফল হওয়ার জন্য পরিবারের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে আমি ভাগ্যবান আমার প্রতি পরিবারের অবিচল আস্থার জন্য।

jagonews24

আরও পড়ুন: পরিবার আমাকে সাহস জুগিয়েছে: মীম জাহান তন্বী 

জাগো নিউজ: কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন?
মো. তন্ময় ইসলাম: বিসিএস প্রস্তুতির শুরুতে সিলেবাস ও প্রশ্নের প্যাটার্ন, নম্বর বণ্টন ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করেছি। সিলেবাস ধরে ধরে প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান অর্জন করি। টেবিলে বিভিন্ন প্রকাশনীর কয়েক সেট বই রাখতাম। প্রতিটি বিষয়ের নোট করে করে পড়তাম। সেই সঙ্গে প্রতিদিন নিয়মিত রিভিশন দিতাম। পত্রিকার সম্পাদকীয়, অর্থনৈতিক সমীক্ষা, সংবিধান, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বইয়ের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি। ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন বইপড়া, ইংরেজি ও গণিতে দক্ষতা বৃদ্ধি পরে বিসিএসে কাজে লেগেছে। ৪১তম বিসিএসের সময় নিজের দুর্বলতাগুলো কাটানোর জন্য বাংলা সাহিত্য, বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে থাকি। অনুবাদ, ভোকাব্যুলারি, বিজ্ঞান, ইংরেজি প্রচুর অনুশীলন করি। পর্যাপ্ত তথ্য, চিত্র, ছক, মানচিত্র, উক্তি লেখার মান বৃদ্ধি করে। আমার মনে হয় বিসিএস লিখিত পরীক্ষাই ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

জাগো নিউজ: ভাইভা সম্পর্কে যদি বলতেন?
মো. তন্ময় ইসলাম: ৪১তম বিসিএস ভাইভা আমার জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। কারণ আমার বর্তমান চাকরির বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে থেকে ভাইভায় অংশগ্রহণ করি। যে সপ্তাহে আমার ভাইভা ছিল; সে সপ্তাহে আমার ছেলেও জন্মলাভ করে। তবে ভাইভা ভালো দিই। আমি বোথ ক্যাডারে ভাইভায় অংশ নিই। ভাইভার প্রায় পুরো অংশই ছিল ইংরেজিতে। যেখানে আমার বর্তমান পেশা, স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র, জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সমসাময়িক তথ্য, জলবায়ু পরিবর্তন, নগরায়ন, বিগ ডেটা প্রভৃতি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। পুরো সময় খুব স্বতঃস্ফূর্ত ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ইংরেজিতে উত্তর দিই। ভাইভা বোর্ড অল্প সময় রাখলেও ভাইভা দিয়ে সন্তুষ্ট ছিলাম।

জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
মো. তন্ময় ইসলাম: সরকারি সেবাগুলো যথাযথভাবে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া। দেশের স্বার্থে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় আত্মনিয়োগ করে মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য কাজ করা। আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গঠনে নিজের শ্রম ও মেধাকে কাজে লাগানো।

এসইউ/জিকেএস

আরও পড়ুন