বিসিএস ক্যাডার
কাস্টমস অ্যান্ড এক্সাসাইজে ১২তম মাহফুজ
মাহফুজুর রহমান ৪১তম বিসিএসে কাস্টমস অ্যান্ড এক্সসাইজে ১২তম হয়েছেন। রাজশাহীর পবা উপজেলায় তার জন্ম। বাবা গোলাম রসুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, মা রহিমা বেগম গৃহিণী। দুই ভাইয়ের মধ্যে মাহফুজুর রহমান বড়। তিনি রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইপিই বিভাগ থেকে বিএসসি ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যাডভান্স ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট থেকে মাস্টার্স করেছেন।
বর্তমানে তিনি রূপালী ব্যাংকের ‘সিনিয়র অফিসার’ হিসেবে কর্মরত। সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে তিনি বিসিএস জয়, ক্যারিয়ার পরামর্শ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাজেদুর আবেদীন শান্ত—
জাগো নিউজ: বিসিএসে কাস্টমস অ্যান্ড এক্সসাইজে ১২তম হওয়ার অনুভূতি কী?
মাহফুজুর রহমান: অনুভূতি অবশ্যই অসাধারণ। স্বপ্নপূরণের অনুভূতি আসলে ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। রেজাল্ট শিটে রোল দেখার পরও বিশ্বাস হচ্ছিল না, বার বার চেক করছিলাম। সেই রাতে আমার ঘুম হয়নি। মনে হচ্ছিল স্বপ্ন দেখছি, একটু পর ভেঙে যাবে। তবে সবচেয়ে স্পেশ্যাল ছিল বাবা-মায়ের প্রতিক্রিয়া। খবর শুনেই মা আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন, তার চোখে ছিল আনন্দ অশ্রু। আসলে সন্তান হিসেবে মায়ের এত বড় খুশির কারণ হতে পারাই আমার সবচেয়ে বড় সার্থকতা। জীবনে এমন কিছু সময় আসে, যা স্মৃতিতে অমলিন হয়ে থাকে। এটি এমনই সময় ছিল।
আরও পড়ুন: আব্বা খুশিতে কান্না করে দিয়েছেন: গালিব
জাগো নিউজ: পড়াশোনায় কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল?
মাহফুজুর রহমান: অবশ্যই। আসলে প্রতিবন্ধকতাহীন কোনো অর্জনই কল্পনাতীত। ৪১তম বিসিএসের প্রস্তুতি যখন শুরু করি; তখন মাস্টার্স করছিলাম। লিখিত প্রস্তুতির সময় রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ শুরু করি। তখন রিসার্চের কাজের পাশাপাশি বিসিএস পড়তাম। এর সঙ্গে মাস্টার্সের ক্লাস পরীক্ষা তো ছিলই। এছাড়া এ সময় বেকারত্বও একটা বড় বাধা ছিল। যা কোনো কোনো সময় চরম মানসিক অশান্তির কারণ হতো। তবে প্রতিবন্ধকতাগুলোও এ জার্নির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এগুলো আমাকে মানসিকভাবে অনেক শক্ত করেছে।
জাগো নিউজ: কার অনুপ্রেরণা সবচেয়ে বেশি ছিল?
মাহফুজুর রহমান: আসলে পরিবার ছিল বিসিএসে আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা ও শক্তির জায়গা। ৪১তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি থেকে ফলাফল প্রকাশের সময় ছিল প্রায় ৪ বছর। দীর্ঘ এ সময়ে আমার পরিবার সামাজিক নানা চাপ ও প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে। মানুষের কথায় তারা কষ্ট পেলেও আমাকে বুঝতে দিতেন না। পুরো সময়টাতে এক মুহূর্তের জন্যও আমার ওপর বিশ্বাস হারাননি। কখনো হতাশ হলে বাবা, মা অথবা আমার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বললে তাদের বিশ্বাস দেখে শক্তি পেতাম। নিজেকে কখনো একা মনে হতো না। তাদের সমর্থন আমাকে সব সময়ই এগিয়ে দিতো।
জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখছিলেন কবে থেকে?
মাহফুজুর রহমান: সত্যি বলতে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলাম; তখন ভাবিনি যে বিসিএসে আসব। এমনকি যারা তখন বিসিএসের জন্য পড়তেন; তাদের নিয়ে মজা করতাম। তখন ইচ্ছা ছিল ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে কোনো মাল্টিন্যাশনালে জব করব। রুয়েট থেকে বের হওয়ার পর বুয়েটে মাস্টার্সে ভর্তি হই। তখন সিনিয়রদের কাছ থেকে প্রাইভেট সেক্টরে তাদের জব অভিজ্ঞতা শুনতাম। তারা সবাই পরামর্শ দিতেন যেন বিসিএসের জন্য পড়া শুরু করি। আমার বাবারও খুব ইচ্ছা ছিল যেন আমি বিসিএস দিই। সব মিলিয়ে হঠাৎ ২০২০ সালের জানুয়ারিতে সিদ্ধান্ত নিই যে বিসিএস দেব। শুরু হলো আমার বিসিএস স্বপ্নের যাত্রা। পরে ২০২০ সালের মার্চে কোভিডের লকডাউনের মধ্যে শুরু করি সেই স্বপ্ন ছোঁয়ার প্রস্তুতি।
আরও পড়ুন: বিসিএস ভাইভা নিয়ে ভয়েই ছিলাম: হারুনুর রশিদ
জাগো নিউজ: বিসিএস জয়ের গল্প শুনতে চাই—
মাহফুজুর রহমান: ৪১তম বিসিএস আমার প্রথম বিসিএস। মাত্র দুদিন বাকি আছে, এমন সময় ফরম পূরণ করি। তবে নানা চাপে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল না। এরপর সাপেবর হয়ে আসে কোভিড। তখন লকডাউনের জন্য অনেক সময় হাতে পাই। কিন্তু শুরুটা অনেক কঠিন ছিল। লক্ষ্য স্থির করে প্রতিদিন সমান মোটিভেশন নিয়ে পড়তে বসা ছিল বিশাল চ্যালেঞ্জ। ধীরে ধীরে সব কিছু গুছিয়ে পড়া শুরু করি। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে মোটামুটি প্রস্তুতি দাঁড় করাই। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ায় আত্মবিশ্বাস বাড়ে। লিখিত পরীক্ষার সময় কম থাকলেও পরিকল্পনা মাফিক পড়াশোনার চেষ্টা করতাম। তথ্য বা ছকের ওপর গুরুত্ব না দিয়ে লেখার কোয়ালিটি ও কনটেন্টের ওপর জোর দিতাম। এরপর চলে এলো ভাইভা। ভাইভার জন্য একাডেমিক পড়াশোনার চেয়ে গুরুত্ব দিয়েছিলাম কমিউনিকেশন ও ভাষাগত দক্ষতার ওপর, যা অনেক কাজে দিয়েছিল। ভাইভায় করা প্রশ্নের মধ্যে একটি বাদে বাকি সব প্রশ্নই ছিল বিশ্লেষণধর্মী।
জাগো নিউজ: কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন?
মাহফুজুর রহমান: বিসিএসে ভালো করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সঠিক স্ট্র্যাটেজি আর ভালো বই। কোনো নির্দিষ্ট প্রকাশনী নয়, যে বিষয়ের জন্য যে বইটা ভালো সেটা কিনতাম। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য পড়ার পাশাপাশি প্রচুর পরীক্ষা দিতাম। গণিত অনুশীলনও পরীক্ষার মতো সময় ধরে দিতাম। পরীক্ষাগুলো বিশ্লেষণ করে যে টপিক ভুল হচ্ছে; সেগুলো পড়ে নিতাম। লিখিত প্রস্তুতিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলাম ইংরেজিতে। সামগ্রিকভাবেই লেখার দক্ষতা বাড়ানোর জন্য অনেক কাজ করতাম। ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাকগ্রাউন্ডের হওয়ায় স্ট্রং জোন বিজ্ঞান, অঙ্কের মতো বিষয়গুলো ভালো করে সবার আগে শেষ করেছিলাম। তবে লিখিত পরীক্ষার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো টাইম ম্যানেজমেন্ট, যা নিয়ে কাজ করা আবশ্যক।
জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
মাহফুজুর রহমান: দিনশেষে এটি চাকরি। আমার জীবনের আরেকটি অধ্যায়। কাস্টমস ক্যাডাররা দেশের অর্থনীতিতে সরাসরি জড়িত। আমার লক্ষ্য থাকবে মেধার সর্বোচ্চ ব্যবহার করে দেশের সেবা করা ও দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখা। মানুষের জীবন অনেক ছোট, এর পরিণতি মৃত্যু। তাই আমার পরিকল্পনা হলো, আমার কাজের মাধ্যমে মানুষের সেবা করে দোয়া ও ভালোবাসা অর্জন। যা আমার জন্য সবচেয়ে দামি।
এসইউ/জিকেএস