এগিয়ে যেতে দরকার সাহস: অমি
অ্যাশ অমি মাগুরার ছেলে। কাজ করছেন নিজের বিজ্ঞাপনী সংস্থা মোটিফ নিয়ে। স্বপ্নযাত্রার এই পথে সাহস দেখিয়েছেন দেশে এবং দেশের বাইরের অনেক ব্র্যান্ডকে ডিজিটাল মাধ্যমে সফলতা এনে দেওয়ার ক্ষেত্রে। তরুণ এ উদ্যোক্তা তার সাফল্যের গল্প শুনিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বেনজির আবরার—
জাগো নিউজ: প্রথমেই আপনার সম্পর্কে বলুন—
অ্যাশ অমি: আমি ব্র্যান্ড ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করছি। মূলত আমার বিজ্ঞাপনী সংস্থা মোটিফের মাধ্যমে আমেরিকা এবং ইউরোপের লাক্সারি লাইফস্টাইল, বিউটি এবং ফ্যাশন ব্র্যান্ডকে সাহায্য করে থাকি। এগুলো ছাড়া আমি নিয়মিত এন্টারপ্রেনার্স এবং ফোর্বসে লিখি। তাছাড়া আমি একজন ফোর্বস বিজনেস কাউন্সিল মেম্বার।
আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা বাংলাদেশের খুলনায়। তারপর আমি দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে আমার পড়াশোনা শেষ করেছি। যদিও ব্র্যান্ডিং বা মার্কেটিংয়ের ওপর আমার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি নেই কিন্তু আমার কাজ এবং কর্মজীবনের মাধ্যমে সবকিছু শিখেছি। এখনো জীবনের অভিজ্ঞতা এবং অন্য সহকর্মী পেশাদার বন্ধুদের মাধ্যমে শিখছি, প্রতিনিয়ত শিখছি। আমি একটি উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসেছি। যেখানে আমার বাবা একজন ব্যবসায়ী এবং মা একজন সরকারি কর্মচারী। তাই ছোটবেলা থেকেই আমি ব্যবসার সঙ্গে পরিচিত। যখন আপনি আমার এবং আমাদের ক্লায়েন্টদের ব্যবসার সঙ্গে তুলনা করবেন; তখন জিনিসগুলো গতানুগতিক ব্যবসার থেকে আলাদা।
আমি খুব ভাগ্যবান যে, আমার মা এবং বাবা প্রথম থেকেই খুব সমর্থন করেছিলেন। তারা না থাকলে আমি এত দূর আসতাম না। আমার বয়স যখন ১৯-২০; আমি তখন আমার এজেন্সি শুরু করি।
আরও পড়ুন: পড়াশোনার পাশাপাশি আইটি প্রতিষ্ঠান গড়েছেন আল হাসান মিলাদ
জাগো নিউজ: কবে আপনার ক্যারিয়ার শুরু করলেন?
অ্যাশ অমি: এটি কিছুটা মজার গল্প। ২০১৫ সালের কথা। যখন আমার এজেন্সি শুরু করি; তখন এজেন্সি আসলে কী? তা সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না। একাধিক ব্র্যান্ড তৈরি করতে চেয়েছিলাম। তাই একমাত্র উপায় ছিল একটি কোম্পানি তৈরি করা। অন্য উদ্যোক্তাদের সঙ্গে তাদের জার্নিতে সাহায্য করা এবং পরামর্শ দেওয়া। এভাবেই রাজশাহীর ছোট্ট একটা চায়ের টঙ্গে বসে আমার উদ্যোক্তা জীবনের যাত্রা শুরু হলো।
জাগো নিউজ: আপনার এজেন্সি এত দ্রুত গ্রহণযোগ্যতা পেলো কীভাবে?
অ্যাশ অমি: যেদিন থেকে মোটিফের জন্ম; সেদিন থেকেই লক্ষ্য ছিল সেরা সাপোর্ট দেওয়ার। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৭৫+ ব্র্যান্ডের সাথে কাজ করার পর, বাজারে ২ বছরে আমরা ভোক্তাদের সমস্যা এবং রুট কজ খোঁজা শুরু করি, বৈশ্বিক গ্রাহকদের কাছে মোটিফ উল্লেখযোগ্যভাবে বাজারে একটি পার্থক্য তৈরি করে। আমরা ফুল ফানেল মার্কেটিং স্ট্রাটেজি, ইমপ্লিমেন্টেশন থেকে শুরু করে কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্স বিল্ড এবং অপ্টিমাইজ করে থাকি একটি ব্র্যান্ডের। কিন্তু এটি অনেক কিছুর ওপরে নির্ভর করে। আমরা টিভি অ্যাডস থেকে শুরু করে হালের ডিজিটাল মার্কেটিং, ওয়েব ডিজাইন থেকে শুরু করে প্রোগ্রামাটিক বিলবোর্ড অ্যাডস করি কিন্তু সেটি ব্র্যান্ডের নির্দিষ্ট সিচুয়েশন এবং গোলের ওপর নির্ভর করে হয়ে থাকে।
এ কারণেই ফোর্বস, বিজনেস ইনসাইডার, ইয়াহু ফিন্যান্স, ইউএসএ টুডে, এন্টারপ্রেনার্স, মার্কেট ইনসাইডার্সের মতো একাধিক ব্যবসায়িক ম্যাগাজিন এবং মেইনস্ট্রিম টিভি মিডিয়ায় স্বীকৃতি পেয়েছে।
প্রথম থেকেই আমি পার্সোনালি প্রত্যেকটা ব্র্যান্ডের স্টেক হোল্ডারদের সাথে কথা বলে তাদের বর্তমান সমস্যাগুলো জানি এবং একটি প্ল্যান করি। সে অনুযায়ী কাজ করি। আমাদের একজন ক্লায়েন্টের মতে, মোটিফ ব্র্যান্ডের সাফল্যের জন্য কাজ করে, যদি আপনার ব্র্যান্ড সফল হয় তাই মোটিফও সফল। প্রধানত কাজই আমাদের স্বীকৃতি এবং পরিচিতি এনেছে।
আরও পড়ুন: গ্রোথ মার্কেটিংয়ে অপার সম্ভাবনা আছে: মেহজাবিন বাঁধন
জাগো নিউজ: তরুণ যারা ব্র্যান্ড নিয়ে কাজ করছেন, তাদের জন্য পরামর্শ—
অ্যাশ অমি: আমি মনে করি, বাংলাদেশে এখন অনেক সুযোগ রয়েছে। যেহেতু ভোক্তাদের আচরণগত অনেক পরিবর্তন এসেছে। তাই ডাইরেক্ট টু কনজ্যুমার ব্র্যান্ড শুরু করার এটাই সঠিক সময়। এখানে আমি মনে করি, একটু বলে রাখা ভালো যে, আসলে ডিরেক্ট টু কনজ্যুমার (ডিটিসি) ব্র্যান্ড বলতে আমরা কী বুঝি, এটি একটি নতুন শব্দ আমাদের জন্য।
ডিরেক্ট টু কনজ্যুমার (ডিটিসি) হলো যখন একটি ব্র্যান্ড বা প্রস্তুতকারক তার নিজস্ব পণ্য তার গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করে কোনো প্রকার তৃতীয় পক্ষের খুচরা বিক্রেতা বা পাইকারি বিক্রেতাদের সাহায্য ছাড়া। ডিটিসি ব্র্যান্ডগুলো তাদের নিজস্ব পণ্যের স্টক স্তরগুলো পরিচালনা করে এবং ভোক্তাদের সাথে ডিপলি এনগেজ হয়।
আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে এ মডেলের ব্র্যান্ডগুলো তুলনামূলক অনেক ভালো করছে। আমি মনে করি, সঠিক পরিকল্পনা এবং দিকনির্দেশনা পেলে আমাদের প্যাশনেট তরুণ উদ্যোক্তারাও অনেক ভালো কিছু কনজ্যুমার ফোক্যাস্ড ব্র্যান্ড তৈরি করতে পারবেন।
আরও পড়ুন: কর্মস্থলে আচরণ কেমন হওয়া উচিত
একজন ব্র্যান্ড বিল্ডার হিসেবে আমার পরামর্শ হলো সব সময় কনজ্যুমার এবং এন্ড ইউজারের পালস্ বোঝার চেষ্টা করতে হবে। সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে। ব্র্যান্ডিং, মার্কেটিং, কমিউনিকেশন অ্যান্ড ইউজারের প্রবলেম এবং সলিউশন নিয়ে কমিউনিকেট করতে হবে। এভাবেই একটি সফল ডিরেক্ট টু কনজ্যুমার (ডিটিসি) ব্র্যান্ড গড়ে উঠবে।
জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
অ্যাশ অমি: আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো—একটি ইনকিউবেটর কোম্পানি দাঁড় করাচ্ছি। যেখানে আমরা মাল্টিপল ডিটিসি ব্র্যান্ড বানাবো এবং সেগুলোকেই গ্রো এবং স্কেল করবো। পাশাপাশি মোটিফকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে কাজ করে যাবো। আমার এন্ডগোল হলো একটি লিগেসি এজেন্সি বানানো, যেটা শুধু লাক্সারি লাইফস্টাইল, ফ্যাশন এবং বিউটি ব্র্যান্ডসগুলোকে সাহায্য করবে।
এসইউ/জেআইএম