প্রকাশনা শিল্প এখন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ : নেসার উদ্দীন আয়ূব
নেসার উদ্দীন আয়ূব প্রকাশনা শিল্পের একজন পরিচিত নাম। তিনি স্কলারস পাবলিকেশন্স লিমিটেড ও মাতৃভাষা প্রকাশের স্বত্ত্বাধিকারী। পুস্তক ব্যবসায়ীদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি’র দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত ডাইরেক্টর।
তিনি ১৯৮৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসহ স্নাতকোত্তর পাস করেন। বর্তমানে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচ.ডি গবেষণা করছেন। ছাত্রজীবনে পাঁচ বছর সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সেইসঙ্গে সংবাদপত্রের সাহিত্যপাতায় লিখেছেন গল্প-কবিতা। বর্তমানে প্রকাশনা ব্যবসার পাশাপাশি বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারের সংবাদ উপস্থাপক হিসেবেও কাজ করছেন।
পেশা হিসেবে প্রকাশনা শিল্পের আদ্যোপান্ত নিয়ে জাগো জবসের পক্ষ থেকে তার সঙ্গে কথা বলেছেন বিভাগীয় সম্পাদক সালাহ উদ্দিন মাহমুদ।
জাগো জবস: প্রকাশনা শিল্পে আপনার আগমন কীভাবে?
নেসার উদ্দীন আয়ূব: ছাত্রজীবনের শুরু থেকেই আমার ক্লাসের বইয়ের বাইরে পড়াশোনা ও লেখালেখির প্রতি আগ্রহ ছিলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স ২য় বর্ষে পড়ার সময় থেকেই বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সহায়ক পাঠ্য-পুস্তক লেখার সাথে যুক্ত হই। একপর্যায়ে একটি বিখ্যাত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ১০-১২টি বই লিখে ফেলি। এই লেখালেখির ফলে একসময় প্রকাশনার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। এই আগ্রহ এতো তীব্র ছিলো যে, ১৯৯৭ সালে ছাত্রাবস্থায় অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আরো ২৫ জন বন্ধু নিয়ে সমহারে চাঁদা তুলে একটি স্টলের আয়োজন করি। স্টলের নাম ছিলো ‘আবার আসিবো ফিরে’। এরপর ১৯৯৯ সালের জানুয়ারি মাসে আমি প্রথম প্রকাশনা ব্যবসা শুরু করি। এখন আমি প্রকাশনা শিল্পে দেশেতো বটেই আন্তর্জাতিক পর্যায়েও অবদান রাখার লক্ষ্য নিয়ে অগ্রসর হচ্ছি। আল্লাহ সহায় হলে এ সেক্টরে বড় কিছু করতে চাই।
জাগো জবস: প্রকাশনা শিল্পে কর্মসংস্থানের সুযোগ কেমন?
নেসার উদ্দীন আয়ূব: গত দেড় যুগে বাংলাদেশে প্রকাশনা শিল্পের ব্যাপক বিকাশ ঘটেছে। দেশে কয়েক হাজার প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান এবং প্রায় বিশ হাজার বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান বা লাইব্রেরি রয়েছে। লক্ষ লক্ষ লোকের এখানে কর্মসংস্থান হয়েছে। এবং দিন দিন তা গাণিতিক হারে বাড়ছে। তরুণদের একটা অংশ পুস্তক সেক্টরের মার্কেটিংয়ে ভালো কারিয়ার গড়ছে। কাজেই কর্মসংস্থানের দিক থেকে প্রকাশনা শিল্প এখন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
জাগো জবস: এ পেশায় নবীনদের কেমন প্রাধান্য দেয়া হয়?
নেসার উদ্দীন আয়ূব: প্রকাশনা সেক্টর এখন কার্পোরেট দুনিয়ার অংশ। এখানে একটা প্রতিষ্ঠান এখন অন্যটির সাথে ব্যাপক প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। তাই দক্ষ জনবল ছাড়া একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান টিকে থাকতে পারবে না। জনবল নিয়োগের সময় প্রতিষ্ঠানগুলো এটা লক্ষ্য রাখবে সেটাই স্বাভাবিক।
নবীনদের গুরুত্ব তো অবশ্যই দেয়া হয়। কিন্তু তার মেধা, যোগ্যতা ও দক্ষতার মানদণ্ডই মূল বিবেচ্য বিষয়। যারা প্রকাশনা শিল্পে মার্কেটিং, আরএনডি, মুদ্রণ বা অন্যান্য ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গড়তে চায়। তাদের ছাত্রজীবন থেকে পূর্বপ্রস্তুতি নেয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
জাগো জবস: এ শিল্পে একজন উদ্যোক্তার করণীয় কী?
নেসার উদ্দীন আয়ূব: প্রকাশনা শিল্পেও এখন অন্যান্য সেক্টরের মতো বিশ্বায়নের প্রভাব ও প্রতিযোগিতা লক্ষণীয়। কয়েকটি বড় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান কর্পোরেট পদ্ধতি অনুসরণের ফলে এক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ মূলত যোগ্যতা ও মূলধনের চ্যালেঞ্জ। একজন প্রকাশককে এখন বই প্রকাশ করার ক্ষেত্রে একদিকে দেশীয় প্রতিযোগীদের সঙ্গে মান রক্ষার যুদ্ধ করতে হচ্ছে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারের সাথেও তাল মেলাতে হচ্ছে। এতে তার উচ্চতর যোগ্যতা, দক্ষতা ও বড় অঙ্কের মূলধন বিনিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হচ্ছে। একজন নতুন উদ্যোক্তার প্রকাশনা সেক্টরে প্রবেশের পূর্বে এ বিষয়গুলোর ওপর নজর দিয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে।
জাগো জবস: প্রকাশনা শিল্পের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আপনার অভিমত কী?
নেসার উদ্দীন আয়ূব: প্রকাশনা শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের ভবিষ্যতে আরো দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হবে। প্রতিযোগিতার সাথে সাথে এই পেশার মর্যাদা ও অর্থনৈতিক গুরুত্বও দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকবে। উন্নত বিশ্বের একটি দেশে একজন বড় প্রকাশক সেদেশের একজন প্রথম সারির নাগরিক। আমাদের দেশেও অচিরেই প্রকাশকরা সেরকম অবস্থানে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করবেন। প্রকাশনা শিল্প আরো কর্মসংস্থানসহ জাতীয় অর্থনীতিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।
জাগো জবস: বর্তমান ই-বুকের প্রসারে প্রকাশনা শিল্পে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা?
নেসার উদ্দীন আয়ূব: তথ্যপ্রযুক্তির যুগে ই-বুকের ব্যাপক ব্যবহার ও ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে অবশ্যই গুরুত্বের সাথে দেখেতে হবে। মনে রাখতে হবে, ই-বুকের ব্যবহার ও বিস্তার যতই ঘটুক; তা কাগজে মুদ্রিত বইয়ের গুরুত্বের ওপর কোনোই প্রভাব ফেলবে না। কারণ কম্পিউটার বা মোবাইল হ্যান্ডসেটের স্ক্রিনে পড়া আর কাগজের বই পড়া সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। আমেরিকা ইউরোপ অস্ট্রেলিয়ার মতো উন্নত দেশ, যারা তথ্যপ্রযুক্তিতে আমাদের তুলনায় বহুগুণ এগিয়ে আছে; সেসব দেশে ই-বুক পাঠের পরিমাণ বা পাঠক সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু মুদ্রিত বইয়ের পাঠক বা চাহিদা কোনোটিই একটুও কমেনি।
জাগো জবস: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ মূল্যবান সময় দেয়ার জন্য।
নেসার উদ্দীন আয়ূব: জাগো জবসকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ।
এসইউ/পিআর