ডেইরি ফার্ম করে সফল মেহেরুন্নেছা
রফিকুল ইসলাম জসিম
অদম্য পরিশ্রম আর সাহসিকতা নিয়ে গ্রামীণ সংস্কার আর প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে ডেইরি ফার্ম করে সফল হয়েছেন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের মেহেরুন্নেছা বেগম। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ডেইরি আইকন হিসেবে স্বীকৃতিস্বরূপ ১ লাখ টাকাও পেয়েছেন তিনি।
মেহেরুন্নেছা সংসার সামলানোর পাশাপাশি স্বামী ও শ্বশুরের অনুপ্রেরণায় বাড়ির পাশেই ২০১৪ সালে গড়ে তোলেন গরুর খামার। ১২টি গরু নিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল। তা আজ বিশাল কর্মক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুরের নৈনারপার বাজারের ব্যবসায়ী খতিব মিয়ার মেয়ে মেহেরুন্নেছা। ২০০২ সালে স্নাতক সম্পন্ন করার পর জালালপুরের হাজী আসদ্দর আলীর ছেলে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হানিফুর রহমান বেলালের সঙ্গে বিয়ে হয়।
বিয়ের পর স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি, ভাশুর ও ননদের উৎসাহে মেহেরুন্নেছা বেগম পা রেখেছিলেন নতুন সংসারে। সংসার একটু গুছিয়ে নেওয়ার পর ঘরকন্নার পাশাপাশি গড়ে তোলেন গরুর খামার। উৎসাহ জোগান স্বামী হানিফুর রহমান। তার স্বপ্নযাত্রায় অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে ওঠেন শ্বশুর হাজী আসদ্দর আলী। দুই ভাশুর আলতাফুর রহমান ও আলাল মিয়া এ কর্মযজ্ঞে সঙ্গী হন।
আরও পড়ুন: রাফসান সাবাবের ‘হোয়াট এ শো’
২০১৪ সালে ১২টি গরু নিয়ে যাত্রা শুরুর পর শাহজালাল ইসলামি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কেনেন আরও ১৯টি গরু। মেহেরুন্নেছা তার এ স্বপ্নের সঙ্গে জড়িয়ে রেখেছেন তার শাশুড়িকেও। খামারের নামের সঙ্গে যুক্ত করেন শাশুড়ির নাম। রহমান মরিয়ম (আরএম) ডেইরি ফার্ম অ্যান্ড এগ্রো ফিশারিজের মরিয়ম তার শাশুড়ি।
খামারের পরিসর যখন বাড়তে থাকে; তখন বাড়তি লোকবলের প্রয়োজন দেখা দেয়। লোকবল নিয়োগে স্থানীয় বেকার যুবকদের প্রাধান্য দেওয়া হয়। সবার পরিশ্রমে সাফল্যের পথে হাঁটতে থাকে আরএম ডেইরি ফার্ম। ২০১৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৮ বছরে খামারটি পরিণত হয় একটি আদর্শ খামারে। উৎপাদন বাড়ে, গরুর সংখ্যা বেড়ে যায় দেড় শতাধিক। গরুর খামারের সঙ্গে যুক্ত হয় মাছের খামারও। ফলের বাগানও যুক্ত হয়।
এগিয়ে যাওয়ার এ যাত্রায় সঙ্গী পূবালী ব্যাংকও। খামারের ঋণের ওপর ভর করে আরও দুটি শেড নির্মাণ করা হয়েছে। পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়েই তৈরি করা হয় অবকাঠামো। শেডগুলোর পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা, গরু-বাছুরের খাবারের সুবিধা, বিশ্রামের জন্য পর্যাপ্ত পরিসর এবং বেলা শেষে মুক্ত পরিবেশে গোচারণের ব্যবস্থা আছে খামারে। যা গরুগুলোকে সুস্থতায় বেড়ে উঠতে সহায়তা করছে।
আরও পড়ুন: আগ্রহের বিষয় নিয়েই আগাতে হবে: সুশান্ত পাল
খামারের দক্ষিণ সীমানায় নির্মাণ করা হয়েছে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত দ্বিতল ফার্ম হাউজ। ফার্ম ব্যবস্থাপনা কার্যালয়, রেস্ট হাউজসহ নামাজের স্থান রাখা হয়েছে। আছে ৩টি পুকুর। যাতে মাছ চাষ করা হয়। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাকিটা বিক্রিও করা হয়। পুকুর পাড়ে নারকেল, সুপারি, লেবু, পেয়ারা, আম, জাম, লিচু, কাঁঠালসহ নানা জাতের ফলদ গাছ লাগানো হয়েছে। চলতি মৌসুমে ড্রাগন ফলের চাষ করে আশাতীত ফলন মিলেছে।
খামারের ভেতরে বনজ বৃক্ষও রোপণ করা হয়েছে। পুকুর পাড়ের একটি ঘরে পরীক্ষামূলকভাবে পালন করা হচ্ছে কবুতর। আছে তিতির, টার্কিও। বর্তমানে খামারটি থেকে প্রতিদিন গড়ে ৬শ থেকে ৭শ লিটার দুধ উৎপাদন হয়। পাশাপাশি মাংসের জোগান দেয় খামারটি। মেহেরুন্নেছা বেগম বলেন, ‘এ সাফল্য শুধু আমার একার নয়। আমার খামারের সঙ্গে জড়িত সবাই এর সমান অংশীদার। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে অনুপ্রাণিত হয়ে এ খামার প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হই।’
তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী তার কর্মব্যস্ততার ফাঁকেও সহযোগিতা করে চলেছেন। পরিবারের সবাই আমাকে সাহস না জোগালে একার পক্ষে এতদূর আসা সম্ভব হতো না। গত ০১ জুন বিশ্ব দুগ্ধ দিবস উদযাপন ও ডেইরি আইকন সেলিব্রেশন অনুষ্ঠানে ডেইরি আইকন হিসেবে ‘ডেইরি ক্যাটাগরি’তে পুরস্কার পেয়েছি। পুরস্কারের আর্থিক মূল্য ১ লাখ টাকা, ক্রেস্ট ও সনদপত্র পেয়েছি।’
এসইউ/জিকেএস