চাকরিপ্রার্থীদের জন্য চঞ্চল ভাইয়ের পরামর্শ
তার নাম শেখ আমিনুর রহমান। পরিচিতদের কাছে সব সমস্যার সমাধান ‘চঞ্চল ভাই’। কর্পোরেটে দীর্ঘ কর্মজীবনে এখন মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল প্রতিষ্ঠান নগদের চিফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসারের দায়িত্ব পালন করছেন।
সম্প্রতি তার কর্মজীবন ও সফলতা নিয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বেনজির আবরার—
জাগো নিউজ: আপনার শিক্ষাজীবনের গল্প শুনতে চাই—
শেখ আমিনুর রহমান: আমার ছোটবেলা দেশ ও দেশের বাইরে মিলিয়ে কেটেছে। বেশ কয়েকগুলা স্কুলে শিক্ষাজীবন কেটেছে। প্রথমে কাকলী স্কুলে পড়াশোনা শুরু হয়। এরপর কাতারে চলে যাই, ভর্তি হই সেখানের একটি স্কুলে। হঠাৎ পারিবারিক সিদ্ধান্তে দেশে চলে আসি, ভর্তি হই ইস্পাহানি পাবলিক স্কুলে। শিক্ষাজীবনের যে টার্নিং পয়েন্ট অথবা চিন্তা-ভাবনার যে পরিবর্তন; সেটি শুরু হয় ওই স্কুলের হোস্টেলে থাকার সময়েই। আস্তে আস্তে পরিবেশ-পরিস্থিতি ও ভালো লাগার জায়গাগুলো বুঝতে শুরু করি। কীভাবে মানুষের সঙ্গে কমিউনিকেশন করা উচিত। তা জানার ম্যাচিউরিটি তৈরি হয়।
এসএসসি শেষ করে ঢাকা এসে নটর ডেম কলেজে ভর্তি হই। পড়াশোনার ব্যাকগ্রাউন্ড কমার্স। এইচএসসি শেষে ভর্তি হই সিটি কলেজে বি.কম সম্পন্ন করতে। বেশ চাঞ্চল্যকর কিছু পরিস্থিতি পেরিয়ে বি.কম সম্পন্ন করি। তবে ছাত্রজীবনে নানা এক্সট্রাকারিকুলার অ্যাক্টিভিটিসের সঙ্গে যুক্ত। নিজে ফটোগ্রাফি শিখে মানুষকে কোর্স করানো, সাহিত্যচর্চা, নাটক ও থিয়েটারে কাজ করা।
জাগো নিউজ: নিজের ক্যারিয়ার যেভাবে শুরু করলেন?
শেখ আমিনুর রহমান: বি.কম শেষ করে বেশ কয়েকটি কোম্পানিতে চাকরি করার সুযোগ পাই। একটা সময় পর মাস্টার্সে ভর্তি হই। হঠাৎ করে ১৯৯৭ সালে গ্রামীণফোনের টেকনোলোজি বিভাগে চাকরি পেয়ে জয়েন করি। আড়াই বছর চাকরি করেছিলাম এ বিভাগে। এ সময় প্রায় ২০০ বেইজ স্টেশন আমরা অনএয়ার করি। ১৯৯৯ সালে গ্রামীণফোনের সেলস বিভাগে চলে আসি। এভাবে আমার সেলস ক্যারিয়ার শুরু হয়। সেলসে গ্রামীণফোনের প্রায় সব বিভাগেই কাজ করেছি। সাড়ে ১৬ বছর পর গ্রামীণফোনে আমার ক্যারিয়ার শেষ করি। চাচ্ছিলাম ক্যারিয়ারে একটি ভিন্নতা আনতে!
আরও পড়ুন: শেখ রিয়াজের বিসিএস জয়ের গল্প
জাগো নিউজ: ক্যারিয়ারে ভিন্নতা আনার গল্পটি শুনতে চাই—
শেখ আমিনুর রহমান: ক্যারিয়ারে ভিন্নতা আনতে কর্পোরেট গিফট আইটেম নিয়ে ব্যবসা শুরু করি। এরপর ডিস্ট্রিবিউশনে চলে আসি।
জাগো নিউজ: নগদে যেভাবে শুরু এবং সফলতা পেলেন?
শেখ আমিনুর রহমান: নগদে আমার প্রধানত সেলস টিমকে গ্রুমিং করানোর জন্যই জয়েন করা। প্রথমে গভর্নমেন্ট সেলসে কাজ শুরু করি। এরপর আস্তে আস্তে পুরো সেলস টিমের দায়িত্ব নিই। পুরো টিমের মোটিভ এবং বডি ল্যাঙ্গুয়েজ পরিবর্তনও আমার হাতে। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সেলস ট্রানজেকশন এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০ গুণ বেড়েছে। এটি দিন দিন বেড়ে চলেছে। সেলসের পর আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় মার্কেটিং কমিউনিকেশন এবং এইচআরে। পাশাপাশি সেলস আমার ডে টু ডে অপারেশনের অংশ।
জাগো নিউজ: পরিবারে কে কে আছেন?
শেখ আমিনুর রহমান: আমার মা, স্ত্রী এবং এক সন্তান। সন্তান বেশ দারুণ ফুটবল খেলে। আন্ডারগ্রাউন্ড টুর্নামেন্টে ও ভালো করছে।
জাগো নিউজ: হতাশ চাকরিপ্রার্থীদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
শেখ আমিনুর রহমান: আমাদের সময়ে প্রযুক্তি এত উন্নত ছিল না। এখন শেখা ও জানার অনেক জায়গা আছে সবার জন্যই। ইউটিউব ভালো একটি মাধ্যম। পাশাপাশি নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমেও চাকরি এবং ক্যারিয়ারে উন্নতি আনা যায়। পাশাপাশি সবাইকে অবশ্যই একজন বা একাধিক মেন্টরকে ফলো করতে হবে। এখন অনেক ভালো ভালো লিডার সৃষ্টি হয়েছে। ভালো কিছু করছে এমন কাউকে ফলো করতে হবে, তার সঙ্গে পরামর্শ করে আগাতে হবে। আমার গুরু বা মেন্টর হচ্ছেন মেহবুব চৌধুরি। আমার লিডারশিপ নিয়ে যারা বলেন, এই লিডারশিপ অর্জনে তার অবদান অনেক। পাশাপাশি লিংকডইন ভালো একটি প্ল্যাটফর্ম। অনেক কিছু জানা যায়। প্রচুর পড়তে হবে, জানতে হবে, শিখতে হবে। আমি এখনো শিখছি, পড়ছি এবং জানছি।
আরও পড়ুন: বিসিএস হচ্ছে ধৈর্য আর পরিশ্রমের ফল
জাগো নিউজ: দেশের বর্তমান চাকরির বাজার নিয়ে কিছু যদি বলতেন—
শেখ আমিনুর রহমান: চাকরি খুঁজে পেতে লিংকডইন ভালো একটি জায়গা। বড় বড় কোম্পানিগুলো এখন এখানেই সার্কুলার দিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই ক্লাবিং করা এবং কমিউনিটিগুলোয় যুক্ত হতে হবে। পাশাপাশি ক্যারিয়ার ফেয়ার আর জব ফেয়ারগুলোয় নিয়মিত জয়েন করতে হবে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, চাকরির বাজারে যাওয়ার আগে অবশ্যই আত্মবিশ্বাসী এবং কথা বলার চর্চা করতে হবে।
জাগো নিউজ: ইন্টারভিউ টেকনিক নিয়ে কী বলবেন?
শেখ আমিনুর রহমান: ইন্টারভিউ যারা দেবেন, তাদের মাথায় রাখতে হবে—আমার হারানোর কিছু নেই। পাওয়ার আছে অনেক কিছু। সেই চিন্তা থেকেই আগাতে হবে, জীবন সাজাতে হবে। মাথায় রাখতে হবে, এই ১০ মিনিট অথবা ৩০ মিনিটে আমাকে সেল করতে হবে।
জাগো নিউজ: সেলসের মানুষ অথবা তাদের ক্যারিয়ার নিয়ে আপনার অভিমত—
শেখ আমিনুর রহমান: সেলস হচ্ছে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার। সেলসের মানুষকে অনেক বেশি কথা বলা ও জানার ইচ্ছা থাকতে হবে। সেলসের মানুষদের কখনো ইন্সেন্টিভের চিন্তায় কাজ করা উচিত নয়। একদম বেসিক নিয়ে কাজ করতে হবে। অল্পতে খুশি থাকলে চলবে না। তবেই একটি দারুণ ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব।
আরও পড়ুন: পুলিশ সদস্য হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন সাইফুল
জাগো নিউজ: জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য যদি কিছু বলতেন—
শেখ আমিনুর রহমান: জাগো নিউজের এ উদ্যোগগুলো বেশ প্রশংসনীয়। যারা চাকরিপ্রার্থী অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন, তাদের জন্য আরও ভালো কিছু করার মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাক জাগো নিউজ।
এসইউ/জিকেএস