চাকরির জন্য দক্ষতা উন্নয়ন বেশি জরুরি
রবিউল আলম লুইপা ৩৫তম বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে বর্তমানে জামালপুর জেলায় কর্মরত। পেশাগত দক্ষতার পাশাপাশি শিক্ষা ও ক্যারিয়ার বিষয়ক কাউন্সিলিংয়ের জন্য শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের কাছে তিনি বেশ জনপ্রিয়। সম্প্রতি তিনি বিসিএসের সব তথ্য ও প্রস্তুতি কৌশল নিয়ে ‘রোড টু বিসিএস’ নামে বই প্রকাশ করেছেন। তার বাবা মো. আব্দুল খালেক জনতা ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, মা রাবিয়া বেগম একজন গৃহিণী। তিনি জামালপুর জিলা স্কুল থেকে এসএসসি ও ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ থেকে হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগে বিবিএ ও এমবিএ সম্পন্ন করেন।
সম্প্রতি তার অভিজ্ঞতা এবং চাকরিপ্রার্থীদের করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—
জাগো নিউজ: প্রথমেই আপনার শৈশবের গল্প শুনতে চাই—
রবিউল আলম লুইপা: আমার স্কুলজীবনের পুরোটাই কেটেছে জামালপুর জেলার শহরতলীতে। আপনি জানেন, আমাদের ছেলেবেলায় প্রযুক্তির ব্যবহার কম ছিল। ফলে শৈশবের দুরন্তপনা আর ক্রিকেট-ফুটবলে বুদ হয়ে থাকা কৈশোরের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছি আমরা। এসএসসি পরীক্ষায় ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় আমি ডিস্ট্রিক্ট সেকেন্ড হয়েছিলাম। ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের আবাসিক জীবনের শিক্ষাগুলো আমার জীবনের অন্যতম অর্জন ছিল বলে মনে করি।
জাগো নিউজ: আপনার বিসিএস জার্নি সম্পর্কে বলুন—
রবিউল আলম লুইপা: বিসিএস সম্পর্কে ধারণা থাকলেও ছাত্রজীবনের ইচ্ছা ছিল চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট বা কর্পোরেট চাকরি। ইউনিভার্সিটি থেকে বেরিয়ে জীবনের লক্ষ্য চেঞ্জ করি। ৩৫তম বিসিএসে প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ করেই সফল হতে পেরেছি। অন্য বিসিএসের চেয়ে ৩৫তম বিসিএসের প্রশ্নের মান কঠিন ছিল। প্রিলি ও রিটেন পরীক্ষার নতুন সিলেবাস। প্রথমবারের মতো ২০০ নম্বরের প্রিলি পরীক্ষা সব মিলিয়ে অভিজ্ঞতাটা অন্যরকম ছিল। তবে সবশেষে সফল হয়েছি।
আরও পড়ুন: শেখ রিয়াজের বিসিএস জয়ের গল্প
জাগো নিউজ: আপনার কর্মজীবন কেমন কাটছে, কেমন উপভোগ করছেন?
রবিউল আলম লুইপা: আমার বর্তমান কর্মস্থল জামালপুর জেলায়। এরআগে আমি লক্ষ্মীপুর এবং কিশোরগঞ্জ জেলায় চাকরি করেছি। শিক্ষা ক্যাডারে কাজ করার একটা আলাদা আনন্দ আছে। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন ও শিক্ষার্থীদের সফলতার একজন অংশীদার ভাবতে ভালোই লাগে। তবে শিক্ষা ক্যাডার পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হলে কর্মজীবন আরও উপভোগ্য হতে পারতো।
জাগো নিউজ: শিক্ষা ক্যাডারের পরিপূর্ণতা বলতে কী বুঝিয়েছেন?
রবিউল আলম লুইপা: বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস কম্পোজিশন অ্যান্ড ক্যাডার রুল-১৯৮০ অনুসারে পূর্ব পাকিস্তান এডুকেশন সার্ভিস (উচ্চশিক্ষা), সেকেন্ডারি এডুকেশন সার্ভিস (মাধ্যমিক), জুনিয়র এডুকেশনে (প্রাথমিক) প্রথম শ্রেণির শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত করে সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার সৃষ্টি করা হয়েছে। কারিগরি ছাড়া সব শিক্ষা ব্যবস্থা একসঙ্গে করার জন্যই এর নাম সাধারণ (সার্বিক) শিক্ষা। কিন্তু বর্তমানে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা শিক্ষায় ক্যাডারের পদায়নের সুযোগ সংকুচিত হওয়ায় ক্যাডারটি অনেকটাই কলেজ শিক্ষকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ। ফলে মেধাবী শিক্ষা ক্যাডারদের সার্ভিস থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা যেমন বঞ্চিত হচ্ছে; চাকরিপ্রার্থীরাও ক্যাডারটির প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে। শিক্ষা ক্যাডার পরিপূর্ণতা পেলে এটি নিঃসন্দেহে চাকরিপ্রার্থীদের প্রথমদিকের পছন্দ হতো।
জাগো নিউজ: ক্যাডার হওয়ার পর সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আপনি চাকরিপ্রার্থীদের জন্য নিয়মিত লিখছেন। এটি কীভাবে সম্ভব হয়েছে?
রবিউল আলম লুইপা: ইউনিভার্সিটি থেকে বের হওয়ার পর লক্ষ্য করলাম, আমার পরিচিত কোনো বিসিএস ক্যাডার নেই। তখন ফেসবুকে এখনকার মতো এতো জবগ্রুপও ছিল না। ফলে একমাত্র ভরসা ছিল নিউজ পেপারের ফিচার আর কোচিং সেন্টারগুলোর সেমিনার। আমি কারো কাছ থেকে পরামর্শ পাইনি, তাই চাকরিপ্রার্থীদের জন্য লিখি। বলতে পারেন, পরামর্শ না পাওয়ার অভাববোধ থেকেই আমি চাকরিপ্রার্থীদের জন্য লিখি।
আরও পড়ুন: বিসিএস হচ্ছে ধৈর্য আর পরিশ্রমের ফল
জাগো নিউজ: চাকরিপ্রার্থীদের প্রথম পছন্দ বিসিএস। এর পেছনে কী কারণ থাকতে পারে বলে মনে করেন?
রবিউল আলম লুইপা: আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোয় পড়াশোনা ও জীবনের লক্ষ্য ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের চেয়ে চাকরির বাজার ও সুযোগ-সুবিধার ওপর নির্ভর করে। ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় দেখেছি, সরকারি চাকরির চেয়ে প্রাইভেট ব্যাংক বা গ্রামীণফোন-বাংলালিংকের মতো কর্পোরেট চাকরির জয়জয়কার। ইউনিভার্সিটি হলে আমার একজন রুমমেট কুমিল্লা বোর্ডের স্ট্যান্ড করা ছিলেন। তিনি এমবিএ পাস করেই চোখ বন্ধ করে প্রাইভেট ব্যাংকে ঢুকে গিয়েছিলেন। আবার এখন বিসিএস বা সরকারি চাকরির ক্রেজ চলছে। আগামীতে কোন সেক্টরের ক্রেজ চলবে, সেটি সময়ই বলে দেবে।
জাগো নিউজ: একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ক্যারিয়ারের জন্য নিজেকে কীভাবে তৈরি করবেন?
রবিউল আলম লুইপা: চাকরি পাওয়ার জন্য গদবাধা চাকরির বই পড়ার চেয়ে নিজের স্কিল ডেভেলপমেন্ট বেশি প্রয়োজন বলে মনে করি। ইদানিং দেখা যায়, ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েই শিক্ষার্থীরা চাকরির বই পড়া শুরু করেন। আমার মনে হয়, চাকরির বইগুলো কমপ্লিট করতে বড়জোর এক বছর লাগে, যা মাস্টার্স চলাকালীনই শেষ করা সম্ভব। অনার্স লাইফে একজন শিক্ষার্থী যদি ভালো একাডেমিক রেজাল্ট, বাংলা-ইংরেজি ভাষা ও উচ্চারণ, টেক্সট বইয়ের বাইরের অন্য বই, কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস ইত্যাদির সঙ্গে থাকতে পারেন, তাহলে তিনি সরকারি-বেসরকারি উভয় চাকরির জন্যই নিজেকে এগিয়ে রাখতে পারবেন।
এসইউ/জিকেএস