গয়নায় ক্যারিয়ার, মাসে আয় ৭০ হাজার
মুহাম্মদ শফিকুর রহমান
ছোটবেলা থেকেই তার গয়নার প্রতি ঝোঁক। নতুন গয়না ভেঙে জোড়া লাগাতেন। ভাঙা গয়না জোড়া দিয়ে কিছুটা ভিন্নরূপ দিতে চাইতেন। কৌতূহলের বশে ২০১২ সালে ফেসবুকে পেজ খোলেন। এখন তার মাসিক আয় প্রায় ৭০ হাজার টাকা। এমবিএ শেষ করেছেন। চাকরির পেছনে না ছুটে গয়নাতেই গড়েছেন ক্যারিয়ার। সফল এ উদ্যোক্তার নাম নুসরাত জাহান কাঁকন।
কাঁকনের জন্ম চট্টগ্রামে। তবে বাবার চাকরিসূত্রে থেকেছেন দেশের বিভিন্ন জায়গায়। তিনি খাগড়াছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, খাগড়াছড়ি ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। বিবিএ, এমবিএম শেষ করেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। বর্তমানে চট্টগ্রাম ল’ কলেজে পড়াশোনার পাশাপাশি গয়না নিয়ে কাজ করছেন। স্বামী আর এক সন্তান নিয়ে চট্টগ্রাম শহরে থাকেন।
তিনি উইয়ের সদস্য। উইয়ের বেশ কয়েকটি কোর্সে অংশ নিয়েছেন। উদ্যোক্তা হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। নিজ থেকেই চেষ্টা করে শিখেছেন। ২০১২ সালে শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় ফেসবুকে পেজ খোলেন। কাঁকন বলেন, ‘কৌতূহলের বশে পেজ খুলেছিলাম। দেখার জন্য, কেমন সাড়া পাওয়া যায়। শুরুতেই ক্রেতা মিলে যায়। পেজের নাম গয়নাগাটি।’
তার হাতের তৈরি প্রথম পণ্য ছিল হিজাব পিন দুল। অনলাইনে গয়না তো অনেকেই বিক্রি করেন। তার গয়নার আলাদা কিছু আছে কি? এমন প্রশ্নের জবাবে কাঁকন বলেন, ‘গয়নার কোয়ালিটি, প্রেজেন্টেশন মানুষ পছন্দ করে। যুগের সাথে যখন যে গয়নার চল, আমি সেটাই তৈরি করি। দেশীয় উৎসবগুলো ঘিরে গয়না তৈরি করি।’
মেটালের হাতের তৈরি নানা গয়না, কড়ির গয়না, চুড়ি, মুক্তার গয়না, কাঠের গয়না, মেটাল, বিডসের গয়না, হিজাব পিন, চোরাকাটা, আর্টিফিশিয়াল ফুলের গাজরা, বিভিন্ন ধরনের দামি পাথর এবং মুক্তার ডিজাইনের গয়না তার কাছে পাওয়া যায়। নিজের পণ্য নিয়ে এ পর্যন্ত তিনি ছয়টি মেলায় অংশ নেন। এর মধ্যে উদ্যোক্তা দিবসে যুব উন্নায়ন সংস্থার প্রদর্শনীতে হ্যান্ডিক্রাফট বিভাগে ২য় স্থান অর্জন করেন।
অনলাইনেই তার সব বেচাবিক্রি। মাত্র দুই হাজার টাকা ছিল তার মূলধন। এখন মাসে প্রায় ৭০ হাজার টাকা আয় হয়। তবে উৎসবের সময় বিক্রি বেশি হয়। কাঁকন বলেন, ‘আমার স্পেশ্যাল গয়না হলো চায়না থেকে আমদানি করা রিয়েল পার্লের গয়নাগুলো। যেগুলোর চাহিদা আমার পেজে অনেক বেশি। আমার কাছে ১৫০ থেকে শুরু করে ৩০০০ টাকা দামের গয়না আছে।’
নারী উদ্যোক্তা হিসেবে সমস্যার কথা জানতে চাইলে কাঁকন বলেন, ‘নারী হিসেবে যতটা না সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি, তার চেয়ে বেশি হয়েছি বিবাহিত নারী হিসেবে। বিবাহিত নারী উদ্যোক্তা হয়ে আমি শুরুতে শুনেছিলাম, স্বামী হাতখরচ দিতে পারে না বলেই আমি এ ব্যবসায়ে এসেছি। বিষয়টা আসলে তা নয়। নিজেকে সাবলম্বী করে তোলা, অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর পাশাপাশি নিজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য ব্যবসায় আসা।’
ক্ষুদ্র ব্যবসায় অন্যতম সমস্যা হলো মূলধনের অভাব। কাঁকনের মতে, ‘আমাদের দেশের তরুণ-তরুণীরা অনেক সম্ভাবনাময়। অনেকের মেধা থাকলেও মূলধনের অভাবে শুরু করতে পারছেন না। তাই সরকার যদি অনুদান বা বিনা সুদে লোনের ব্যবস্থা করে দেয়, তাহলে দেশের অর্থনৈতিক খাতের জন্য অনেক ভালো হবে।’
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সর্ম্পকে তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে একটি আউটলেট দিতে চাই। তবে মূলধনের স্বল্পতায় প্রত্যাশিত গতিতে এগোতে পারছি না।’
লেখক: অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার, সেলস অপারেশন্স, ফেয়ার ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড।
এসইউ/জিকেএস