ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাগো জবস

ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে বিসিএসে সফল আনিসুর

সাজেদুর আবেদীন শান্ত | প্রকাশিত: ০২:৩১ পিএম, ২৯ নভেম্বর ২০২২

 

আনিসুর রহমানের জন্ম টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার ডৌজানী গ্রামে। দুই ভাই-বোনের মধ্যে তিনি বড়। বাবা আব্দুস সাত্তার ব্যবসায়ী, মা আনোয়ারা বেগম গৃহিণী। আনিসুর ঘাটাইল ক্যান্টমেন্ট বোর্ড হাইস্কুল ও কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

অগ্রণী ব্যাংকের ‘সিনিয়র অফিসার’ পদে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। এরপর ৩৩তম বিসিএসের মাধ্যমে প্রশাসন ক্যাডারে যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগ দেন। বর্তমানে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত।

তার বিসিএস জয়ের গল্প ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফিচার লেখক সাজেদুর আবেদীন শান্ত—

জাগো নিউজ: শৈশব কেমন কেটেছে?
আনিসুর রহমান: আমার শৈশব অনেক সুন্দর ছিল। অনেক দুরন্তপনায় কেটেছে। ফুটবল খেলেছি মাঠে, হা-ডু-ডু খেলেছি। বর্তমান প্রজন্ম তো তেমন খেলেই না, স্মার্টফোনে ব্যস্ত সময় পার করে। এককথায় কাদা মাটিতে, কাদা মেখে বড় হয়েছি আমি।

jagonews24

জাগো নিউজ: পড়াশোনায় কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল?
আনিসুর রহমান: না। স্বচ্ছল পরিবারের সন্তান ছিলাম। এ জন্য পড়াশোনায় তেমন কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল না। বাবা-মা পড়াশোনার ব্যাপারে খুব যত্নশীল ছিলেন। বাবা আমাকে পড়ালেখায় খুবই উৎসাহ দিতেন।

জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?
আনিসুর রহমান: গ্রামে প্রাথমিক পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে ঘাটাইলে থাকা শুরু করি। ঘাটাইলে আমাদের বাসা ছিল উপজেলা পরিষদের সাথেই। ছোটবেলা থেকেই আমি ইউএনও, অ্যাসিল্যান্ড দেখে বড় হয়েছি। খুব কাছ থেকে তাদের লাইফস্টাইল দেখেছি। সপ্তম-অষ্টম শ্রেণিতে উপজেলা অডিটোরিয়ামে তাদের বক্তব্য শুনেছি। তখন থেকেই মূলত তাদের মতো হওয়ার স্বপ্ন দেখা। বিসিএস নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা।

জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই—
আনিসুর রহমান: বিসিএস জার্নিটা আমার সুখের ছিল না। আমি প্রথম ২০০৮ সালে ২৮তম বিসিএস দিয়েছি। ওই সময় থেকে প্রতি বছরই একটি করে বিসিএস হতো। ২৮তম বিসিএসে আমি প্রিলিতে কোয়ালিফাই করি। কিন্তু ব্যাংকে চাকরি করার কারণে লিখিত ভালো হয়নি। ২৯তমতে প্রিলি লিখিত পাস করে ভাইভায় আটকে যাই। ৩০তম বিসিএসেও ভাইভায় যেতে পারিনি। এরপর মনের দুঃখে আর বিসিএসগুলোয় অংশগ্রহণ করিনি। এরপর ৩১তম বিসিএসে আমার কাছের এক বন্ধু অ্যাডমিন ক্যাডার হন। খুলনায় তার পোস্টিং হয়। ওখানে বেড়াতে গিয়ে তার কাজ, সম্মান দেখে উৎসাহ পাই। যদিও আমি তখন ব্যাংকের একজন প্রথম শ্রেণির অফিসার ছিলাম। তবুও বিসিএস আমাকে টানে। খুলনা থেকে এসেই ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দিয়ে রাত জেগে পড়াশোনা করেছি। ৬ মাস টানা প্রস্তুতি নিয়ে ৩৩তম বিসিএসে অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হই। মূলত এটিই আমার বিসিএস যাত্রার গল্প।

jagonews24

জাগো নিউজ: বিসিএসের প্রস্তুতি কেমন নিতে হয়? ভাইভার ধরণ সম্পর্কে যদি বলতেন—
আনিসুর রহমান: বিসিএসের পড়াশোনা আসলে অনেক বিস্তৃত। তাই শুরু থেকেই সিরিয়াস ভাবে পড়তে হবে। আমি মনে করি, টিউশনি করালে ভালো হয়। অভিজ্ঞতা তৈরি হয়, চর্চা হয়। বিশেষ করে ক্লাস নাইন-টেনের বই থেকেই বিসিএসের প্রশ্নগুলো হয়ে থাকে। বিজ্ঞান, বাংলা ব্যাকরণ, ইংরেজি, গণিতের জন্য ৯ম-১০ম শ্রেণি পর্যন্ত বোর্ড বই দেখতে হবে। ভাইভার ধরন সম্পর্কে বলতে গেলে, অনেকটা ক্যাডার চয়েজের ওপর ভাইভা বোর্ডের প্রশ্ন নির্ভর করে। তাই পছন্দের ক্যাডার চয়েজ করে সে সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে পড়তে হবে। এ ছাড়া বাকিটা পুরো ভাগ্যের ওপর। তবে ভাইভায় নিজ জেলা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অনার্সের বিষয়, সংবিধান, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, সাম্প্রতিক ঘটনা সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখতেই হবে।

জাগো নিউজ: কার কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন?
আনিসুর রহমান: ওই যে বললাম আমার বন্ধু। মূলত আমার বন্ধুই অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। তবে পরিবার থেকে আমার মা-বাবাও অনুপ্রেরণা দিয়েছেন।

জাগো নিউজ: সামাজিক কাজে কতটুকু সম্পৃক্ত আছেন?
আনিসুর রহমান: আমি সরকারি চাকরির পাশাপাশি সামাজিক কাজে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের চেষ্টা করি। আমাদের কতগুলো সামাজিক ব্যাধি আছে, যেমন বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং, মাদক ও জুয়া। আমি এ দায়িত্বে থাকা অবস্থায় এগুলোর বিরুদ্ধে কাজ করছি।

jagonews24

জাগো নিউজ: আপনি এ পর্যন্ত ৪২১টি বাল্যবিবাহ বন্ধ করেছেন, এ সম্পর্কে আপনার অনুভুতি কী—
আনিসুর রহমান: বাল্যবিবাহ বন্ধে অবশ্যই আমার অনুভূতি সুখকর। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভিশন, সুখী-সমৃদ্ধ দেশ আমাদের গড়তে হবে। আর আমাদের দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী। এই নারীরা অশিক্ষিত থাকলে, অর্থনীতির মূল স্রোতধারা থেকে দূরে থাকলে আমাদের ভিশনে পৌঁছানো সহজ হবে না। তাই নারীদের শিক্ষিত করতে হবে। নারী শিক্ষার সবচেয়ে বড় বাধা হলো বাল্যবিবাহ। বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে পারলে নারীরা শিক্ষিত হবে, অর্থনীতিতে আবদান রাখবে। তাই আমি চাই, সারাদেশে বাল্যবিবাহ বন্ধ হোক। এ ছাড়াও এইচডিজির সূচকে আছে মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার কমানো। তাই বাল্যবিবাহ বন্ধ হলে আমরা এগিয়ে যাবো। সুখী-সমৃদ্ধ দেশে পৌঁছে যাবো।

জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
আনিসুর রহমান: আমি যেহেতু প্রশাসন ক্যাডারে কাজ করি, তাই সরকারের মিশন ও ভিশন পূরণের লক্ষ্যে কাজ করে যাবো। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় দেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ভিশন অনুযায়ী সুখী, সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশ গড়ে তুলতে যে নির্দেশনা দেওয়া হবে; সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাবো।

এসইউ/জিকেএস

আরও পড়ুন