ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাগো জবস

বিসিএসে পরিশ্রম ধৈর্য ও ভাগ্য থাকতে হয়

মমিন উদ্দিন | প্রকাশিত: ০১:২৬ পিএম, ০৮ নভেম্বর ২০২২

রাজু আহমেদ আগারগাঁওয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরে ‘সমাজসেবা অফিসার’ হিসেবে কর্মরত। তবে ৪০তম বিসিএসের মাধ্যমে আগামী ৪ ডিসেম্বর ‘সহকারী পুলিশ সুপার’ হিসেবে যোগদান করবেন। তার বাবা কবির উদ্দিন আহমেদ, মা শিউলী আক্তার। তিনি নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার মধ্যনগর গ্রামের সন্তান।

সম্প্রতি তার বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া, সফলতার গল্প ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মমিন উদ্দিন—

জাগো নিউজ: আপনার শৈশবের দিনগুলো কেমন ছিল?
রাজু আহমেদ: আমার শৈশবের পুরোটাই কেটেছে প্রাণের শহর ঢাকায়। শৈশবের দিনগুলো অনেক রঙিন ছিল। বিকেল হলেই দৌড় দিয়ে মাঠে খেলতে যাওয়া, বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি আরও কত কী। অনেক মারও খেতে হয়েছে আম্মুর কাছে শুধু নির্ধারিত সময়ের বেশি ক্রিকেট খেলার জন্য। ক্রিকেট আমার প্রিয় খেলা। আর কোনো ব্যাপারে আম্মুর মার খেতে হয়নি কখনো।

jagonews24

জাগো নিউজ: আপনার পড়াশোনা সম্পর্কে জানতে চাই—
রাজু আহমেদ: আমি ১ম থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছি ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের সেনাপল্লী হাই স্কুলে। সেখান থেকেই বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পাস করি ২০০৮ সালে। এরপর বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হই আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ওয়ার্ল্ড রিলিজিয়ন্স অ্যান্ড কালচার বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করি।

জাগো নিউজ: আপনার পড়াশোনায় কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল?
রাজু আহমেদ: আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। পড়াশোনার ক্ষেত্রে নানা সময়ই বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা এসেছে। কিন্তু আমার বাবা-মা কখনোই সেগুলো বুঝতে দেননি। যখন যা চেয়েছি, তারা যেভাবেই হোক ম্যানেজ করে দিয়েছেন। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করার পর আমি অনেকদিনই বেকার ছিলাম। পুরোটা সময় আমি বিসিএসের প্রস্তুতি নিয়েছি। তারা একটিবারের জন্যও বলেননি, ‘কেন এখনো কিছু করছো না?’ তাদের মধ্যে বিশ্বাস ছিল যে, আমি একদিন লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবই।

jagonews24

জাগো নিউজ: বিসিএস নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলেন কবে থেকে?
রাজু আহমেদ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যারা শিক্ষার্থী; তারা প্রায় সবাই দ্বিতীয়-তৃতীয় বর্ষ থেকেই আশেপাশে বড়ভাইদের দেখে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে বিসিএসের পড়াশোনা করতে যান। প্রথম বর্ষটা আসলে চেনা পরিচিত হতেই চলে যায়। আমি স্নাতক শেষ করেই সিদ্ধান্ত নিই বিসিএস ক্যাডার হবো। এর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে থাকি।

জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই, কীভাবে সফল হয়েছিলেন?
রাজু আহমেদ: বিসিএসের শুরুটা মূলত স্নাতক শেষ বর্ষেই শুরু করি। এর আগে কিছুদিন ব্যাংক জবের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। তারপর একটি পর্যায়ে শুধু বিসিএসের দিকেই এগিয়ে যাই। একজন বিসিএস ক্যাডারের সফলতার পেছনে তার পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষী এমনকি নিন্দুকও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। আমার ক্ষেত্রেও আশেপাশের মানুষগুলো সব সময়ই অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। একটি প্রবাদ আছে, প্রতিটি সফল ব্যক্তির পেছনে নারীর অবদান রয়েছে। আমার ক্ষেত্রে অবদান আছে আমার মায়ের এবং প্রাণপ্রিয় স্ত্রীর।

jagonews24

যখন আমি একদমই ভেঙে পড়েছিলাম; তখন আমার ভালোবাসার মানুষ, যে এখন আমার স্ত্রী। সে আমাকে বলেছিল, ‘জীবনে যা-ই হোক, আমি তোমার পাশে আছি’। পরে প্রতিটি বেলায় সে আমাকে অনুপ্রেরণা ও সাহস জুগিয়েছে। আমার বিসিএসের সফলতার ক্ষেত্রে তার অবদান অন্যতম। সে পাশে না থাকলে হয়তো আমি এতদূর আসতে পারতাম না। সে যেহেতু আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ের শিক্ষার্থী ছিল এবং বর্তমানে শিক্ষকতা পেশায় আছে, আমরা একসঙ্গে ভাইবার টপিকগুলো চর্চা করতাম। তার পরামর্শগুলো ভাইবার ক্ষেত্রে অনেক কাজে দিয়েছে।

আমার মায়ের কথা বলে শেষ করা যাবে না। প্রতিটি দিন কী পরিমাণ ত্যাগ তাকে করতে হয়েছে, তা বলে বোঝানো যাবে না। তার বিন্দু বিন্দু কষ্টের ফলেই আজ আমি এ সাফল্য পেয়েছি। আমার বাবা তার সবটা দিয়ে সাপোর্ট দিয়েছেন। কোনোদিন কোনো ব্যাপারে না করেননি। বাবারা নীরবে সব করে যান। সব সময় আমাকে মতের স্বাধীনতা, সিদ্ধান্তের স্বাধীনতা দিয়েছেন। আমার ছোট ভাইও নানা সময়ে সহযোগিতা করেছে। বন্ধু-বান্ধবরা তো আছেই। যখন যে সাহায্য চেয়েছি, অকপটে করেছে।

jagonews24

এ ছাড়া আমার শিক্ষক, আবৃত্তির গুরু, বড় ভাই, আত্মীয়-স্বজন তো আছেই। তাদের সবার কাছে আমি ঋণী। বিসিএসে মূলত তিনটি ব্যাপার একসঙ্গে থাকতে হয়—পরিশ্রম, ধৈর্য এবং ভাগ্য। এ তিনটির সমন্বয় থাকলেই কেবল কাঙ্ক্ষিত ক্যাডার পাওয়া যেতে পারে। আমার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয়।

জাগো নিউজ: কততম বিসিএসের কোন ক্যাডারে যোগ দিচ্ছেন?
রাজু আহমেদ: আমি ২৪তম মেধাক্রম নিয়ে ৪০তম বিসিএসের পুলিশ ক্যাডারে ‘সহকারী পুলিশ সুপার’ পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছি। আগামী ৪ ডিসেম্বর যোগদান করব।

জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
রাজু আহমেদ: আমি যেহেতু সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করব। তাই আজীবন মানুষের সেবা করে যেতে চাই। নিজের কাজের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশকে আরও উচ্চপর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই।

এসইউ/জিকেএস

আরও পড়ুন