মায়ের অনুপ্রেরণায় বিসিএস ক্যাডার আমিনুল
ডা. মো. আমিনুল ইসলাম কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হেলথ কমপ্লেক্সে কর্মরত। কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলার শাহ্পুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মো. আবুল কালাম আজাদ, মা মাহমুদা খাতুন। বাজিতপুরের আফতাব উদ্দিন হাই স্কুল থেকে এসএসসি, ঢাকার ওয়েস্টার্ন কলেজ থেকে এইচএসসি ও দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন তিনি।
৪২তম বিসিএসে স্পেশ্যাল ক্যাডারে উত্তীর্ণ হন ডা. মো. আমিনুল ইসলাম। সম্প্রতি তিনি বিসিএস জয়, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিজানুর রহমান মিথুন—
জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?
ডা. মো. আমিনুল ইসলাম: আসলে আমার বিসিএস ক্যাডারের স্বপ্ন দেখা বা সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার পেছনে অনেকগুলো প্রেক্ষাপট রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম একটা কারণ হচ্ছে, ২০১৯ সালের জুন মাসে যখন আমার ইন্টার্ন শেষ হয়ে যায়, হঠাৎ করেই বেকার হয়ে পড়ি। এই বেকারত্ব থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায় তখন আমার মনে হলো একটা চাকরির খুব প্রয়োজন। আমাকে বিসিএস ক্যাডার হতে হবে।
বিসিএস ক্যাডার হওয়ার আরও একটি কারণ হচ্ছে, আমার অন্যতম একটি ভালো লাগার বিষয় হচ্ছে মানুষের কাছাকাছি আসা, তাদের জন্য কিছু করা, তাদের উপকার করা। আর বিসিএস হচ্ছে এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখান থেকে আপনি চাইলে খুব সহজেই তৃণমূল মানুষের সংস্পর্শে আসতে পারেন। গ্রামের একটি বিশাল জনগোষ্ঠীকে আপনি তাদের কাছাকাছি থেকে সেবা দিতে পারেন। আর তখন আমার মনে হলো, একমাত্র বিসিএসের মাধ্যমেই আমার এ স্বপ্নপূরণ সম্ভব।
জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই, প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছেন?
ডা. মো. আমিনুল ইসলাম: আমি ৪২তম স্পেশ্যাল বিসিএসের একজন ক্যাডার। স্পেশ্যাল বিসিএস হওয়ায় সাধারণ বিসিএসের সিলেবাসের তুলনায় আমাদের সিলেবাস একটু ভিন্ন। পরীক্ষা পদ্ধতিও ভিন্ন ছিল। সাধারণ বিসিএসের প্রিলিমিনারির মতো পরীক্ষা না হয়ে আমাদের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা সরাসরি লিখিত পরীক্ষা হিসেবে গণ্য হয়েছে। আর লিখিত পরীক্ষার সিলেবাস ছিল টোটাল ২০০ নাম্বারের। ১০০ নাম্বার ছিল বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী। আর ১০০ নাম্বার ছিল মেডিক্যাল বিষয়ক।
প্রস্তুতি নেওয়ার ক্ষেত্রে আমি শুরু থেকেই একটি রুটিন করে নিয়েছিলাম। রুটিন অনুযায়ী জেনারেল ও মেডিক্যাল বিষয়ক পড়াশোনা করেছি। আমি বিসিএস ক্যাডার হওয়ার জন্য এতটাই ডেস্পারেট ছিলাম যে, দৈনিক ১৫ ঘণ্টা পড়াশোনা করেছি। প্রস্তুতি নেওয়ার ক্ষেত্রে জেনারেল ও মেডিক্যাল পড়াশোনায় সমান গুরুত্ব দিয়েছি। কারণ আমার কাছে মনে হয়েছিল, বিসিএস ক্যাডার হতে হলে আমাকে দুই বিষয়েই সমান পারদর্শী হতে হবে।
জাগো নিউজ: আড়াল থেকে কেউ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন?
ডা. মো. আমিনুল ইসলাম: আমার পরিবার সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণার জায়গা, বিশেষ করে আমার মা। আমার মা সব সময় চাইতেন আমি সরকারি কর্মকর্তা হই, বড় ডাক্তার হই। তাই আমার বিসিএস ক্যাডার হওয়ার পেছনে আমার মায়ের অনুপ্রেরণা ও অবদান অনস্বীকার্য।
জাগো নিউজ: নতুনরা প্রিলির জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?
ডা. মো. আমিনুল ইসলাম: নতুনদের প্রিলি প্রস্তুতির জন্য অবশ্যই সবার আগে সিলেবাস সম্পর্কে সম্যক ধারণা নিতে হবে। প্রিলিতে কোন কোন বিষয় পড়তে হবে, কোন বিষয়ে কত নাম্বার তা ভালোভাবে দেখে নিতে হবে। তারপর কাজ হচ্ছে বিসিএসের একটা প্রশ্নব্যাংক কিনে বিগত সালের প্রশ্নগুলো ভালোভাবে দেখা এবং বিশ্লেষণ করা। তাহলে বিসিএসে আসা প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যাবে।
এ ছাড়া প্রস্তুতির জন্য বাজার থেকে প্রচলিত যে কোনো দুই প্রকারের গাইড বই কেনা যেতে পারে। একটি গাইড বই খুব ভালোভাবে পড়তে হবে। আরেকটা গাইড বই থেকে অতিরিক্ত কোনো তথ্য থাকলে তা টুকে রাখতে হবে। মেইন বই হিসেবে নবম-দশম শ্রেণির বইগুলো সাথে রাখা যেতে পারে।
জাগো নিউজ: প্রিলি পাস করার পর রিটেনের প্রস্তুতি কেমন হওয়া উচিত?
ডা. মো. আমিনুল ইসলাম: বলা হয়ে থাকে, বিসিএস ক্যাডার প্রাপ্তির ট্রামকার্ড হচ্ছে রিটেন পরীক্ষা। কারণ রিটেন পরীক্ষায় ভালো নাম্বার অর্জন করতে পারলে অন্য প্রার্থীর সঙ্গে পার্থক্য তৈরির একটা সুযোগ থাকে এবং ক্যাডার প্রাপ্তি অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। এজন্য ব্যাপকভাবে রিটেনের প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রচুর অনুশীলন করতে হব। বিশেষ করে বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে ব্যাপক দক্ষতা অর্জন করতে হবে। কারণ এই তিন বিষয় দিয়েই অন্য প্রার্থীর সঙ্গে নাম্বারের একটা পার্থক্য তৈরি করতে পারবেন। ফ্রি হ্যান্ড রাইটিংয়ে প্রচুর দক্ষতা অর্জন করতে হবে। নিয়মিত পত্রিকা পড়তে হবে ও সমসাময়িক বিষয় সম্পর্কে অবহিত থাকতে হবে।
জাগো নিউজ: বিসিএস ভাইবার প্রস্তুতি কেমন হবে?
ডা. মো. আমিনুল ইসলাম: বিসিএস পরীক্ষার ভাইবা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনি লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে ভাইবার জন্য বিবেচিত হবেন। বিসিএস ভাইবায় আত্মবিশ্বাস অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পূর্ণ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ভাইবা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। সমসাময়িক সব দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হবে। ড্রেসকোড মেনে ভাইবা পরীক্ষা দিতে হবে। ভাইবা পরীক্ষায় কোনো অপ্রাসঙ্গিক কথা বলা ও উত্তর দেওয়া যাবে না। ভাইবা পরীক্ষায় স্যাররা অনেক সময় বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্ন করে থাকেন ও সিচুয়েশন হ্যান্ডেলিং ক্যাপাসিটি যাচাই করে থাকেন। কোনো একটা না পারলে নার্ভাস হওয়া যাবে না। আত্মবিশ্বাস ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে পরিস্থিতি পার করে আসতে হবে।
জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
ডা. মো. আমিনুল ইসলাম: আমি একইসঙ্গে একজন চিকিৎসক ও সরকারি কর্মকর্তা। আমার অন্যতম লক্ষ্য একজন দক্ষ ও চৌকস চিকিৎসক হওয়া। একইসঙ্গে একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান অফিসার হওয়া। আমি অলরেডি মেডিসিন ও উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের পথে আছি। মেডিসিনে এফসিপিএস পার্ট-১ পাস করেছি। মেডিসিনে উচ্চতর ডিগ্রি সম্পন্ন করতে চাই। একজন দক্ষ কার্ডিওলজিস্ট হতে চাই।
এমএমএফ/এমআইএইচ/এসইউ/জিকেএস