ব্যাংকে চাকরিতে লিখিতের জন্য ভালো প্রস্তুতি জরুরি
আনোয়ার হোসেন জাবের বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘সহকারী পরিচালক’ পদে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তার জন্ম নোয়াখালীতে হলেও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। তার বাবা মো. শহীদ উল্যাহ সরকারি চাকরিজীবী ও মা আয়েশা আক্তার গৃহিণী। তিনি ২০০৯ সালে ঢাকা শিক্ষাবোর্ড ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি এবং ২০১১ সালে সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘সহকারী পরিচালক’ পদে কর্মরত। সম্প্রতি ব্যাংকে চাকরি পাওয়া, নতুনদের জন্য পরামর্শ ও ভবিষ্যৎ স্বপ্ন নিয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—
জাগো নিউজ: বাংলাদেশ ব্যাংকে সহকারী পরিচালক পদে চাকরি পেয়েছেন, আপনার অনুভূতি কেমন ছিল?
আনোয়ার হোসেন জাবের: স্বপ্নের চাকরি পাওয়ার অনুভূতি বর্ণনাতীত। দীর্ঘদিনের পরিশ্রম ও নানা প্রতিকূলতার পাহাড় ডিঙিয়ে একটি প্রত্যাশামাফিক চাকরি পাওয়ার অনুভূতি ছিল বিস্ময়, আনন্দ ও উচ্ছ্বাস দিয়ে মোড়া।
জাগো নিউজ: বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরির স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?
আনোয়ার হোসেন জাবের: বয়স বাড়ার পাশাপাশি জীবনের স্বপ্ন ও লক্ষ্যগুলোও পাল্টেছে। পরিবারের ইচ্ছা ছিল যেন চিকিৎসক হই। বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক পড়াশোনা শেষ করার পর থেকেই স্বপ্ন ছিল একটি সরকারি প্রথম শ্রেণির চাকরি পাওয়ার। স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে পঠিত বিষয়ের একটি বড় অংশ অর্থনীতি নিয়ে থাকায় সব সময় ইচ্ছে ছিল এমন কোথাও চাকরি করার, যেখান থেকে দেশের অর্থনীতির সঙ্গে বৃহৎ পরিসরে যুক্ত থেকে অবদান রাখতে পারি। সেই থেকে ব্যাংকে চাকরি করার স্বপ্ন দেখি।
জাগো নিউজ: বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি পাওয়ার গল্প শুনতে চাই, কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন?
আনোয়ার হোসেন জাবের: চাকরির পড়াশোনায় পরিশ্রমী হওয়ার পাশাপাশি কৌশলীও হতে হবে। ব্যাংকে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রাখবে গণিত ও ইংরেজি। অপ্রিয় হলেও সত্য, আমরা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা এ বিষয়গুলোয় দুর্বল। তাই চাকরির প্রস্তুতির শুরু থেকেই আমার চেষ্টা ছিল এ দুটি বিষয়ে নিজের দক্ষতা বাড়ানো। এ ছাড়াও বিগত প্রশ্ন বিশ্লেষণেও আমি বেশ গুরুত্ব দিতাম। এতে কী ধরনের প্রশ্ন আসতে পারে, সে সম্পর্কে বেশ ভালো ধারণা পেতাম।
জাগো নিউজ: আড়াল থেকে কেউ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে?
আনোয়ার হোসেন জাবের: বিশেষভাবে তেমন কেউ নেই। তবে বাবা-মায়ের প্রতি বিশেষভাবে ঋণী। কারণ তারা আমার ওপর বিশ্বাস রেখে চাপমুক্তভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন।
জাগো নিউজ: ব্যাংকে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া কি কাজে লেগেছে?
আনোয়ার হোসেন জাবের: সোশ্যাল মিডিয়ার ভালো খারাপ দুটো দিকই আছে। মূল পড়াশোনার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া কখনোই উপযুক্ত মাধ্যম নয়। তবে বিভিন্ন আপডেট তথ্যের জন্য ফেসবুকে কয়েকটি জবভিত্তিক পড়াশোনার গ্রুপে যুক্ত থাকা যেতে পারে। আমি যেহেতু চাকরির পাশাপাশি প্রস্তুতি নিয়েছি, সেজন্য বিভিন্ন সাম্প্রতিক সাধারণ জ্ঞানের জন্য ফেসবুক গ্রুপগুলো ছিল আমার মূল ভরসা।
জাগো নিউজ: ব্যাংক প্রিলি সম্পর্কে নতুনদের জন্য কী পরামর্শ দেবেন?
আনোয়ার হোসেন জাবের: নতুনদের অনেকের মধ্যেই প্রতিটি বিষয়ের জন্য কয়েকটি করে বই সংগ্রহ করে পড়ার প্রবণতা থাকে। আমার পরামর্শ থাকবে, বিভিন্ন বই থেকে কিছু কিছু না পড়ে একটি বই কয়েকবার পড়ে শেষ করা। এ ছাড়াও বিগত প্রশ্ন সমাধানের মাধ্যমেই প্রস্তুতি শুরু করা উচিত। এতে কী কী পড়তে হবে, সে সম্পর্কে একটি সম্যক ধারণা পাওয়া যায়।
জাগো নিউজ: ব্যাংক লিখিত প্রস্তুতি সম্পর্কে আপনার পরামর্শ কী?
আনোয়ার হোসেন জাবের: প্রিলি আপনাকে লিখিত পরীক্ষার টিকিট দিলেও মূলত চাকরি পাইয়ে দেবে লিখিত পরীক্ষা। ব্যাংকে প্রিলি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য খুবই কম সময় পাওয়া যায়। তাই প্রিলি ও লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি যুগপৎ ভাবে নেওয়া উচিত। লিখিত পরীক্ষায় বর্তমানে গণিত আর গতানুগুতিক লেখনী চাকরি পাওয়ার নিশ্চয়তা দেবে না। তাই বেশি বেশি গণিতচর্চার পাশাপাশি ইংরেজি লেখার মনোন্নয়নেও নজর দিতে হবে। সে লক্ষ্যে ফ্রি হ্যান্ড রাইটিং চর্চা, ভোকাব্যুলারি সমৃদ্ধ করা, ইংরেজি সংবাদপত্র পাঠ ও তা হতে অনুবাদ অনুশীলন করা এবং অর্থ-বাণিজ্য বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে জোর দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, চাকরি পাওয়ার পূর্বশর্ত হলো নিজের বৈচিত্র্যময় লেখনীর মাধ্যমে অন্য দশটা খাতার তুলনায় নিজের খাতাটিকে অনন্য করে তোলা। লিখিত পরীক্ষায় ১২০ মিনিটে ২০০ নম্বরের উত্তর করতে হয়। তাই পরীক্ষার হলে টাইম ম্যানেজমেন্টে কৌশলী হতে হবে। কোন প্রশ্নে কত সময় খরচ করবেন, তা প্রশ্ন পেয়ে ঠিক করে নিতে হবে। বর্তমানে লিখিত পরীক্ষায়ও সাধারণ জ্ঞান প্রশ্ন আসে। তাই প্রিলির পরও বাণিজ্য, অর্থনীতি, খেলাধুলা, জলবায়ু, সাম্প্রতিক দেশীয়-বৈশ্বিক ঘটনাবলী, বিভিন্ন ব্যাংকিং টার্ম ও সংজ্ঞা সম্পর্কে প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।
জাগো নিউজ: ব্যাংক ভাইবায় কী কী জানা প্রয়োজন?
আনোয়ার হোসেন জাবের: ভাইবায় ২৫ মার্ক থাকলেও এর গুরুত্ব যে একেবারেই নেই, তা কিন্তু নয়। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ১-২ মার্কের ব্যবধানও চূড়ান্ত সাফল্য পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বড় নিয়ামক হয়ে দাঁড়ায়। ব্যাংক ভাইবায় নিজের পঠিত বিষয়ের পাশাপাশি নিজের সম্পর্কে, নিজ জেলা, বিশ্ববিদ্যালয়, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু, ব্যাংকিং ও অর্থনীতির বিভিন্ন টার্মস সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখতে হবে।
জাগো নিউজ: কেন্দ্রীয় ব্যাংকার হিসেবে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
আনোয়ার হোসেন জাবের: কেন্দ্রীয় ব্যাংকার হিসেবে কাজের ক্ষেত্র ও সুযোগ দুটোই অনেক বিস্তৃত। চেষ্টা থাকবে ফরওয়ার্ড লুকিং, প্রোঅ্যাক্টিভ ও ক্রমাগত সময়ের সঙ্গে পরিবর্তনশীল একজন সেন্ট্রাল ব্যাংকার হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা এবং মেধা, নিষ্ঠা, দক্ষতা ও অধ্যবসায় দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক তথা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও উঁচুতে নিয়ে যাওয়া।
এসইউ/জিকেএস