ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েও ব্যাংকার হলেন জুনাঈদ

মো. জুনাঈদ ইসলামের জন্ম চাঁদপুর জেলার মতলবের নায়েরগাঁও গ্রামে। বাবা মো. মিজানুর রহমান অবসরপ্রাপ্ত রেলওয়ে কর্মকর্তা। মা রাবেয়া বসরী আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশে (আইসিডিডিআরবি) চাকরি করতেন। জুনাঈদ ২০০৫ সালে কুমিল্লার দোল্লাই নোয়াবপুর আহছান উল্যাহ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০০৭ সালে চট্টগ্রামের বিএএফ শাহীন কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্রিমিনোলজিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকে ‘অফিসার (জেনারেল)’ পদে কর্মরত। জুনাঈদ বাংলাদেশ ব্যাংক ছাড়াও সোনালী ব্যাংক লিমিটেড ও রূপালী ব্যাংক লিমিটেডে চাকরি পেয়েছিলেন। সম্প্রতি তার ব্যাংকে চাকরি, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—

জাগো নিউজ: আপনার শৈশবের গল্প দিয়ে শুরু করতে চাই—
জুনাঈদ ইসলাম: আমার জন্ম চাঁদপুরের মতলবে। নায়েরগাঁও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩য় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ি। তারপর আমার নানা বাড়ি কুমিল্লায় চলে যাই। ওখানে কৈকরই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হই। প্রাথমিকের পাঠ শেষ করে দোল্লাই নোয়াবপুর আহছান উল্যাহ উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হই। মাঝখানে এক বছর গল্লাই আবেদা-নূর উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে আবার আগের প্রতিষ্ঠানে ফিরে আসি। আমার উচ্চ বিদ্যালয় জীবনে রোল নম্বর কখনো এক থেকে তিনের বাইরে যায়নি। পড়াশোনায় একটু সচেতন ছিলাম। পাশাপাশি ছোটবেলায় প্রচুর ক্রিকেট খেলতাম। আমি আন্তঃবিদ্যালয় ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় নিজের বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব করেছি। এ ছাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ার সময় বিভিন্ন সময়ে বির্তকে অংশগ্রহণ করে প্রচুর পুরস্কার পেয়েছি।

জাগো নিউজ: আপনার পড়াশোনায় কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল কি না?
জুনাঈদ ইসলাম: প্রতিবন্ধকতা একদমই ছিল না। বাবা-মা চাকরি করায় আর্থিকভাবে যথেষ্ট স্বচ্ছল ছিলাম। তবে আমার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে রেজাল্ট আশানুরূপ হয়নি। সিজিপিএ ২.৭৪ নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করতে পেরেছিলাম। আমার যেহেতু রেজাল্ট ভালো ছিল না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ইঞ্জিনিয়ারিং ট্র্যাক চেঞ্জ করে ফেলব। আমি আর ইঞ্জিনিয়ারিং চাকরির জন্য চেষ্টা করিনি। ফলে অন্য বিষয়ে স্নাতকোত্তর করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তারপর ব্যাংক আর বিসিএসের জন্য চেষ্টা করতে থাকি।

জাগো নিউজ: ব্যাংকে চাকরির স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?
জুনাঈদ ইসলাম: সত্যি বলতে, ব্যাংকে জব করব সেটা ভাবিনি। একটি নামকরা কোম্পানিতে ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি অফিসার (এমটিও) হিসেবে কর্মরত ছিলাম। পরে সিদ্ধান্ত নিলাম সরকারি জবের প্রস্তুতি নেব। বিসিএসকে টার্গেট করে প্রস্তুতি নিতে থাকি। যেহেতু বিসিএসে সময় লাগছিল আর জবও দরকার ছিল, তাই সরকারি ব্যাংকে পরীক্ষা দিলাম। আমার এক বন্ধু কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকার হিসেবে তার সম্মান আমাকে যথেষ্ট আকৃষ্ট করেছিল।

জাগো নিউজ: ব্যাংকে চাকরি পাওয়ার গল্প শুনতে চাই, প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছেন?
জুনাঈদ ইসলাম: ব্যাংকের জন্য আলাদাভাবে প্রস্তুতি নিতে হয়নি। আমার বিসিএসের প্রস্তুতি ব্যাংকে কাজে লাগিয়েছি। তা ছাড়া ছোটবেলা থেকে ইংরেজিতে ভালো দখল থাকায় অনুবাদ খুব দ্রুত এবং নির্ভুল লিখতে পারতাম। বিসিএস রিটেনের প্রস্তুতি থাকায় বাংলা এবং ইংরেজি ফোকাস রাইটিং খুব ভালো ছিল। আমি লেখাকে তথ্যবহুল করার চেষ্টা করতাম। একটি আলাদা খাতা বানিয়েছিলাম; যেখানে পত্রিকা, ইন্টারনেট ও বিভিন্ন সোর্স থেকে ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ডাটা ও উদ্ধৃতি লিখে রাখতাম। পরীক্ষার আগ মুহূর্তে চোখ বুলিয়ে যেতাম, যাতে সঠিক ও নির্ভুলভাবে খাতায় প্রয়োগ করতে পারি। যেহেতু দরখাস্ত বা চিঠি লেখার অনেক নিয়ম রয়েছে, তাই যখন যে নিয়ম পেতাম তা মোবাইলে ছবি তুলে সংরক্ষণ করতাম।

জাগো নিউজ: পর্দার আড়াল থেকে কেউ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে?
জুনাঈদ ইসলাম: মা-বাবা, দুই মামা এবং খালামণি আর্থিকভাবে অনেক সাপোর্ট দিয়েছেন। যদিও আমার ইঞ্জিনিয়ারিং রেজাল্ট ভালো ছিল না। তবুও আমার আম্মার বিশ্বাস ছিল, যেদিন থেকে তার ছেলে ট্রাই করবে, সেদিন থেকে ভালো কিছু হবে। আমি যখন স্নাতকোত্তর করতে আসি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে; তখন আমার অনেক সহপাঠী সরকারি চাকরি করত। তাদের সম্মান দেখে অনুপ্রাণিত হতাম সরকারি চাকরি করার। হতাশ হয়ে গেলে তাহাজ্জুদ পড়ে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করতাম। তাহাজ্জুদ দোয়া কবুলের সর্বশ্রেষ্ঠ সময়।

জাগো নিউজ: নতুন যারা ব্যাংকের চাকরিতে আসতে চান, তাদের জন্য কী পরামর্শ থাকবে?
জুনাঈদ ইসলাম: ক্যারিয়ার গড়ার জন্য ব্যাংকে চাকরি বর্তমানে নিঃসন্দেহে একটি জনপ্রিয় পেশা। তাই প্রস্তুতির বেলায়ও কিছুটা কৌশল অবলম্বন করলেই লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে। একটা সময় ব্যাংকের পরীক্ষার প্রস্তুতি বলতে সবাই গণিত আর ইংরেজিকেই বুঝত। কিন্তু বর্তমানে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ক্ষেত্রে কম্পিউটার, সাধারণ জ্ঞানও সমান গুরুত্ব বহন করে। আবার লিখিত পরীক্ষায় শুধু গণিতের উপর নির্ভর না করাই উত্তম। গণিতের পাশাপাশি ট্রান্সলেশন, ফোকাস রাইটিংকেও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি।

জাগো নিউজ: ব্যাংকার হিসেবে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
জুনাঈদ ইসলাম: সরাসরি মানুষের সেবা করার মতো পেশায় আছি। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকে থাকার সুবাদে দায়িত্বটা একটু বেশি। সততার সাথে সব সময় এ দায়িত্ব পালন করতে চাই। নিজের জায়গা থেকে মানুষকে সব সময় সাহায্য করতে চাই।

এসইউ/জিকেএস