স্বপ্ন দেখি বলেই স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে : সুমাইয়া জামান
সুমাইয়া জামান। পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন সাংবাদিকতা। একইসঙ্গে সমাজ উন্নয়নে নিজেকে ব্যস্ত রাখেন সবসময়। ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে এখন আইন বিষয় নিয়ে পড়ছেন ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনে। ভবিষ্যতে ব্যারিস্টার হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে তার। খুব তাড়াতাড়ি ব্যারিস্টারি পড়তে ইউকে যাচ্ছেন।
সুমাইয়া জামান ১৯৯১ সালে বিটিভি এবং বাংলাদেশ বেতারের কুরআন শিক্ষার আসর দিয়ে ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে কাজ শুরু করেন। তারপর ২০১০ সালে চ্যানেল ওয়ান থেকে কর্মজীবনে যাত্রা। এরপর একে একে মোহনা, ইনডিপেনডেন্ট, সময় টিভি এবং বর্তমানে রেডিও ধ্বনিতে কাজ করছেন। শুধু নারীদের জন্য নিজেই চালু করেছেন একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। এছাড়াও রোটারি ইন্টারন্যাশনাল, উইমেন্স এন্টাপ্রেনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ প্রগ্রেসিভ উইমেন্স সোসাইটির মত বিভিন্ন সামাজিক, কল্যাণমূলক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত আছেন তিনি।
নিজের কাজের গতি-প্রকৃতি ও পেশার ভবিষ্যৎ ভাবনা নিয়ে জাগো জবসের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন গোলাম রাব্বী।
জাগো জবস : মিডিয়া পেশায় যোগসূত্র স্থাপন করলেন কীভাবে?
সুমাইয়া জামান : আসলে পড়াশোনা শুরু করার পরপরই মানে সেই ছোটবেলা থেকেই মিডিয়ার সাথে আমি যুক্ত। আর আমার পড়াশোনার সঙ্গে বেশ যোগসূত্র রয়েছে মিডিয়া পেশার। কেননা আপনি খেয়াল করবেন সাহিত্য ও আইন- এ দু’টো বিষয়েরই অনেক টপিক মিডিয়ায় বেশ ব্যবহৃত হয়।
জাগো জবস : মিডিয়ার আগে অন্য কোন পেশায় যোগদান করেছিলেন?
সুমাইয়া জামান : ছোটবেলা থেকে মিডিয়াতে কাজ করতে গিয়ে একটা ভালবাসা তৈরি হয়েছে। বড় হয়ে কলেজ জীবন থেকে শিক্ষকতা করতাম। তারপর ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় বাবার ব্যবসায় সহযোগিতা করতাম। পাশাপাশি সাংস্কৃতিক ও সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলাম, তবে ভার্সিটি শেষ করে পুরোপুরি মিডিয়াতে কর্মজীবন শুরু করি। কর্মজীবনে প্রবেশ করেও পড়াশোনা ছাড়তে পারিনি আর সামাজিক কার্যক্রমও চলছে পাশাপাশি।
জাগো জবস : কার অনুপ্রেরণায় এই পেশাকে ভালোবাসা?
সুমাইয়া জামান : পরিবার থেকেই অনুপ্রেরণাটা ছিল। কিন্তু বড় হয়ে যখন পেশা হিসেবে গ্রহণ করলাম- পরিবার থেকে অনেকেই বিরোধিতা করতে শুরু করলো। কিন্তু যখন দেখল যে আমি অনেক ভালো করছি, অনেক সম্মান পাচ্ছি, তখন আবার তারা আমাকে উৎসাহ দেওয়া শুরু করল।
জাগো জবস : আর কী কী বিষয়ের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন?
সুমাইয়া জামান : রেডিওতে দুইটা টকশো করি। একটি এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার এবং ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি শো করি। পাশাপাশি আমার অনলাইন নিউজ পোর্টালটা গুছিয়ে আনার চেষ্টা করছি। সুবিধাবঞ্চিত নারী ও শিশুদের মৌলিক চাহিদা নিয়ে কাজ করি। ক্ষুদ্র ও বৃহৎ নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করি। এছাড়া বিপিডব্লিউএসের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।
জাগো জবস : একজন নারী হিসেবে কীভাবে একটা ভিন্ন আধুনিক টাইপের প্রফেশনে যুক্ত হলেন?
সুমাইয়া জামান : সব নারীরাই স্বপ্ন দেখে, কেউ স্বপ্ন পূরণ করতে পারে আবার কেউ পারে না। তবে স্বপ্ন যদি আমরা দেখি তাহলে স্বপ্নের কিছুটা কাছাকাছি হলেও তো যেতে পারব। কিন্তু আমরা কেউ কি কখনো চিন্তা করতে পেরেছিলাম যে, নারীরা মা হওয়া থেকে শুরু করে আকাশেও উড়বে। মূলত স্বপ্ন দেখি বলেই আজ আমাদের স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে এবং হবে।
জাগো জবস : কাজ করতে গিয়ে কখনও কি বাধার সম্মুখীন হয়েছেন?
সুমাইয়া জামান : নারী হিসেবে সবাই বাধার সম্মুখীন হয়; সেটা মিডিয়াতেই বলেন, আর অন্য যেকোনো পেশাই বলেন। তবে সব বাধা পেরিয়েই সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের অনেকেই নারী এবং অনেক বাধাকে জয় করতে হয়েছে তাদের। সে তুলনায় আমাদেরকে তো কমই পার করতে হয়েছে। কে কি বললো সেটা নিয়ে মাথা ঘামিয়েছি কম। যখন দেখি যে সবাই শুধু বলে কিন্তু কেউ এগিয়ে আসে না সাহায্য করতে; তখন বুঝে গেছি আসলে আমাকেই সব বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে হবে।
জাগো জবস : আপনার জীবন থেকে অন্য নারী কী শিখতে পারে?
সুমাইয়া জামান : শুধু আমি না, যেসব নারী বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত আছে তাদের সবার কাছ থেকেই কিছু না কিছু শেখার আছে। তবে যে নারীরা গৃহিণী তাদের প্রতি আমার সবচেয়ে বেশি শ্রদ্ধাবোধ। কারণ সংসার সামলানো পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন পেশা।
জাগো জবস : এ বিষয়ে আপনার কোনো প্রশিক্ষণ রয়েছে?
সুমাইয়া জামান : আমার বিশেষ কোনো প্রশিক্ষণ নেই। কাজ করতে করতেই কাজ শেখা। এছাড়া কাজের প্রতি ভালোবাসা, নিষ্ঠা আর সম্মান ছিল বলেই এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি। তবে একটা বিষয় আমি মানি যে, সব কিছু থেকেই কিছু না কিছু শেখার আছে। আর শিখতে গিয়ে হোচট না খেলে তো কোনো কিছু শেখাই হয় না।
জাগো জবস : অতীত ও বর্তমান সময়ের মধ্যে পার্থক্যটুকু কেমন উপভোগ করছেন?
সুমাইয়া জামান : গণমাধ্যমে কর্মজীবন শুরুর আগে জীবনটাকে খুব উপভোগ করেছি। তবে এখন অনেক আইসোলেটেড লাইফ লিড করি। কারণ, আমার প্রত্যেকটি আচরণ বা কথা, আমার যারা ভক্ত রয়েছে তাদের জন্য যেন উপযুক্ত আদর্শ হতে পারে এবং অনুকরণীয় হতে পারে, সে জন্য চেষ্টা করি। ভক্তদের ভালোবাসা আর উৎসাহ আর সাহসের কারণেই আজ আমি এতদূর। এখন নিজের জীবন না, ভক্তদের ভালোবাসাই বেশি উপভোগ করি।
জাগো জবস : যারা আপনার মতো হতে চান- তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
সুমাইয়া জামান : যারা এই পেশায় আসতে চান, তারা যেন শুধু টাকা বা খ্যাতি অর্জনের জন্য না আসেন। ভালোবেসে এই পেশায় আসতে হবে। কারণ ‘উইথ রেসপেক্ট কামস মানি অফ ফেইম’। তরুণ প্রজন্মকে আমি সাধুবাদ জানাই। আশা করি তারা আমাদের চাইতে ভালো করবে।
জাগো জবস : বেশি মিডিয়া হওয়ার বিষয়টাকে কীভাবে দেখেন এবং এ থেকে উত্তরণের উপায় কী?
সুমাইয়া জামান : এটা একটা ভালো দিক। অনেকে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন। নতুন যারা আসছেন তারা অনেক ভালো করছেন। তারপরও আমি বলবো প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। ভাষাগত দক্ষতা এবং উপস্থাপনা শৈলীর সাথে শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং উপস্থিত জ্ঞান বা সাধারণ জ্ঞানও বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
জাগো জবস : সফলতা বলতে আপনি বোঝেন?
সুমাইয়া জামান : আমার কাছে বাধা অতিক্রম করাটাই সফলতা। কারণ যার সফলতা যত বেশি তাকে তত বেশি বাধা অতিক্রম করতে হয়েছে। আমরা শুধু সফলতটাই দেখি, কষ্টটা দেখি না।
জাগো জবস : জীবনে শীর্ষ পর্যায়ে যাওয়ার উপায় কী?
সুমাইয়া জামান : যারা শীষ পর্যায়ে যেতে চান তাদের কষ্টের পরিমাণটাও শীর্ষ পর্যায়েরই হবে। তাই দেরি না করে এখনই যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ুন। কেননা কবি বলে গেছেন, ‘এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।’
জাগো জবস : আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
সুমাইয়া জামান : আপনাকে ও জাগো জবসকে অনেক ধন্যবাদ।
এসইউ/আরআইপি