কন্টেন্ট ক্রিয়েশনে সফল নিয়ন
বাংলাদেশে কনটেন্ট ক্রিয়েশনে এক অনন্য নাম সিহাব হাসান নিয়ন। ‘নিয়ন অ্যান্ড অন’ দিয়েই যাত্রা শুরু তরুণ এ কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের। খেলাধুলার চমৎকার বিশ্লেষণে প্রথমেই মন কেড়েছেন দেশের তরুণদের। মন খুলে কথা বলেন সমসাময়িক ইস্যুতেও। তাই এখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে তিনি। সম্প্রতি তার কন্টেন্ট ক্রিয়েশনের যাত্রা নিয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বেনজির আবরার, সহযোগিতা করেছেন হাসান মাহমুদ সম্রাট—
জাগো নিউজ: আপনার ছোটবেলা কীভাবে কেটেছে?
সিহাব হাসান নিয়ন: আমার ছোটবেলা কেটেছে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের একটু বাইরে। আমার পড়াশোনা আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলে। প্রচুর খেলাধুলাপ্রেমী ছিলাম। দেখা যেত, টানা পাঁচ দিনের টেস্ট ম্যাচ দেখতাম তখন। সারাদিন খেলা দেখার প্রতি নেশা ছিল। তখন তো ইউটিউবে দেখার সুযোগ ছিল না। তাই সারাদিন টিভি দেখার জন্য বাসায় অনেক বকা খেতাম। ছোটবেলায় খুব দুষ্টু, চঞ্চল ও খেলার জন্য পাগল ছিলাম। তবে পড়াশোনায় মোটামুটি ভালোই ছিলাম।
জাগো নিউজ: কন্টেন্ট ক্রিয়েশনে কীভাবে এলেন?
সিহাব হাসান নিয়ন: যদি বলি, কন্টেন্ট ক্রিয়েশনে অনেক প্ল্যান করে এসেছি, তাহলে মিথ্যা বলা হবে। মানুষজন চিনবে, ভালো লাগবে—এ চিন্তা থেকেই ভিডিও বানানো শুরু। প্রথম ভিডিও বানানোর পর মানুষের অনুপ্রেরণা পেয়েছি। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, আমার কন্টেন্টে যদি কোনো মানুষ আনন্দ পান, মজা পান—এটাকে আমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া বলে মনে করি।
জাগো নিউজ: প্রথম ভিডিও বানানোর অভিজ্ঞতা কেমন?
সিহাব হাসান নিয়ন: প্রথম ভিডিও বানিয়েছিলাম ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। প্রথমদিকে সিরিয়াস টাইপ ভিডিও বানানোর চিন্তা করছিলাম। কেননা আমি খুব একটা মজার মানুষ ছিলাম না। মানে ন্যাচারালি ওই রকম মজার মানুষ না। একদিন আমার ক্যাম্পাস (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে বাসে করে মিরপুরের বাসায় যাচ্ছি। সেদিন রাস্তায় ভয়ানক জ্যাম। ভয়ানক জ্যামে অতিষ্ঠ হয়ে সেদিন প্রথম ভিডিও বানাই। টাইটেল দিয়েছিলাম ‘The reason of our frustration’। মানুষ কি চিন্তা করবে, না করবে—ভাবতে ভাবতে আপলোড করে ফেলি। এরপর তো মানুষের পছন্দ হলো, এভাবেই শুরু।
জাগো নিউজ: কন্টেন্ট ক্রিয়েশনের পাশাপাশি আর কী করছেন?
সিহাব হাসান নিয়ন: পড়াশোনা করছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে বিতর্ক করেছি অনেকটা সময়। খুব সম্প্রতি ‘হাউস নাম্বার নাইন্টি সিক্স’ নামে একটি নাটকে অভিনয় করেছি। যদিও অভিনয়ে ক্যারিয়ার গড়ার ইচ্ছা নেই। এছাড়া বিকাশ, এয়ারটেল, টি স্পোর্টস, স্কিটোসহ অনেকগুলো কোম্পানির সঙ্গে কাজ করেছি। পাশাপাশি টেন মিনিটস স্কুলে এফিলিয়েশন প্রোগ্রামের মার্কেটিং ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছি।
জাগো নিউজ: যারা কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হতে চান—তাদের কী পরামর্শ দেবেন?
সিহাব হাসান নিয়ন: আমি এখনো অনেক কিছু শিখছি। একদম নতুন এ জগতে। তবুও যদি বলি, নিজের স্বকীয়তা ঠিক রাখতে বলবো। ভালো ভিডিও বানালে একটি চাপ অনুভূত হয়। নিজের আইডেন্টেটি হারিয়ে ফেললেই কিন্তু শেষ। ভিডিওর ভিউয়ার্স বাড়বে-কমবে, কিন্তু নিজের স্বকীয়তা ধরে রাখতে হবে। নিজের কাজের প্রতি সৎ থাকতে হবে।
জাগো নিউজ: নিজেকে ইনফ্লুয়েন্সার মনে করেন?
সিহাব হাসান নিয়ন: আমি নিজেকে ইনফ্লুয়েন্সার মনে করি না। তবে একটি বিশাল সংখ্যক মানুষের কাছে আমরা যারা কন্টেন্ট ক্রিয়েট করি, তাদের কথা হয়তো কিছু মানুষজন শুনবে, মানবে—এটা বলছি না; তবে শুনবে। আমার কাছে মনে হয়, ভালো ইনফ্লুয়েন্সার হওয়া মুশকিল। তবে ঘৃণা আপনি যত কম ছড়াতে পারেন, ততই ভালো।
জাগো নিউজ: পরিবার থেকে কেমন সহযোগিতা পেয়েছেন?
সিহাব হাসান নিয়ন: আমি এখন পর্যন্ত যতটুকু এসেছি, সবটুকুই আমার পরিবারের জন্য। আমার বাবা- মা, ভাই-বোন সব সময় সহযোগিতা করেছেন। আমার যে কোনো ভিডিও হলে শুরুতে আমার বাবা শেয়ার করে দেন। সেদিন আমার মা বলছিলেন, ‘তোমার বাবা আর আমি তো দোয়া করতেছিলাম বাংলাদেশ যেন জিতে যায়। তাহলে তুমি একটা ভালো ভিডিও বানাতে পারবা।’ সব সময় আমার পাশে ছিলেন তারা। আমার ছোট ভাই সব সময় আমার ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ডে থাকে। এটা আসলে আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া।
জাগো নিউজ: আগামী পাঁচ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
সিহাব হাসান নিয়ন: আমার ইচ্ছা আছে সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার। আর বাবার খুব ইচ্ছা আমি দেশের জন্য কিছু করবো। একজন সরকারি কর্মকর্তা হওয়া খুবই সম্মানের ব্যাপার। আমি এখনো আশা করি স্বপ্নটা পূরণ করার। কন্টেন্ট ক্রিয়েশন যদি ততদিন করে যেতে পারি—এটাই আমার সার্থকতা।
জাগো নিউজ: বাংলাদেশে কন্টেন্ট ক্রিয়েশনের সম্ভাবনা নিয়ে আপনার অভিমত কী?
সিহাব হাসান নিয়ন: বাংলাদেশে কন্টেন্ট ক্রিয়েশন ইন্ড্রাস্ট্রি এখনো নতুন। শুধু একটি কথাই বলবো, কন্টেন্ট ক্রিয়েটররাও মানুষ। যারা ভিডিও বানান; তারাও মানুষ। যারা অনলাইনে আসেন; তারাও মানুষ। যাদের আপনারা টিভির পর্দায় দেখেন; তারাও মানুষ। স্ক্রিনের ওপারে কোনো রোবট নেই। যার আবেগ-অনুভূতি নেই, দুঃখ নেই। আমরা-তোমরা মিলেই আমরা। আমাদের ওপর একটু সহজ হওয়ার অনুরোধ রইলো। আমরা এখনো শিখছি, আমাদের ভুলগুলো ধরিয়ে দিলে খুব ভালো করবো।
এসইউ/জিকেএস