প্রথম বিসিএসেই প্রশাসন ক্যাডারে উত্তীর্ণ হন রুপম
রুপম দাস ৩৭তম বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তিনি জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা অখিল চন্দ্র দাস প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং মা রতনা সরকার গৃহিণী। আক্কেলপুর এফইউ পাইলট স্কুল থেকে এসএসসি, বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন।
বর্তমানে তিনি ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মরত। সম্প্রতি তার বিসিএস জয়, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো. আনিসুল ইসলাম—
জাগো নিউজ: আপনার ছোটবেলা কেমন কেটেছে?
রুপম দাস: ছোটবেলা খুবই ভালো কেটেছে। ছোট থেকেই স্বাধীনতা প্রিয় ছিলাম। নিজের কাছে যা ভালো লাগতো, সেটাই করতাম। ঘুড়ি ওড়ানো প্রিয় ছিল। পড়াশোনার পাশাপাশি কুইজ, বিতর্ক ও রচনা প্রতিযোগিতায় প্রচুর অংশগ্রহণ ছিল। ক্লাস সেভেনে থাকতে ‘বাল্যকাল’ নিয়ে রচনা লিখে উপজেলা ও জেলায় প্রথম হয়েছিলাম। অনেক সার্টিফিকেট ও পুরস্কার পেয়েছি। সবাই বলতেন, ভালো ছাত্র। প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাসের প্রথম স্থান বজায় রেখে এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছি।
জাগো নিউজ: পড়াশোনায় কোন প্রতিবন্ধকতা ছিল কি-না?
রুপম দাস: পড়াশোনায় কোন প্রতিবন্ধকতা ছিল না। তবে বাবা-মার ইচ্ছে ছিল মেডিকেলে পড়ানোর। মেডিকেলে ০.৫০ এর কারণে চান্স পাইনি।
জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?
রুপম দাস: অনেক চেষ্টা করেও মেডিকেলে চান্স পাইনি। তখন অনেকটা হতাশ হয়ে পড়ি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েও মেনে নিতে পারছিলাম না। ভবিষ্যতে ভালো কিছু করবো বলে বাবা-মাকে সান্ত্বনা দিলাম। যখন ২য় বর্ষে ছিলাম, একটি বিসিএসের রেজাল্ট দিয়েছিল। তখন জগন্নাথ হলের অনেকেই ক্যাডার পান। এসব থেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে ৩য় বর্ষ থেকে সীমিত পরিসরে বিসিএসের প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। বিসিএস দেওয়ার স্বপ্ন দেখি।
জাগো নিউজ: আপনার বিসিএস যাত্রার গল্প কেমন ছিল?
রুপম দাস: একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি বিসিএসের প্রস্তুতি নেওয়াটা একটু জটিল ছিল। তারপরও চেষ্টা করেছি। বিজ্ঞানের ছাত্র হওয়ায় বিজ্ঞান ও গণিত নিয়ে তেমন সমস্যা ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার শুরু থেকে ইংরেজি পত্রিকা বেশি পড়তাম। যার কারণে বিজ্ঞান, গণিত এবং ইংরেজিতে মোটামুটি দক্ষতা ছিল। ছোটবেলায় কুইজ ও রচনা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুবাদে বাংলা সাহিত্যের অনেক উপন্যাস পড়েছি। তবে সাধারণ জ্ঞান নিয়ে বেশ সমস্যা ছিল। বিজ্ঞানের ছাত্রদের কাছে সাধারণ জ্ঞান বিষয়টা বরাবরই অপ্রিয়। ৩য় বর্ষ থেকে সাধারণ জ্ঞান বিষয়টা নিয়ে পড়াশোনা শুরু করি। ছয়-সাত মাস কঠোর পড়াশোনার পর এই অপ্রিয় বিষয়টা আমার প্রিয় হয়ে দাঁড়ায়। চতুর্থ বর্ষে উঠে প্রচুর একাডেমিক চাপ ছিল। চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা দিয়ে ২০১৬ সালে ১৯ ফেব্রুয়ারি ভাইবা দেই। আর ২৯ ফেব্রুয়ারি ৩৭তম বিসিএসের প্রজ্ঞাপন আসে। তখন অ্যাপিয়ার সার্টিফিকেট দিয়ে আবেদন করি। সাথে সাথে মাস্টার্স শুরু হয়ে যায়।
তখন হতাশায় পড়ে যাই, বিসিএস করবো না-কি মাস্টার্স! ভাবি বিসিএসের জন্য মাস্টার্স ছেড়ে দেবো, অনেক দিনের ব্যাপার। তখন বিসিএসের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেই। পাশাপাশি মাস্টার্সের ক্লাসগুলো চালিয়ে যাই। এরমধ্যে ৩৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হই। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিসিএস লিখিতর একদিন পর ছিল মাস্টার্সের ফাইনাল পরীক্ষা। ফর্ম ফিলাপের একটা প্রেসার ছিল। আমার জন্য বিষয়টি খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল। যাই হোক, লিখিত পরীক্ষা মোটামুটি ভালো হলো। তখন আত্মবিশ্বাস ছিল দুর্ঘটনা না হলে ক্যাডার পাবো। গণিতে ৫০ এর মধ্যে ৪৮ নম্বর কারেক্ট করেছিলাম। মাস্টার্সের কিছুদিন পর লিখিতের রেজাল্টে উত্তীর্ণ হই। ভাইবার জন্য যখনই সময় পেতাম টুকটাক পড়তাম। মোটামুটি ভালো প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। ভাইবা দেওয়ার কিছুদিন পর পূর্ণাঙ্গ ফলাফল এলো। ২০১৮ সালের ১২ জুন প্রশাসন ক্যাডারে জাতীয় মেধাক্রমে ৬০তম স্থানে আমার নাম দেখতে পেলাম। সেদিন খুব অন্যরকম ভালো লেগেছিল।
জাগো নিউজ: কারো কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন কি?
রুপম দাস: আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা হলো বাবা-মা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম থেকেই তারা আমাকে সাহস দিয়ে আসছেন। তাছাড়া জগন্নাথ হলে বড় বড় ক্যাডাররা আসতেন। তাদের দেখে অনুপ্রেরণা পেয়েছি।
জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
রুপম দাস: পরিকল্পনা বলতে, বর্তমান সরকারের ‘ভিশন ২০৪১’র একটি পার্ট হতে চাই। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ও সাধারণ জনগণের জন্য কাজ করতে চাই।
জাগো নিউজ: যাদের স্বপ্ন বিসিএস, তাদের সম্পর্কে কী বলবেন?
রুপম দাস: প্রস্তুতি যদি গোছানো হয়, তবে বিসিএস কোন কঠিন পরীক্ষা নয়। বিসিএসে সাধারণ নবম-দশম ও ইন্টারমিডিয়েটের প্রশ্নগুলো বেশি থাকে। সব সময় পড়াশোনায় থেকে ভালো প্রস্তুতি নিলে ভালো ফলাফল আসবেই। তবে গণিত ও ইংরেজিতে ভালো প্রস্তুতি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
জাগো নিউজ: সম্প্রতি করোনা দুর্যোগে আপনার ভূমিকা কী?
রুপম দাস: করোনায় বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসি স্যারের নিদর্শনায় মাস্ক বিতরণ ও মাস্ক পরায় উদ্বুদ্ধ করি। দরিদ্র ও অসহায় মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধে কাজ করি ও বাজার মনিটরিং করি। তৃতীয় লিঙ্গের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করি। লজ্জায় যারা চাইতে পারেন না, তাদের জন্য করোনা সেল খুলি। করোনা সেলে ভুক্তভোগী ফোন দিলে বাসায় ত্রাণ পৌঁছে দেই।
এসইউ/জিকেএস