বাংলাদেশ পুলিশে নারীদের সম্মান বেশি : এসপি রীনা
নাবিলা জাফরিন রীনা। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও এলাকায় তার জন্ম। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করেছেন। ২১তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে ২০০৩ সালের জুন মাসে এএসপি হিসেবে যোগ দেন বাংলাদেশ পুলিশে। দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন সিআইডিতে। বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকা রেঞ্জের পুলিশ সুপার (ডিসিপ্লিন অ্যান্ড প্রসিকিউশন) হিসেবে।
সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে চ্যালেঞ্জিং এ পেশার ইতিবাচক দিক নিয়ে কথা বলেছেন রীনা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এস কে শাওন—
জাগো নিউজ: পুলিশে কেন এলেন?
নাবিলা জাফরিন রীনা: আমার ইচ্ছেগুলোকে ইউটিলাইজ করতে পারবো। আমার ইচ্ছেগুলোকে কাজে লাগাতে পারবো। মানুষের সেবা করতে পারবো। এজন্যই পুলিশে আসা। তাছাড়া আমার বাবারও খুব ইচ্ছে ছিল আমি পুলিশ হবো।
জাগো নিউজ: বাবার ইচ্ছার কারণ—
নাবিলা জাফরিন রীনা: আমার বাবা কোনো একটি কাজে একবার গাজীপুর গিয়েছিলেন। তখন গাজীপুরের এসপি ছিলেন ইয়াসমিন গফুর। বাবা দেখে এলেন পুলিশের পোশাক পরা একজন নারী এসপির কত সম্মান। তখন থেকেই বাবার খুব ইচ্ছা যে, তার মেয়েও একদিন এসপি হবে। এজন্য বিসিএসের ফরম পূরণের সময় আমি প্রথম চয়েস দিয়েছিলাম পুলিশ।
জাগো নিউজ: পুলিশে কর্মজীবনের আদ্যোপান্ত জানতে চাই—
নাবিলা জাফরিন রীনা: প্রথমে একবছরের ট্রেনিংয়ের জন্য রাজশাহীর শারদায় চলে গেলাম। পরে সিরাজগঞ্জে ৬ মাসের প্রবেশনার ট্রেনিং। তারপর পোস্টিং হলো সিআইডি ডিটেক্টিভ ট্রেনিং স্কুলে। সেখানে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ছিলাম। তারপর মিশনে গেলাম। ফিরে এসে ২০০৯ সালে এসপি অ্যাডমিন হিসেবে সিআইডি হেড কোয়ার্টারে পোস্টিং হয়। এরপর সিআইডির এডিশনাল এসপি ময়মনসিংহ জোনে প্রায় সাড়ে ৫ বছর ছিলাম। তারপর এসপি হয়ে এখন ঢাকা রেঞ্জে কাজ করছি।
জাগো নিউজ: একজন নারী হিসেবে পরিবার থেকে কেমন সাপোর্ট পাচ্ছেন?
নাবিলা জাফরিন রীনা: আমি পুলিশে চাকরি করছি। এ বিষয় নিয়ে পরিবারে কোনো নেতিবাচক প্রভাব নেই। আমার পরিবারের সবাই আামাকে সাপোর্ট দেন। এমনকি আমার সন্তানরাও অনেক হেল্পফুল। আমার দুই ছেলে, এক মেয়ে।
জাগো নিউজ: পুলিশের চাকরির পাশাপাশি কোনো সামাজিক কাজে যুক্ত আছেন?
নাবিলা জাফরিন রীনা: আমি এতিম বাচ্চাদের লালন-পালন করতে চাই। এজন্য আমার ইচ্ছা আছে, নিজ গ্রামে আমি একটি এতিমখানা করবো। বর্তমানে একটি এতিম মেয়ের লেখাপড়াসহ যাবতীয় খরচ আমি বহন করছি। মেয়েটি হাফেজি পড়ছে।
জাগো নিউজ: পুলিশে নারী সদস্য কম হওয়ার কারণ কী মনে হয়?
নাবিলা জাফরিন রীনা: পুলিশ চ্যালেঞ্জিং পেশা। পুলিশে সময় দিতে হয় বেশি। আর নারী-পুরুষ যেই হোক না কেন, পুলিশে পরিশ্রমটা একটু বেশি। কারণ যেকোনো মুহূর্তে ডাকলে আপনাকে সাড়া দিতে হবে। এখানে কেউ সাব-ইন্সপেক্টর হিসেবে ঢুকলে তাকে মামলা তদন্ত করতে হবে, কনস্টেবল হিসেবে ঢুকলে তাকে আসামি ধরতে যেতে হবে। একজন সিনিয়র অফিসার হলে তাকে জেলায় কাজ করতে হতে পারে। তাই চ্যালেঞ্জিং পেশা হিসেবে অনেকে ভয় পান।
জাগো নিউজ: পুলিশের চাকরিতে নারীদের সম্মান সম্পর্কে জানতে চাই—
নাবিলা জাফরিন রীনা: পুলিশে পুরুষদের যেমন স্যার বলা হয়, নারীদেরও কিন্তু স্যার বলে সম্বোধন করা হয়। যে কারণে নারী বা পুরুষ অফিসারের মধ্যে কোনো পার্থক্য করা হয় না। এ ছাড়াও নারী-পুরুষ পুলিশের চাকরিতে সমান সুবিধা পান।
জাগো নিউজ: নারীর জন্য এ পেশায় আপনার কোনো ব্যক্তিগত উদ্যোগ আছে কি-না?
নাবিলা জাফরিন রীনা: আমাদের কর্মস্থলে আলাদাভাবে নারীদের জন্য কিছু করা যায় না। নারীদের অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্য অনেক কিছু করা যায়। যেমন আমি ডিটেক্টিভ ট্রেনিং স্কুলে মাঝে মাঝে ক্লাস নেই। আমি ক্লাসগুলো নেই নারী অধিকার নিয়ে। তাছাড়া ডমেস্টিক ভায়োলেন্সের ওপর ক্লাস নেই। নারীদের মোটিভেট করার ক্ষেত্র পেলেই আমি অংশগ্রহণ করি।
জাগো নিউজ: যে নারীরা পুলিশে আসতে আগ্রহী, তাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন—
নাবিলা জাফরিন রীনা: অন্য যেকোনো পেশার চেয়ে পুলিশে নারীর সম্মানটা বেশি হবে বলে মনে করি আমি। এখানে কাজের পরিধি বেশি। তার যদি সততা থাকে, কাজের প্রতি তার উদ্যম থাকে, স্পৃহা থাকে—অবশ্যই সে পুলিশে আসবে এবং ভালো করবে। নারীদের পুলিশে আসা উচিত। নারীরা পুলিশে আসতে ভয় পান। কিন্তু একজন নারী পুলিশে এলে বুঝতে পারবেন যে, অন্য যেকোনো প্রফেশন থেকে এখানে ভালো থাকবেন তিনি।
এসইউ/এএসএম