আন্নার নেতৃত্বে পুষ্টিসেবা দিচ্ছেন একঝাঁক নারী
সাজেদুর আবেদীন শান্ত
ফখরুন নাহার আন্নার বাবা মো. ফজলুল হক, মা লায়লা বেগম। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ময়মনসিংহের লক্ষ্মীপুর গ্রামে। বিয়ের পর স্বামী রাকিব হাসানকে নিয়ে থাকেন ঢাকার মোহাম্মদপুরে। মাধ্যমিক পাস করেন ২০১৩ সালে ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজিয়েট স্কুল থেকে। উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন ২০১৫ সালে ময়মনসিংহ রয়েল মিডিয়া কলেজ থেকে।
বর্তমানে খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান নিয়ে বিএসসি (সম্মান) করছেন ঢাকার ন্যাশনাল কলেজ অব হোম ইকোনমিক্স থেকে। পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের প্রতিষ্ঠান নিউট্রিপ্রেনার বাংলাদেশ থেকে অভিনব পদ্ধতিতে পুষ্টিসেবা দিয়ে আসছেন। প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে ২০১৯ সালের ২৪ জুলাই।
এর আগে তিনি ‘ডিসকভার দ্য পাওয়ার অব নিউট্রিশন’ ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন একবছর। সেখানে পুষ্টি কেন্দ্রীক সেচ্ছাসেবকমূলক কাজ করেছেন তিনি। এরপর সিনিয়র ডায়েট এক্সিকিউটিভ হিসেবে পুষ্টিবিদ আয়শা সিদ্দিকার প্রতিষ্ঠান ‘ইজি ডায়েট বিডি’তে একবছর কাজ করেন। তখনই এর সঙ্গে করপোরেট অংশ যোগ করে নতুনভাবে পুষ্টিসেবা দেওয়া সম্পর্কে জানতে পারেন।
পুষ্টিসেবার কাজে বাস্তবিক জ্ঞান লাভের পর নিউট্রিপ্রেনার বাংলাদেশ গড়ে তোলেন। এটি এমন একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান; যেখান থেকে আন্ডার গ্র্যাজুয়েট এবং গ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে মানুষকে পুষ্টিসেবা দেওয়া হয়। অভিনব আয়োজনের মাধ্যমে মানুষকে এ ধারণা দেওয়া যে, কীভাবে ঘরের খাবার দিয়ে পুষ্টি নিশ্চিত করা সম্ভব।
এ ছাড়াও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে যেসব বেসিক টুলস দরকার, যেমন ফিটনেস প্রোডাক্টস। তা হতে পারে ওয়েট মেশিন, ইয়োগা মেট বা ডায়েট ফুড। এ সবকিছু নিউট্রিপ্রেনার বাংলাদেশ থেকে সরবরাহ করা হয়। ডায়েট ফুডের ক্ষেত্রে খাবার তৈরি করা হয়। স্বাস্থ্যকর পদ্ধতিতে কোনো ফাংশন বা ইভেন্ট হলে সেক্ষেত্রে কাস্টমাইজড ডায়েট ফুড দেওয়া হয় এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। যেমন- ডায়াবেটিক ফুড (লাঞ্চ, স্ন্যাকস ইত্যাদি)।
সংগঠন সম্পর্কে আন্না বলেন, ‘পর্যাপ্ত খাবার কম-বেশি সবাই পাচ্ছেন। কিন্তু সেই প্রাপ্ত খাবারকেই কীভাবে গ্রহণ করলে, কী পরিমাণে গ্রহণ করলে পুষ্টি নিশ্চিত সম্ভব; তা নিয়েই কাজ করে যাচ্ছে ‘নিউট্রিপ্রেনার বাংলাদেশ’। তারই ধারাবাহিকতায় ‘ইটিং ডিসঅর্ডার’ নিয়ে কাজ করছে সংগঠনটি।’
তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগেই ইটিং ডিসঅর্ডার মানে খাদ্যগ্রহণজনিত রোগ নিয়ে সপ্তাহব্যাপী দ্বিতীয় আসর অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে শতাধিক হবু পুষ্টিবিদের উপস্থিতি প্রোগ্রামটি সফল করতে ভূমিকা রাখে। গতবছর করোনার আগে এর প্রথম আসর অনুষ্ঠিত হয়।’
আন্না আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে আমরাই প্রথম ইটিং ডিসঅর্ডার বা খাবারজনিত ব্যাধি নিয়ে কাজ করছি। কোনো কাজই আসলে সহজ নয়। সহজ করে নিতে হয়। সেক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ এসেছে। এমনকি এখনো আসছে। সব কাটিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এ মুহূর্তে নিউট্রিপ্রেনার বাংলাদেশে ৩ জন ট্রেইনি ও ৫০ জন অফিসিয়াল ভলান্টিয়ার আছেন। যাদের সিংহভাগই মেয়ে।’
চ্যালেঞ্জের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রফেশনে কেবল ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট হিসেবেই গতানুগতিকভাবে সবাই কাজ করে আসছে। সেই জায়গা থেকে বের হয়ে ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান তৈরি করে কাজ করে যাওয়া খুবই কঠিন। তবে আমরা থেমে নেই। যারা ভলান্টিয়ার বা মডারেটর বা ট্রেইনি হিসেবে আমাদের সঙ্গে যুক্ত আছেন; তারাই মূলত আমাদের শক্তি।’
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে আন্না বলেন, ‘ভবিষ্যতে নিউট্রিপ্রেনার বাংলাদেশকে এমন একটি জায়গায় দেখতে চাই; যেখানে খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞানে অধ্যয়নরতদের জন্য বৃহৎ কর্মক্ষেত্র তৈরি হবে। পাশাপাশি নারী উদ্যোক্তারাও প্রচুর কাজের সুযোগ পাবেন। আমরা পাবো খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ও পুষ্টিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি দেশ।’
লেখক: ফিচার লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী।
এসইউ/জিকেএস