ব্র্যান্ড ম্যানেজমেন্ট ক্যারিয়ারে তরুণদের আগ্রহ বাড়ছে
একজন সাবলীল প্রাণের তরুণ খন্দকার ফয়েজ আহমেদ। দেশীয় জনপ্রিয় ব্র্যান্ডগুলোর একটি মুন্নু সিরামিকসের হেড অব ব্র্যান্ড এবং রিটেইল অপারেশনসের দায়িত্বে আছেন তিনি। জাগো নিউকে শুনিয়েছেন তার সফলতা, অভিমত ও ক্যারিয়ারের গল্প। এ ছাড়া বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন তরুণদের। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বেনজির আবরার—
আপনার ছোটবেলা ও পড়াশোনা সম্পর্কে জানতে চাই—
ফয়েজ আহমেদ: আমার ছোটবেলার একটা বিশাল অংশজুড়ে মতিঝিল মডেল হাই স্কুল। সেখান থেকেই কৈশোরে পা ফেলে ২০০১ সালে মাধ্যমিক পেরিয়ে ঢাকা সিটি কলেজে ভর্তি হই। এরপর ধানমন্ডির ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে ২০০৮ সালে ব্যবসা প্রশাসনে মার্কেটিংয়ের ওপর স্নাতক শেষ করি।
ক্যারিয়ারের প্রথম ধাপে পা ফেলা তরুণের পরের গল্পটা শুনি—
ফয়েজ আহমেদ: স্নাতক শেষ করার পরপরই ইন্টার্নশিপ পেয়ে যাই দেশের সবচেয়ে বড় কর্পোরেট হাউস বেক্সিমকো গ্রুপে। আর তারপর খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি সেখানে ক্যারিয়ার শুরু করতে। ক্যারিয়ারের বাঁক বদল বলতে পারেন এখান থেকেই। বেক্সিমকো গ্রুপের শাইনপুকুর সিরামিকসে জীবনের পাঁচটি বছর কাটাই সফলতার সঙ্গে।
ক্যারিয়ারের শুরু ও প্রথম ধাপ পেরোনো ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং বিভাগে এবং পাশাপাশি স্বল্প পরিসরে ব্র্যান্ডিং নিয়ে কাজ করা। তখন চিফ অপারেটিং অফিসার রিজভী উল কবির স্যারের কাছে ব্র্যান্ডিংয়ের হাতেখড়ি। তার সান্নিধ্যে থেকে এ ব্যাপারে অনেক কিছু শিখি। যা পরবর্তীতে আমার ক্যারিয়ার গঠনে বিশাল ভূমিকা রেখেছে। সত্যি বলতে, ক্যারিয়ারের শুরুতে এমন একজন মেন্টরের সান্নিধ্য পাওয়া বিশাল ব্যাপার।
২০১৫ সালের শুরুতে বেক্সিমকো ছেড়ে জয়েন করি আরএকে সিরামিকসের টেবিলওয়্যার প্রতিষ্ঠান স্টার পোরসেলিনে। সেখানে দশ মাসের মতো কাজ করি ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং এবং ব্র্যান্ডিং বিভাগে। সে বছর অক্টোবরের শেষের দিকে মুন্নু সিরামিকসে ইন্টারন্যাশনাল সেলস এবং মার্কেটিং বিভাগে সিনিয়র ম্যানেজার পদে যোগদান করি।
এরপর শুধুই এগিয়ে চলার গল্প—
ফয়েজ আহমেদ: হ্যাঁ, এরপর ২০১৭ সালে সহকারী মহা ব্যবস্থাপক, ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং এবং পাশাপাশি ব্র্যান্ড বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিলাম। ২০২০ সালে এসে আবারো পদোন্নতি পেয়ে উপ-মহা ব্যবস্থাপক হলাম। একটি কথা এখানে না বললেই নয়, মুন্নু সিরামিকসের ম্যানেজমেন্ট করোনার সময়ে আমাকে সর্বোচ্চ মূল্যায়ন করে। আমাকে কোম্পানির রিটেইল অপারেশন দেখভাল করার গুরুদায়িত্ব দেওয়া হয়।
মুন্নু সিরামিকসের সম্পর্কে যদি বলতেন—
ফয়েজ আহমেদ: এর যাত্রা শুরু ১৯৮৪ সালে। দেশের প্রথম সিরামিক কোম্পানি, যাদের হাত ধরে রফতানি শুরু হয় ইউরোপের বাজারে। ৩৬ বছর ধরে এ ব্র্যান্ড তাদের পণ্য পৌঁছে দিচ্ছে পৃথিবীর ৫০টিরও বেশি দেশে। তৈরি করছে পৃথিবীর নামিদামি ব্র্যান্ডের পণ্য। তারই ধারাবাহিকতায় ১২ বার জাতীয় রফতানি ট্রফি অর্জন করে। গতবছর বেস্ট টেবিওয়্যার সিরামিক ব্র্যান্ড ক্যাটাগরিতে অর্জন করে সুপারব্র্যান্ডস।
দ্রুত চাকরি বদল করেন অনেকেই। আপনি এক্ষেত্রে একেবারেই ভিন্ন। এ ব্যাপারে তরুণদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
ফয়েজ আহমেদ: আমি বিশ্বাস করি, দ্রুত চাকরি বদল সব সময় ক্যারিয়ারের জন্য শুভকর হয় না। সবারই মূল্যায়ন করা হয়, তার কাজ ও যোগ্যতা দিয়ে। তরুণদের জন্য আমার পরামর্শ থাকবে, প্রথম চাকরিটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা মজবুত হলে তার উপরে যেকোনো কিছু করা সম্ভব। প্রতিদিন নতুন কাজ খুঁজে খুঁজে শিখুন। যে কাজটাই করেন, মন দিয়ে করেন। শেখার কোনো বিকল্প হয় না।
তিন বছরের আগে কোথাও জব না ছাড়ার অভ্যাস করবেন। তাহলে ক্যারিয়ার অনেক সুন্দরভাবে এগিয়ে যাবে। ঘনঘন চাকরি বদল করলে আপনার ব্যাপারে বাজে ধারণা তৈরি হতে পারে। আরেকটি বড় ব্যাপার খেয়াল রাখতে হবে, নিজেকে সময়ের সাথে সাথে সব কিছুতেই আপডেটেড রাখতে হবে। কখনোই ব্যাকডেটেড হওয়া যাবে না। নয়তো আপনি মার্কেট থেকে ছিটকে পড়বেন। সবশেষে বলবো, প্রথমে লার্ন তারপর আর্ন।
ব্র্যান্ডিংয়ে ক্যারিয়ার গড়তে আপনার পরামর্শ কী?
ফয়েজ আহমেদ: বেশ কয়েক বছর ধরে এ সেক্টরে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হলো- প্রতিযোগিতা এবং প্রতিযোগী কোম্পানিগুলোর মার্কেট পজিশন ধরে রাখার ব্যাপারে সচেতনতা। ব্র্যান্ডিংয়ে ক্যারিয়ার গড়তে হলে প্রচুর সমসাময়িক কেস স্টাডি রিসার্চ করতে হবে। এখানে নতুনদের কাজ করার প্রচুর সুযোগ রয়েছে। সৃজনশীলতা, নিত্যনতুন আইডিয়া, মার্কেট স্টাডি, কম্পিটিটর অ্যানালাইসিস- ব্যাপারগুলো একজন তরুণের মধ্যে থাকলে; তার জন্য ব্র্যান্ডিংয়ে ক্যারিয়ার গড়া অনেক সহজ হবে।
মনে রাখতে হবে, এটি অনেক চ্যালেঞ্জিং একটি বিভাগ। যেখানে প্রতিনিয়ত আপনার কোম্পানি বা ব্র্যান্ডের ওপর কাস্টমারের গচ্ছিত ধারণাকে সময়ে সময়ে বিভিন্ন মাত্রা দেওয়াই হলো ব্র্যান্ডিংয়ের মূল কাজ। দিনশেষে একটি কোম্পানির সফলতার পেছনে মূল কাজটি করে সঠিক ব্র্যান্ডিং।
এসইউ/জিকেএস