প্রতিবন্ধকতা কখনো আল-আমিনকে নিরাশ করেনি
মো. আল-আমিন ৩৭তম বিসিএসে সমবায় ক্যাডারে প্রথম হয়েছিলেন। বাবা মো. ইদ্রিস বেপারী, মা মোসা. আমিনা বেগম। ১৯৮৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পিরোজপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পিরোজপুরের সাফা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ঢাকার আহছানিয়া মিশন কলেজ থেকে এইচএসসি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
সম্প্রতি তার বিসিএস জয়, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো. সাঈদ মাহাদী সেকেন্দার—
ছোটবেলা কেমন কেটেছে?
মো. আল-আমিন: ছোটবেলায় দুরন্ত ছিলাম। সারাদিন খেলাধুলা করতাম। এজন্য মায়ের হাতে মার খেতে হয়েছে অনেক। ভিডিও গেমসের প্রতি অনেক আসক্ত ছিলাম। আমার ছোটবেলাটা অনেক জায়গায় কেটেছে। একটা সময় আমরা চট্টগ্রামে ছিলাম, এরপর ঢাকায় চলে আসি। আবার পিরোজপুর চলে যাই বাবা-মায়ের সাথে। এভাবেই কেটেছে সময়গুলো।
পড়াশেনায় কোন প্রতিবন্ধকতা ছিল কি?
মো. আল-আমিন: প্রতিবন্ধকতা ছিলো। দুটো বড় দুর্ঘটনায় আমাদের পরিবার পথে বসে যায়। যে কারণে প্রচণ্ড আর্থিক সংকটে পড়ে বড় ভাই-বোনদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। সামাজিক মর্যাদায় পরিবারের অবস্থান ভালো ছিলো কিন্তু মধ্যবিত্তের অর্থ সংকটের নিদারুণ কষাঘাতের কথা লজ্জার কারণে কাউকে বলা যেত না। আমার ৬-৭ বছর বয়স থেকেই এ অবস্থা শুরু হয়। এ ছাড়াও বাবা ব্যবসায় বড় বড় ক্ষতির সম্মুখীন হন। এটা পড়াশোনায় অনেক প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। তবে কষ্ট হলেও কখনো আমার পরিবার নিরাশ হয়নি।
বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?
মো. আল-আমিন: আমি সব সময় চাইতাম ব্যাংকার হবো। বিসিএস নিয়ে কখনো ভাবিনি। বিসিএস ব্যাপারটা বুঝে উঠতে কিছুটা সময় লাগে। আর তখনই আমি আমার লক্ষ্য নতুন করে নির্ধারণ করি।
বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই—
মো. আল-আমিন: অনার্স পাসের পর কিছু বন্ধুর ব্যাংকে জব হয়। আমি ঠিক করলাম, মাস্টার্স শেষ করেই জবে ঢুকবো। বন্ধুদের কাছে ব্যাংকের বিভিন্ন বিষয় শুনে ব্যাংকের প্রতি প্রবল আগ্রহটা অনীহায় রূপ নিতে শুরু করলো। এক বন্ধু হঠাৎ একদিন বিসিএসের বিষয়টা আমার মাথায় প্রবেশ করায়। প্রবল আগ্রহ কাজ করে আমার। ওর কথা শুনে ওই রাত আর ঘুম হয়নি। নিজেকে নিয়ে ভাবতে শুরু করলাম। এর পরদিন আমি ডিসিশন নিলাম। আল্লাহর কাছে মন খুলে চাইলাম। এর মধ্যে আমার ব্যাংকে একটা জব হয়। জয়েন করিনি। স্বপ্ন তো তখন বিসিএসেই আটকে আছে। পরপর আরও ৪টি ব্যাংকে জব হয়। একটাতেও জয়েন করিনি। যেভাবেই হোক, ক্যাডার আমাকে হতেই হবে। এ লক্ষ্য নিয়ে এগোতে থাকলাম।
কারো কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন কি?
মো. আল-আমিন: আমার ক্লাসমেট-বান্ধবী। ও আমাকে বিসিএসের স্বপ্ন দেখায়। ও বলে, ‘তুই চেষ্টা করলে পারবি’। ওর কথায় আমি প্রচণ্ড অনুপ্রাণিত হই।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
মো. আল-আমিন: বাইরে উচ্চতর ডিগ্রির জন্য যাওয়ার ইচ্ছা আছে। মানুষের জন্য কিছু একটা করতে সব সময় মনের মধ্যে প্রবল টান অনুভব করি। আর সৎ ভাবে যেন জীবনটা কাটাতে পারি, এটাই চাই আল্লাহর কাছে।
সাম্প্রতিক করোনা দুর্যোগে আপনার ভূমিকা কী?
মো. আল-আমিন: করোনাকালীন একটি চ্যারিটি ফান্ড গঠন করে আর্থিকভাবে অসহায় চাকরিপ্রার্থী কিছু ভাই-বোনকে সহায়তার ব্যবস্থা করি। কারণ যারা টিউশন করে চলতো, এ সময়টাতে তাদের অবস্থা শোচনীয় ছিলো। এ ছাড়া ঢাকার বাইরে কয়েকটা জায়গায় যোগাযোগ করে বেশ কিছু খাদ্য সহায়তা করেছি। মানুষকে সচেতন করার বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। সব থেকে বড় বিষয় হলো, করোনাকালে সাধারণ ছুটি ছাড়া অফিসের কাজ চালিয়ে গেছি।
এসইউ/এএ/এমকেএইচ