পুলিশ বাবাকে দেখে পুলিশ ক্যাডার হতে চাইতেন মহিতুল
মো. মহিতুল ইসলাম সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে র্যাবে কর্মরত। বাবা মো. আলতাফ হোসেন, মা শামসুন্নাহার। তিনি ১৯৮৮ সালের ১৭ অক্টোবর বরিশালের বাবুগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। চট্টগ্রাম সেনানিবাসের বায়েজিদ লাইন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখ্যানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
সম্প্রতি তার বিসিএস জয়, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো. সাঈদ মাহাদী সেকেন্দার—
ছোটবেলা কেমন কেটেছে?
মো. মহিতুল ইসলাম: আমার ছোটবেলা বেশ চমৎকারভাবেই কেটেছে। আমার আব্বা যেহেতু পুলিশে চাকরি করতেন। আব্বার সরকারি চাকরির সুবাদে অনেক জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পেয়েছি। আমার ছোটবেলার বেশিরভাগ সময় কেটেছে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড় ও নদী বেষ্টিত বেতবুনিয়া, বারোবুনিয়া, রাঙ্গামাটি ও চট্টগ্রাম এলাকায়।
পড়াশোনায় কোন প্রতিবন্ধকতা ছিল কি?
মো. মহিতুল ইসলাম: পড়াশোনায় প্রতিবন্ধকতা শুরু হয়েছে যখন আমি ক্লাস টেনে পড়ি তখন থেকেই। তখন আব্বা চাকরি ছেড়ে ব্যবসায় নামেন। আর সেই ব্যবসায় বেশ লস হয়। সেই ক্ষতি তিনি কাটিয়ে উঠতে পারেননি। তখন থেকেই আমার পড়াশোনায় বেশ প্রতিবন্ধকতা শুরু হয়। আমার এখনো মনে আছে, কলেজের দুই বছর বেশ কষ্ট করে কেটেছিল। আমি এসএসসি পরীক্ষার পরেই টিউশনি শুরু করি। কলেজে ফার্স্ট ইয়ারে থাকতেই আব্বা স্ট্রোক করে মারা যান। তখন বিশ্ববিদ্যালয় জীবন পুরোটাই টিউশনি করে পড়াশোনা চালাতে হয়েছিল। আবার আমার আম্মা ও দুই ভাই-বোনকে দেখতে হতো।
বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?
মো. মহিতুল ইসলাম: পুলিশের বড় অফিসার হওয়ার স্বপ্ন আমার অনেক আগে থেকেই ছিল। যেহেতু আমার আব্বা পুলিশে চাকরি করতেন। তাই পুলিশের পরিবেশের মধ্যেই আমার শৈশব ও কৈশোরের দিনগুলো কেটেছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আমার স্বপ্ন আরও ডালপালা মেলে। তখন থেকে আমি স্বপ্ন দেখি যে, আমি একদিন বিসিএস ক্যাডার হবো।
বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই—
মো. মহিতুল ইসলাম: আমার বিসিএস যাত্রার গল্প অন্য অনেকের মতো এতটা মসৃণ ছিল না। বুঝতেই পারছেন, যেহেতু টিউশনি করে সংসার চালাতে হতো। স্বপ্ন দেখাটাও অনেক সময় কিছুটা বাড়াবাড়ি মনে হতো। তবু আমি স্বপ্ন দেখতাম, অনেক বড় বড় স্বপ্ন দেখতাম। তাই অনার্স পরীক্ষা শেষ করার পরেই আমি পুরোদমে বিসিএসের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে শুরু করি। নিজে আরও মোটিভেটেড হওয়ার জন্য আমাদের দেশের স্বনামধন্য কয়েকজন বিসিএস ক্যাডারের পত্রিকার কাটিং এবং ফেসবুকে লেখা, তাদের উদ্দীপনামূলক কথা বারবার পড়তাম ও দেয়ালের বিভিন্ন জায়গায় টানিয়ে রাখতাম। বিসিএস কোচিং করার মতো যথেষ্ট টাকা-পয়সা না থাকার কারণে বিভিন্ন বিসিএস কোচিংয়ে যে ফ্রি সেমিনারগুলো হতো, সেগুলো আমি অ্যাটেন্ড করতাম। আর সেখানে যে সব বিসিএস ক্যাডার লেকচার দিতে আসতেন, তাদের কথাগুলো মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতাম। নিজেকে সেভাবে প্রস্তুত করার চেষ্টা করতাম। আমার প্রথম বিসিএস এবং প্রথম চাকরির পরীক্ষা ছিল ৩৩তম বিসিএস। সেই বিসিএস থেকে আমি প্রথম শ্রেণির নন-ক্যাডার হিসাবে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে কমিটি অফিসার পদে একটি চাকরি পাই। চাকরিটা আমি দেড় বছর করেছি। এ ছাড়া বিসিএস প্রস্তুতির সময় বিভিন্ন ব্যাংকে বেশ কয়েকটি চাকরি পাই। নন-ক্যাডার চাকরিতে জয়েনের আগে একটি ব্যাংকে প্রবেশনারি অফিসার হিসেবে প্রায় পাঁচ মাস চাকরিও করেছি। তবে অন্য চাকরি করার সময়ও শত ব্যস্ততার মধ্যেও বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন আমার দমে যায়নি। আমি লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হইনি। আমি স্বপ্নও দেখতাম আর সাথে সাথে প্রস্তুতিও চালিয়ে যেতাম। যার ফলে ৩৪তম বিসিএসের মাধ্যমে আমার বহু আকাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন আমার কাছে ধরা দেয়। আমার ফার্স্ট চয়েজ যা ছিল, আলহামদুলিল্লাহ আমি সেটাই পেয়েছিলাম।
কততম বিসিএসের কোন ক্যাডারে আছেন?
মো. মহিতুল ইসলাম: আমি ৩৪তম বিসিএসের মাধ্যমে ২০১৬ সালের ১ জুন বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারে যোগদান করি। বর্তমানে আমি সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাবে কর্মরত।
কারো কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন কি?
মো. মহিতুল ইসলাম: আসলে অনুপ্রেরণা পেয়েছি বিভিন্ন জায়গা থেকে। বিশেষ করে যখন আব্বার ওখানে পুলিশের বড় অফিসারদের দেখতাম; তখন আমারও তাদের মতো হতে ইচ্ছে করতো। ভাবতাম, আমার এমন কিছু হতে হবে যেন আমার বাবা-মা আমাকে নিয়ে গর্ববোধ করতে পারে। এ ছাড়া কিছু বিসিএস ক্যাডারের কথা শুনে তাদের লেখাগুলো পড়ে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার ব্যাপারে বেশ অনুপ্রাণিত হতাম।
একজন পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
মো. মহিতুল ইসলাম: সততার সাথে মানুষের ভালোবাসা নিয়ে জনগণের সেবা করে যেতে চাই। সাধারণ মানুষের কাছে যেন পুলিশ হিসেবে আস্থার প্রতীক হয়ে দাঁড়াতে পারি, এমন কাজ করতে চাই।
সাম্প্রতিক করোনা দুর্যোগে আপনার ভূমিকা কী?
মো. মহিতুল ইসলাম: করোনা দুর্যোগ শুরু হওয়ার পর থেকেই পুলিশ, র্যাবের দায়িত্ব আসলে বহুগুণ বেড়ে গেছে। মাদকের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান ছাড়াও জনসমাগম রোধ ও করোনা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমাদের নিয়মিত টহল পরিচালনা করতে হয়েছে। এ দুর্যোগে যেন অসাধু ব্যবসায়ীরা সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও চিকিৎসা সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি করতে না পারে, সেজন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সহযোগিতায় নিয়মিত মোবাইল কোর্টে অংশ নিতে হয়েছে। এ ছাড়া গরিব-দুঃখী মানুষের মধ্যে আমরা নিজেদের উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ করেছি। তাছাড়া আমি যেহেতু কুমিল্লায় আছি। এখানে ঢাকা-চট্টগ্রাম বিশাল হাইওয়ে রয়েছে। করোনার এ দুর্যোগকালীন সময়েও মাদকের অবাধ যাতায়াত রুখতে হাইওয়েতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতে হয়েছে। গত তিন মাসে হাইওয়েতে পরিবহনের সময় আমরা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি পরিমাণ মাদকদ্রব্যের চালান আটক করতে সমর্থ হয়েছি।
এসইউ/এমকেএইচ