ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাগো জবস

সফলতা মানে অর্থপূর্ণ জীবন : ইজাজ আহমেদ

প্রকাশিত: ০৮:০৭ এএম, ১৫ অক্টোবর ২০১৫

ইজাজ আহমেদ। বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টারের (বিওয়াইএলসি) প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট। ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি এ প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। নানা আলোচনা-সমালোচনার পথ পাড়ি দিয়ে আজ একটি অবস্থানে দাঁড়িয়েছেন তিনি।

দেশের বাইরেও রয়েছে তার সুনাম-সুখ্যাতি। এপর্যন্ত বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে নিয়েছেন নেতৃত্ব শেখার সরলপাঠ। এরআগে সেন্ট এন্ডুস কলেজে অর্থনীতি পড়ার সাথে সাথে দীক্ষা নেন প্রাকটিক্যাল লিডারশিপের। উদ্যোক্তা তৈরির বিষয়ে জ্ঞান নিয়েছেন মার্কিন তথা বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয় ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি বা এমআইটি থেকে।

২০০৭ সালে দেশ-বিদেশের হাজারো প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে এমআইটির এক্সিকিউটিভ সামারি কনটেস্টে প্রথম হন। সেখান থেকেই জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠেয় প্রথম সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ফোরামে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পান। ২০০৯-১০ সেশনে ইয়ুথ সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ থেকে পান প্যারাগন ফেলোশিপ। একইসময় বিশ্বসেরা পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্ট তাকে নির্বাচিত করে ইয়ুথ অ্যাকশন নেট গ্লোবাল ফেলো হিসেবে। পেয়েছেন এশিয়ার সেরা প্রমিজিং লিডারের খেতাব।

তিনি কাজ করেছেন ইউএনডিপি, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকসহ বাংলাদেশ সরকারের নানা প্রকল্পে। নেতৃত্ব নিয়ে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, দুবাইসহ বিশ্বের বহু দেশ ও সংস্থার জাতীয়-আন্তর্জাতিক সেমিনারে।

আজ ক্যারিয়ার তথা অফিস ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বের দাবিদার নেতৃত্বগুণ অর্জনে করণীয় নিয়ে জাগো জবসের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন গোলাম রাব্বী।

জাগো জবস: ক্যারিয়ার গঠনে নেতৃত্বগুণ কতটা প্রয়োজন? নিজের মধ্যে লিডারশিপ কোয়ালিটি অর্জনে আপনারা কি করে থাকেন?
ইজাজ আহমেদ: প্রথমত- বিশ্বাস রাখতে হবে, নেতৃত্ব শেখা যায়; দ্বিতীয়ত- সর্বদা কিউরিয়াস বা জানার আগ্রহ থাকতে হবে এবং শেষত- এখন জানার সুযোগ বিশাল, আপনার প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে ইন্টারনেটে সার্চ করতে পারেন। আমরা সবাইকে নেতৃত্ব অনুশীলনের জন্য অফিস বা যে ধরনের কাজের সাথেই থাকুন না কেন নেতৃত্ব অনুশীলনের জন্য সর্বদা মনোযোগী হতে বলি। আমাদের একটা ভুল ধারণা রয়েছে যে, রাজনীতি করাই কেবল লিডারশিপ; বিষয়টি কিন্তু তেমন নয়। যেমন- আপনি অফিসে একটা টিমকে ভালোভাবে তৈরি করছেন, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে অফিস বা আপনার কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন, এটাও কিন্তু লিডারশিপ। সমাজের প্রত্যেকে যদি নেতৃত্ব বা লিডারশিপ কোয়ালিটি অর্জন করেন তখন দেশ অনেক এগিয়ে যাবে।

জাগো জবস: ‘নেতৃত্ব আর কর্তৃত্ব এক জিনিস নয়’- কথাটির মূল পার্থক্য কি?
ইজাজ আহমেদ: নেতা বা নেতৃত্ব হচ্ছে এমন এক বিষয়- যিনি নেতা হবেন তিনি অবশ্যই অন্যের সুখ-দুঃখ বুঝবেন; তিনি অবশ্যই সবার মত ও অধিকারকে প্রাধান্য দিবেন। এককথায় নেতা বা নেতৃত্ব তৈরি হয়- যদি সবার ভালোটা তিনি বোঝেন।

অন্যদিকে- আমাদের দেশে আজও বেশির ভাগক্ষেত্রেই দেখা যায়- সবাই আমরা কর্তৃত্ব পরায়ন। আমরা শুধু নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত। সাধারণের দিকে আমাদের নজর নেই। অন্যের ভালো-মন্দ না ভেবে কর্তৃত্ব দেখিয়ে নিজের মত চাপিয়ে দিতেই ব্যস্ত থাকি।

জাগো জবস: আমাদের দেশে লিডারশিপ প্রশিক্ষণে বাধাগুলো কি কি?
ইজাজ আহমেদ: ভাষা নিয়ে একটি সমস্যা আছে; একইসাথে শিক্ষার কারিকুলাম যেমন- দেশে এখন বাংলা, ইংরেজি আবার আরবি এই তিনভাবে শিক্ষা ব্যবস্থা চলছে। আরও একটি সমস্যা হলো- আমরা নিজেদের পরিবর্তন করতে পারি এটা বিশ্বাস করতে পারি না। তাই আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে। আমরা ভাবি, আমাদের সব পরিবর্তনই বোধহয় রাজনীতিবিদরা এনে দেবে। রাজনীতিবিদদের সাথে সাথে দেশ গঠনে আমাদের প্রত্যেকেরই তৈরি হওয়ার দরকার।

জাগো জবস: ‘আমাদের আশানুরূপ উন্নয়ন হচ্ছে না কেন?’- আপনি বহুদিনের অভিজ্ঞতা থেকে কী বলবেন?
ইজাজ আহমেদ: আমরা টাকার কারণে গরিব না; নেতৃত্বের কারণে গরিব। আমাদের চেয়ে খারাপ অবস্থানে থাকার পরেও অনেক দেশ আজ আমাদের চেয়ে উন্নত। আমাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতা দরকার। আর একটা সমস্যা হলো- এখানে কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না।

জাগো জবস: অফিস ব্যবস্থাপনায় ভালো নেতৃত্ব তৈরি না হওয়ার অন্তরায় কি কি?
ইজাজ আহমেদ: এখানে নেতৃত্বের অনুশীলনের অভাব। আমাদের দেশে নেতৃত্ব চর্চার সুযোগ কম। আমি কিন্তু দলকেন্দ্রিক রাজনীতি চর্চার কথা বলছি না। নেতৃত্ব চর্চা বা নেতা বলতে শুধু রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকা আর না থাকাকেই বোঝায় না। আপনি সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক যেকোনো কর্মকাণ্ডে নিজেকে যুক্ত রাখতে পারেন। সেসব কাজে সামনে থেকে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে সফল সমাপ্তি এনে দেয়া যায়, সেটাও কিন্তু নেতৃত্বের মধ্যেই পড়ে।

জাগো জবস: ভালো নেতৃত্ব তৈরিতে আপনারা কোন দিকে নজর দেন?
ইজাজ আহমেদ: একজন ভালো নেতার মধ্যে অন্তত তিনটি গুণ থাকা প্রয়োজন। প্রথমত- যোগ্যতা; দ্বিতীয়ত- সহানুভূতি; তৃতীয়ত- সাহস। এই তিনটি বিষয় যার মধ্যে থাকবে, তিনি ভালো নেতৃত্বের উদাহরণ হবেন।

জাগো জবস: দেশের তরুণ সমাজ নিয়ে আপনি কতটা আশাবাদী?
ইজাজ আহমেদ: আমি শতভাগ আশাবাদী। অফিস-আদালত থেকে শুরু করে যদি নেতৃত্ব চর্চার ক্ষেত্র প্রস্তুত করি এবং সব জায়গায় নেতৃত্ব অনুশীলন করি, তাহলে অবশ্যই আমাদের তরুণরা নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

জাগো জবস: অনেকেই কাজের চাপে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আপনাদের আয়োজনগুলোতে আসতে পারেন না; তাদের জন্য আপনাদের কী ভাবনা রয়েছে?
ইজাজ আহমেদ: আমরা ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও টিউটোরিয়াল দেওয়ার চেষ্টা করছি। যাতে দেশের সবার মাঝে নেতৃত্ব চর্চা বন্ধ না হয়। দেশ ও দেশের বাইরে থেকেও সব বয়সের মানুষ এ চ্যানেলে প্রবেশ করে নেতৃত্ব জ্ঞান শিখে কমিউনিটি ডেভেলপ বা অফিস সার্ভিস আরও উন্নত করতে পারবেন।

জাগো জবস: সামনে নেতৃত্ব চর্চাকে আরও গতিশীল করতে বিশেষ কোন দিকে নজর দিবেন?
ইজাজ আহমেদ: শিশু বয়স থেকে নেতৃত্ব চর্চার দিকে নজর দিচ্ছি। নেতৃত্ব শেখাটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, ততই ভালো। আর এজন্য শিশুকাল থেকে নেতৃত্ব চর্চা করাটা জরুরি। তবেই কর্মজীবনে এসে শৈশবে শেখা সেই নেতৃত্বের অনুশীলন সঠিকভাবে করতে পারবেন।

জাগো জবস: সবশেষে জানতে চাইবো- সফলতা বলতে আপনি কি বোঝাবেন?
ইজাজ আহমেদ: আমার কাছে সফলতা মানে অর্থপূর্ণ জীবন-যাপন করা। আত্মকেন্দ্রিক না হয়ে আশ-পাশের সবাইকে নিয়ে ভালো থাকা। ঠিক তেমনি অফিসে একা ভালো কাজ বা সিদ্ধান্ত নিলেই কিন্তু অফিস ভালো কিছু পাবে না; এর জন্য আপনাকে অফিসের সবাইকে নিয়ে ভালো পলিসি তেরি করে এগিয়ে নিতে হবে।

এসইউ/আরআইপি

আরও পড়ুন