সময়ের ভালো-মন্দ বলতে কিছু নেই
সময়ের ভালো-মন্দ বলতে সেই অর্থে কিছু নেই। সময় হচ্ছে সময়! সময়টাই আসল। ভালো বা মন্দ না। কারণ আজ এই মুহূর্তে যেই ঘটনাটি মনে হচ্ছে জীবনের সবচেয়ে খারাপ ঘটনা, হয়তো এমনও হতে পারে যে, ঠিক আজকের এই খারাপ ঘটনাটি আজ থেকে ৫ বা ১০ বছর পরে এমনকী আগামীকাল গিয়েও হয়ে উঠতে পারে জীবনের সবচেয়ে বড় ইতিবাচক বা ভালো ঘটনার বীজ বা ভালো কিছুর পেছনের কারণ।
এমনও হয়েছে, জীবনে বহুবার দেখেছি মন প্রাণ চেষ্টা দিয়ে যা চেয়েছি তা হয়নি এবং হয়নি বলে প্রচণ্ড মন খারাপ, হতাশা নিয়ে দিনের পর দিন ভয়ংকর মনোকষ্টে ভুগেছি। নিজের ভাগ্য নিয়ে হাপিত্যেশ করেছি। ভেবেছি এই জগতে আমার চেয়ে বড় হতভাগা কেউ নেই। অথচ তারপরের দুই, চার বা পাঁচ বছর পরে বা আরও স্বল্প বা দীর্ঘ কোনো সময় পর গিয়ে দেখেছি সেই না পাওয়া, না হওয়া বা সেই খারাপ ঘটনাটা ছিল বরং অন্য কোনো ভালো ঘটনা ঘটার পেছনের কারণ, বীজ।
সেই ঘটনাটি সেদিন আমার পক্ষে না ঘটাটিই বরং ছিল আমার জন্য সবচেয়ে বেশি ভালো। সেদিন সেই অতি কাঙ্ক্ষিত জিনিসটি হয়ে গেলে বা পেয়ে গেলে বরং ক্ষতি হতে পারতো আমারই। কিন্তু তখন আমি তা বুঝতে পারিনি।
আবার আজ যে সময়টা মনে হচ্ছে জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় মুহূর্ত, সেই সময়টাকেই আগামীকাল বা ৫ বা ১০ বছর পর মনে হতে পারে জীবনের সবচেয়ে বিষাদময় সময়। এই আনন্দময় সময়ের মধ্যে, প্রাপ্তির সময়ের বা ঘটনার মধ্যেই হয়তো লুকিয়ে থাকতে পারে ভবিষ্যতের কোনো নেতিবাচক ঘটনার বা খারাপ ঘটনার বীজ।
এজন্য ভালো ঘটনা বা ভালো সময় বা প্রাপ্তি নিয়ে যেমন অতিরিক্ত উচ্ছ্বসিত হওয়া যাবে না, অহংকারি হওয়া যাবে না এবং পা রাখতে হবে সবসময় মাটিতে, হতে হবে বিনয়ী; ঠিক তেমনই খুব খারাপ ঘটনায় হতাশ হওয়াও যাবে না। ভাবতে হবে, আমার ভালো দিনটি এই তো সামনে, সামনেই...
জীবনে ‘ভালো সময়ে’র চেয়ে ‘খারাপ সময়’ও কম জরুরি নয়। বরং ‘খারাপ সময়’ কখনো কখনো ভালো সময়ের চেয়েও অনেক অনেক বেশি জরুরি জীবনকে বুঝতে, শক্ত হতে, শিখতে। কারণ ‘খারাপ সময়’ যতটা শেখাতে পারে, ভালো সময় তা পারে না।
সুতরাং খারাপ সময় নিয়ে হতাশার কিছু নেই। বরং সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হবার মতো উপাদান রয়েছে সবচেয়ে বেশি।
(সেমিনারে প্রদত্ত ভাষণের অংশবিশেষ)
লেখক : ঔপন্যাসিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা
এসইউ/আরআইপি