ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাগো জবস

বাংলা টেস্ট কী এবং কেন

প্রকাশিত: ০৭:১০ এএম, ১৬ মার্চ ২০১৭

বাংলা ভাষার জন্য আমরা পেয়েছি রক্তে রাঙা মহান একুশ এবং বাংলাকে কেন্দ্র করেই আমরা পেয়েছি ১৯৭১ এর মহান স্বাধীনতা এবং স্বাধীন-সার্বভৌম প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। তাই ১৯৫২ সালে নিজেদেরকে যাঁরা ভাষার জন্য উৎসর্গ করেছেন, সেই মহান মানুষ সালাম, রফিক, জব্বার, বরকতের উত্তরসূরী হিসেবে আমরা চাই মায়ের ভাষা বাংলাকে পৃথিবীতে টিকিয়ে রাখতে, বাংলার আরও বিস্তৃতি ঘটাতে।

আমরা সুশিক্ষার প্লাটফর্ম হিসেবে ‘ড্রিম ডিভাইজার’র সুশিক্ষকরাসহ অবশ্যই বাংলা ভাষাভাষি সবাই চাইবো- বায়ান্নর মহান ভাষা আন্দোলন এবং একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারন করে, বাংলা ভাষাকে আরও সামনে এগিয়ে নিতে। আমাদের স্বপ্ন- অন্যান্য দেশে চাকরি, পড়াশোনা এমনকী কিছু ক্ষেত্রে অবস্থান করতে চাইলে, যেমন- আইইএলটিএস, জিআরই, টোফেল বা নানান ভাষার সংশ্লিষ্ট টেস্ট দিতে হয়। তেমনই লাল-সবুজের এ বাংলায় যেসব প্রবাসী বা ভিনদেশি কাজ করবেন, তাঁরা ‘বাংলা টেস্ট’ বা এমন টাইপের কিছু টেস্টে অংশ নিয়ে এদেশে কাজের সুযোগ পাবেন।

সম্প্রতি একটি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়- বর্তমানে এদেশে ২ লাখ বিদেশি কাজ করছে। অথচ তাদের কিন্তু বাংলার কোনো টেস্ট দিতে হয়নি বা হচ্ছে না; অথচ যদি আইইএলটিএস, জিআরই বা টোফেল বা অন্যান্য দেশের ভাষা টেস্টের মতো যদি ‘বাংলা টেস্ট’ বা ‘বাংলা টিএস’ নামক টাইপের কিছু দিতে হতো। তাহলে বাংলাদেশ এবং আমাদের ভাষাই কিন্তু লাভবান হতো। যেমন লাভবান হচ্ছেন আইইএলটিএস, টোফেল বা জিআরই টাইপের আয়োজকরা। আর তখন প্রাণের ভাষার জন্য জীবন দেয়া সেসব মহান ভাষা শহীদ এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস অর্জনকারী ভাষা বাংলা আরও ছড়িয়ে পড়বে এবং টিকে থাকবে দেশ থেকে দেশান্তরে, যুগ থেকে যুগান্তরে।

‘বাংলা টেস্ট’ কী, কেন বা কীভাবে?  
আমরা তথা বর্তমানের আধুনিক-ডিজিটাল বাংলাদেশ কিন্তু শিল্প, বাণিজ্য এবং প্রযুক্তির বহু অঙ্গনে খুবই ভালো করছি। বিশ্বায়নের এ যুগে নানা সূচকে এগিয়েও যাচ্ছি। আর পোশাক এবং আইটি সেক্টরের মতো কিছু সেক্টর দিনদিনতো আমাদের নিয়ে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। এসব কারণে স্বভাবতই আমরা বাঙালিরা বা বাংলা ভাষাভাষিরাও ছড়িয়ে পড়ছি বিশ্বজুড়ে। আর গ্লোবাল ভিলেজের এ সময়ে বাস্তবিক অর্থে আমাদের নানা শিল্প, প্রতিষ্ঠান এবং কাজকর্মে যুক্ত হচ্ছেন ভিনদেশিরাও। আমাদের কবির কবিতায়ও রয়েছে আমরা মিলবো-মিলাবো ও নিজেরদেরকে বদ্ধঘরে না রেখে দেখবো পুরো জগতটাকে। সে সুবাদে আমাদের বহু আন্তর্জাতিক মানের ফার্মসহ ছোট-বড় বহু প্রতিষ্ঠান এবং প্রজেক্টে কাজ করছেন বিভিন্ন দেশের বহু মানুষ। করাটাও স্বভাবিক। যেমন- আমরাও প্রায় বিশ্বের সব দেশেই কাজ করছি এবং ভবিষ্যতেও নিজেদের মেধা-যোগ্যতা দ্বারা দশদিকে ছড়িয়ে পড়বো।

কিন্তু একটা বিষয় কি আমরা খেয়াল করেছি? যদি আমরা অন্য কোনো দেশে পড়তে যাই, কাজ করতে যাই বা চাকরি নিতে চাই, তাহলে বিষয় সংশ্লিষ্ট টেস্টের পাশাপাশি ওই দেশ সংশ্লিষ্ট ভাষারও একটি টেস্ট দিতে হয়। যার কারণে আমাদের ওই ভাষাটা শিখতে হয়, পরীক্ষা দিতে হয়, পাস নয় কেবল অনেকাংশে ভালো ফলাফলও করতে হয়। আমরা এও বলছি না যে, ভাষার এসব টেস্ট থাকবে না। আমরা ড্রিম ডিভাইজারসহ বাংলাভাষি অন্যরাও নিশ্চয়ই বলবেন, অবশ্যই এগুলো থাকবে। এমনকি দেশ অনুযায়ী টেস্টের পার্থক্য এবং ভাষার টেস্ট থাকতেই পারে। আর আমরা কিন্তু এও বলছি না যে, বিদেশি বা ভিনদেশিরা আমাদের দেশে কাজ করবে না। অবশ্যই করবে। ঠিক আমরা যেমন অন্য দেশে যাই, থাকি, কাজ করি, করছি এবং করবো।

তবে আমরা বলছি- অবশ্যই আমাদের মতো অন্য দেশেরও একজন যখন এদেশে কাজ করবেন, বড় বড় পদে অধিষ্ঠিত হবেন বা যে পদেই যুক্ত হউন না কেন, তাঁদের জন্য একটা ‘বাংলা টেস্টে’র সিস্টেম রাখি, তাহলে আমাদের বড় বড় কিছু সুবিধাও আসবে।

প্রথমত আমাদের প্রাণের ভাষার চর্চা যেমন বাড়বে, তেমনি ভাষার বিস্তৃতিও স্বাভাবিকভাবে বাড়বে।
দ্বিতীয়ত আমাদের মায়ের ভাষা বাংলা, ভাষা হিসেবে বহুদিন টিকে থাকবে।
তৃতীয়ত বাংলার বিস্তৃতি এবং টিকে থাকার পাশাপাশি, বাংলা টেস্ট সংক্রান্ত রেজিস্ট্রেশন, পড়ালেখা বা পরীক্ষা সংক্রান্ত কাজে নানা ফি বাবদ একটি বিরাট অংশের রাজস্বও কিন্তু আমরা পাবো এবং সংশ্লিষ্ট কাজে যুক্ত হওয়ারও সুযোগ পাবেন বহু বাংলা ভাষাভাষি।

এবার এ সংক্রান্ত আরেকটি বিষয় নিয়ে কথা বলি-
দেখা যায়, এদেশের বহু প্রতিষ্ঠানও বাংলাদেশেই কাজে নিযুক্ত হবেন বা কাজ করবেন, তাঁদের জন্য কেবল ইংরেজি টেস্টেরই ব্যবস্থা রাখেন; এককথায় যেখানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের প্রাণের ভাষা বাংলার কোনো টেস্ট বা পরীক্ষা নেয়া হয় না। একটু ভাবুন তো- যদি সব প্রতিষ্ঠানই মেধাবী বা যোগ্য ব্যক্তি খোঁজার নামে কেবল বিদেশি একটি ভাষার মাধ্যমে টেস্ট নেয়া শুরু করে, তাহলে একসময় আমাদের বাংলা কি কেউ চর্চা করতে বা ধারণ করতে চাইবে? তবে আমরা কিন্তু বলছি না- ইংরেজির টেস্ট বা অন্য জটিল-কঠিন টেস্ট থাকবে না; অবশ্যই সংশ্লিষ্ট পদের যোগ্য লোক বাছাইয়ে ইংরেজি, গণিত বা সংশ্লিষ্ট বিষয়ের প্রয়োজনীয় টেস্ট থাকবে। কিন্তু এতে যেন নিজ দেশের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত ইতিহাসখ্যাত ভাষা বাংলার টেস্টেরও একটি ব্যবস্থা রাখি। আর ভিনদেশিদের জন্য তো অবশ্যই। কেননা কবির কবিতাও মনে রাখা দরকার- ‘দেশী ভাষা বিদ্যা যার মনে ন জুড়ায়, নিজ দেশ ত্যাজী কেন বিদেশ ন যায়’। সুতরাং- এদেশে কাজ করতে হলে অবশ্যই এদেশীয় ভাষা- বাংলার একটি মানসম্পন্ন টেস্ট কিন্তু ভাষার বিশ্বায়নের জন্য অন্তত করা যেতেই পারে!

আর প্রাণের ভাষাকে কেন্দ্র করে এমন ‘বাংলা টেস্ট’ নামক কিছু চালু করতে পারলে তখন ব্রিটিশ কাউন্সিল, আমেরিকান সেন্টার বা অন্যান্য দেশের কালচারার প্রতিষ্ঠানের মতো বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশ ও মান উন্নয়নে দেশে-বিদেশে বাংলা টেস্টের প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে, আমাদের দেশের অনেকেই এ সংক্রান্ত বই লিখবে, কেউ অনলাইন টিউটোরিয়াল বানাবে, আমাদের অনেকে বাংলা শেখানোর গুড এডুকেটর, প্রশিক্ষক বা কনসালটেন্ট হবেন, কেউ বাংলা টেস্ট সংক্রান্ত এসব অফিসে প্রশাসনিকসহ নানা পদে কাজ করবেন; ফলে চাকরির ক্ষেত্র তৈরির মাধ্যমে বেকারত্ব দূর হবে; আর দেশ পাবে বৈদেশিক মুদ্রার আরও একটি জায়গা। পাশাপাশি বাংলা ভাষা রক্ষা আর বিস্তৃতিতে নিত্য নতুন গবেষণা চলবে, ভাষা শিক্ষা ও মান উন্নয়ন সংক্রান্ত গেমস তৈরি হবে, অন্যান্য ভাষাভিত্তিক নানা টেস্টের কথা চিন্তা করে বাংলা ভাষার টেস্ট মডিউল-প্রশ্নপত্র এবং উপস্থাপনে নিত্য নতুন স্টাইলেও যুক্ত হওয়ার সুযোগ থাকবে বহু বাংলা-ভাষাভাষির। বাংলা নিয়ে প্রতিনিয়ত তখন গবেষণা চলবে, যা ভাষার আভিজাত্যকে আরও বাড়াবে। তখন লাল-সবুজের অহংকার ছড়িবে পড়বে বিশ্বময়।

‘বাংলা টেস্ট’ নেয়ার এমন উদ্যোগকে কে কী বলবেন আমরা জানি না, তবে আমরা এটুকু বিশ্বাস করি, আমাদের বাংলার অহংকার সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনীর চৌকসদল বিশ্বের নানা স্থানে শান্তি রক্ষায় মহান দায়িত্ব পালন করে প্রথম সারিতে অবস্থান করছেন; তেমনি আমাদের পোশাক শিল্পও প্রতিযোগিতার এ বিশ্বে সবাইকে চমকিত করে বাংলাদেশ আর বাংলাকে ব্রান্ডিং করছে নিরন্তর। পাশাপাশি- সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশের ডাকে সাড়া দিয়ে বর্তমান প্রজন্ম বহু অনলাইন প্লাটফর্ম এবং ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করছে, বিশাল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে আসছে আউটসোর্সিং এবং ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে। একইভাবে বিশ্বের অর্থনৈতিক নানা সূচকেও আমরা প্রতিনিয়ত প্রশংসিত হচ্ছি।

অন্যদিকে, আমাদের বড় সাহস ও প্রেরণা হচ্ছে, আমরাই বিশ্বের একমাত্র জাতি, যাঁরা-ই কেবল ভাষার জন্য যুদ্ধ করেছি, এই ভাষার নামেই একটি দেশ পেয়েছি- বাংলাদেশ। পেয়েছি- বায়ান্নর আত্মত্যাগের স্বীকৃতি হিসেবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

সুতরাং অন্যান্য ভাষার মতো বাংলা ভাষার বিস্তার ও ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখতে, এদেশে যেসব বিদেশিরা কাজ করবেন, তাঁদের জন্য বাংলার একটি টেস্ট থাকাটা যৌক্তিকভাবেই স্বপ্ন দেখছি। আমাদের বিশ্বাস- অন্য জাতীয়, আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক ভাষাকে সম্মান জানানোর পাশাপাশি আমরা বাংলা ভাষাভাষি সবাই চাইবো- বাংলা ভাষারও এমন কিছু একটা থাকুক এবং চালু হোক, যার মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষার পাশাপাশি আমরাও হবো নতুন এক ইতিহাসের অংশ।

আমরা কিন্তু বলছি না যে, ‘বাংলা টেস্ট’ই নাম দিতে হবে; এক্ষেত্রে হয়তো আমাদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা বোদ্ধা মহল নাম, টেস্টের ধরন বা অন্যান্য বিষয় নির্দিষ্ট করবেন। আমাদের স্বপ্ন কেবল ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখা আর বাংলার এ সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দেয়া। তখন আমাদের এ দেশ টেস্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পাবে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেরও আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত।

সবশেষে ‘এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়,/ জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার/ তবু মাথা নোয়াবার নয়’- কবির এ কবিতায় চলুন আরও একবার বাংলা ভাষার জন্য এক হয়ে ইতিহাস গড়ি আর বলি- হোয়াই নট ‘বাংলা টেস্ট?’

লেখক : ব্যাংক কর্মকর্তা এবং ফাউন্ডার, ড্রিম ডিভাইজার

এসইউ/পিআর

আরও পড়ুন