হতাশাই আমার অনুপ্রেরণা : সাদাত হোসাইন
সাদাত হোসাইন সময়ের জনপ্রিয় তরুণ লেখক, উপস্থাপক ও নির্মাতা। তার দীর্ঘ কলেবরের উপন্যাস ‘আরশিনগর’ ও ‘অন্দরমহল’ রীতিমত বিস্মিত করেছে পাঠককে। দুটোই স্থান করে নিয়েছে বেস্ট সেলার উপন্যাসের তালিকায়। বইমেলাতেই চতুর্থ ও পঞ্চম মুদ্রণ ছাপা হয়েছে। এছাড়া তিনি নির্মাণ করেছেন নাটক ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রও। সেখানেও সমান সাড়া ফেলেছেন। বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তুলেছে তার নির্বাক চলচ্চিত্র ‘বোধ’ ও ‘দ্য শ্যুজ’।
ক্যারিয়ারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জাগো জবসের সঙ্গে কথা হয় সাদাত হোসাইনের। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
জাগো জবস : আপনার কাজের শুরুটা কীসের মধ্য দিয়ে?
সাদাত হোসাইন : মূলত ফটোগ্রাফি দিয়ে শুরু। আসলে আমি সবসময়ই গল্প বলতে চাই। গল্প পাঠও করতে চাই। সেই পাঠ কেবল বইপত্র থেকে নয়। চার পাশের মানুষের জীবনের গল্পও আমি রোজ পড়তে চাই। ফলে নিজের ভেতর নানা গল্প জমে গল্প বলার এক তীব্র উদ্দীপনা বোধ করতাম। তখন ভাবনাজুড়ে আসে ফটোগ্রাফি। ছবির মাধ্যমে গল্প বলা। অল্পদিনেই আলোকচিত্রের নানা প্রতিযোগিতায় সফলতা, অসংখ্য প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করি। ছোটবেলায় লেখালেখির প্রতিও আগ্রহ ছিল। কাজ করতে গিয়েই বিখ্যাত আলোকচিত্রী আনোয়ার হোসেনের নিবিড় সান্নিধ্য, অনুপ্রেরণা এবং প্রয়াত আলোকচিত্রী আজিজুর রহিম পিউর আগ্রহে লেখালেখিতে ফিরে আসা। যেহেতু আলোকচিত্র ও লেখালেখিতে সহজাত আগ্রহ ছিল, তাই এর মাধ্যমেই গল্প বলা শুরু। তারপর আসে চলচ্চিত্র। সৃজনশীল তিনটি মাধ্যমেই আমি গল্প বলতে চাই।
জাগো জবস : অন্য কোনো পেশায় যুক্ত আছেন কি?
সাদাত হোসাইন : অ্যাশ প্রোডাকশন নামে আমার একটি হাউজ আছে। আমরা বিজ্ঞাপন, তথ্যচিত্র, চলচ্চিত্র, নাটকসহ সবধরনের প্রফেশনাল ভিডিও কনটেন্ট নির্মাণ করি। এছাড়া এটিএন নিউজের ‘ইয়াং নাইট’র উপস্থাপনা করছি।
জাগো জবস : কার অনুপ্রেরণায় এ পেশায় এলেন?
সাদাত হোসাইন : আলাদা করে আমার কোনো অনুপ্রেরণা নেই। যদি কিছু থাকে তবে সেটি আমার সেই গল্প বলার উদ্দীপনা। তবে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা আমার জীবনের হতাশা। আমি কোনো কাজ করতে গিয়ে ব্যর্থ হলে একধরনের প্রবল হতাশায় ভুগি। সেই হতাশা আমাকে রাতে ঘুমাতে দেয় না। গভীর রাতে আমি বিছানা থেকে উঠে যাই। তারপর ভাবি, আমি কেন ব্যর্থ হলাম। আমাকে আরও কি করতে হবে! আরও কীভাবে পরিকল্পনা সাজাতে হবে। ফলে আমার রাগ চেপে যায়- আমাকে কাজটি করতেই হবে। তখন আমি নতুন করে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ি।
জাগো জবস : একজন উপস্থাপক হিসেবে আপনাকে কী কী করতে হয়?
সাদাত হোসাইন : মুন্নী আপু (সাংবাদিক মুন্নী সাহা) একদিন জানতে চাইলেন আমি উপস্থাপনা করতে চাই কি না। আমি দ্বিধান্বিত ছিলাম। ভয় হচ্ছিল যে পারব কি না! তিনি বললেন, ‘তুমি পারবে। আমি জানি।’ তার এই কথাটুকু খুব আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছিল। সেই আত্মবিশ্বাসে ভর করেই শুরু। তবে উচ্চারণের ক্ষেত্রে মনোযোগী হওয়াটা জরুরি।
জাগো জবস : আপনার কি কোনো প্রশিক্ষণ রয়েছে?
সাদাত হোসাইন : প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ আসলে আমার নেই। তবে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ রয়েছে। আমার একটি ক্যামেরা ছিল। আমি দিনের পর দিন সেই ক্যামেরায় দৃশ্য ধারণ করতাম। লাইট, কম্পোজিশন, কালার নিয়ে কাজ করতাম। চিত্রনাট্য নিয়ে কাজ করতাম। প্রচুর মুভি দেখতাম। ইউটিউবে ভিডিও দেখে নিজে নিজে শেখার চেষ্টা করি। আসলে এই প্রযুক্তির যুগে ইচ্ছে থাকলেই প্রশিক্ষিত হওয়া যায়।
জাগো জবস : আপনার আয় ও সুযোগ-সুবিধা কেমন?
সাদাত হোসাইন : নিজের প্রতিষ্ঠান কেবল শুরু করেছি তিন মাস। কিন্তু এই তিন মাসেই আমরা যে পরিমাণ ক্লায়েন্টের কাজ পেয়েছি, তা আমাদের কাছে অভাবনীয় ছিল। ভাগ্য ভালো যে আমরা বড় বড় কিছু ক্লায়েন্টের কাজ পেয়েছি এবং তারা আমাদের কাজে সন্তুষ্ট। আমার সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, আমি আমার নিজের মত করে নিজের কাজগুলো করতে পারি। আর পারি কিছু প্রিয় মানুষের সাথে কাজ করতে। সাথে আর্থিক প্রাপ্তির বিষয়টি নিয়েও সন্তুষ্ট।
জাগো জবস : যারা আপনার মতো হতে চান, তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
সাদাত হোসাইন : ‘হাল ছেড় না বন্ধু, বরং কণ্ঠ ছাড় জোরে।’ কোনো অবস্থাতেই হাল ছাড়া যাবে না। জগতে খারাপ এবং ভালো কোনটিই নিরবচ্ছিন্ন নয়। সুতরাং হাল ছাড়া মানে খারাপ পরিস্থিতির শেষে যে ভালো অপেক্ষায় ছিল, সেই ভালোকে উপেক্ষা করা। আর স্বপ্ন থাকতে হবে। স্বপ্ন সফল করতে চেষ্টা থাকতে হবে। সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা ও সততা থাকতে হবে। একটুতেই হতাশ হলে চলবে না। আর কোনো অজুহাত দেয়া যাবে না। বরং ভাবতে হবে যা-ই ঘটুক আমাকে পারতেই হবে, আমি পারবই।
জাগো জবস : লেখালিখি নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
সাদাত হোসাইন : আমার দীর্ঘ কলেবরের উপন্যাস ‘আরশিনগর’ এবং ‘অন্দরমহল’ই মূলত আমাকে স্বপ্ন দেখিয়েছে। অন্দরমহল সাড়ে চারশ পৃষ্ঠার উপন্যাস, দাম সাড়ে পাঁচশ টাকা। বিস্ময়কর ব্যাপার হল- কেবল অমর একুশে বইমেলাতেই বইটি অবিশ্বাস্য আলোড়ন তুলেছে। বইমেলার মধ্যেই বের হয়েছে পাঁচটি মুদ্রণ! সমানভাবে সাড়া ফেলেছে আরশিনগরও। ২০১৫ সালে প্রকাশিত বইটি শেষে দুই বছর ধরে এক মুহূর্তের জন্যও তার আবেদন হারায়নি। শুধু দেশেই না, দেশের বাইরে কলকাতা এবং নিউইয়র্ক বইমেলায়ও বই দু’টি তুমুল আলোচিত হয়েছে। সামনের বইমেলায় আসছে আমার নতুন উপন্যাস ‘মানবজনম’।
জাগো জবস : সফলতা বলতে আপনি কী বোঝেন?
সাদাত হোসাইন : আমার কাছে সফলতা মানে সন্তুষ্টি, তৃপ্তি, শান্তি। আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী মানুষ হতে পারেন, কিন্তু তাতে আপনার সন্তুষ্টি, তৃপ্তি, শান্তি না-ও থাকতে পারে। ফলে অর্থ, বিত্ত নয়, আমার কাছে সন্তুষ্টি, তৃপ্তি, শান্তিটাই সফলতা।
এসইউ/এইচআর/এবিএস