চারুশিল্পী হতে চাইলে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রতিবছর আয়োজন করে চারুকলা ভর্তি সহায়ক কর্মশালা। তরুণ শিল্পীদের একান্ত পরিশ্রমে ছবি আঁকা ও বোঝার কিছু প্রাথমিক ধারণা দেয়ার প্রয়াস থেকে পরিচালিত হয় এই কর্মশালা। শিল্পশিক্ষা ও সৃজনশীলতায় আগ্রহী করে তোলা এবং চারুকলার জন্য উদ্যমী শিল্পশিক্ষার্থী তৈরি করা এ কর্মশালার মূল লক্ষ্য।
চারুকলা অনুষদের এই কর্মশালার রেওয়াজ দীর্ঘদিনের। কর্মশালা চারুকলা প্রাঙ্গনেই হয়, দেয়া হয় ড্রয়িং, স্কেচ, শিল্পকলার ইতিহাস, সংস্কৃতি ও দর্শনের প্রথম পাঠ, যা ছবি আঁকার জন্য একান্ত জরুরি। যেমন স্টিল লাইফ ছবি আঁকতে মাপ-ঝোঁক জানা, আবার ফিগার ড্রয়িংয়ের জন্য পরিপ্রেক্ষিত বোঝার গুরুত্বটা অনেকখানি। তেমনি প্রকৃতির নৈসর্গিক দৃশ্য আঁকতে গেলে জানতে হয় কম্পোজিশন।
জীবনবোধ ও সৃজনশীলতার সমন্বয়ের জন্য জানা চাই শিল্পকলার ইতিহাস। গড়তে হয় শিল্পপ্রাণ ও সৃজনশীল মনোভাব। স্বপ্নের এ জায়গায় স্থায়ী হতে চাইলে অবতীর্ণ হতে হয় প্রতিযোগিতামূলক ভর্তিযুদ্ধে। আর তাই কর্মশালায় যত্নসহকারে চারুকলা অনুষদে ভর্তির প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়।
সবশেষে হয়তো বা সবার সুযোগ মেলে না। বর্তমানে ৮টি বিভাগ মিলিয়ে রয়েছে ১৩৫টি আসন। তবে ছবি আঁকার বিষয়ে আগ্রহী ছেলে-মেয়েরা এই কর্মশালায় অনেক ফলপ্রসূ বিষয়াদি শিখে নিতে পারে। তাই শুধু ভর্তির সুযোগ পাওয়াটাই মুখ্য নয়, এই প্রাথমিক ধারণাগুলো যারা ছবি আঁকতে ভালোবাসে তাদের সকলের জন্য একান্ত প্রয়োজনীয়। এ কারণে কর্মশালায় অংশগ্রহণ করতে পারে যেকোনো শিল্পপিপাসু।
চারুশিল্পী হওয়ার ইচ্ছে যদি থাকে। যদি পড়তে চান চারুকলায়। সেইসব বন্ধুদের জন্যই এই আয়োজন। সৃষ্টিশীল পড়াশোনা হয় চারুকলায়। শিল্প-সংস্কৃতির দিকে যাদের আগ্রহ বেশি তাদের জন্য উপযুক্ত চারুকলা।
যেখানে পড়বেন
দেশে চারুকলা বিষয়ে পড়াশোনার সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। এর যাত্রা শুরু হয় ১৯৪৮ সালে। প্রতিষ্ঠাকালীন নাম ছিল গভর্নমেন্ট আর্ট ইনস্টিটিউট। অধ্যক্ষ ছিলেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে খুলনা ও নারায়ণগঞ্জে আর্ট কলেজ রয়েছে। এছাড়া বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা রয়েছে।
যেসব বিষয় পড়ানো হয়
চারুকলার শিক্ষার্থীদের জন্য ৮টি বিভাগ রয়েছে। এগুলো হলো- অঙ্কন ও চিত্রায়ণ, গ্রাফিক ডিজাইন, ছাপচিত্র, ভাস্কর্য, প্রাচ্যকলা, মৃৎশিল্প, কারুশিল্প এবং শিল্পকলার ইতিহাস। ইনস্টিটিউটে সব বিষয় সম্পর্কে সাধারণ ভিত্তিমূলক ধারণা দেয়ার জন্য একটি ‘সমন্বিত পাঠ্যক্রমের’ আওতায় পাঠদান করা হয়। ক্লাস শুরুর ছয় মাসের মধ্যেই বিভাগ অন্তর্ভুক্তির কাজ শেষ করা হয়।
যোগ্যতা ও কোর্সের মেয়াদ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চারুকলা অনুষদের অধীনে প্রতিটি বিভাগে ০৪ বছরমেয়াদি অনার্স কোর্স এবং এক বছরমেয়াদি মাস্টার্স কোর্স চালু রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা অনুষদের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ‘চ’ ইউনিটের মাধ্যমে। এ অনুষদে ভর্তির জন্য আবেদন করতে হলে শিক্ষার্থীর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার জিপিএ আলাদাভাবে ৩ এবং একত্রে ন্যূনতম ৬.৫০ থাকতে হয়।
পরীক্ষা পদ্ধতি
চারুকলা অনুষদের ভর্তি পরীক্ষা দু’টি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংঘটিত হয়। তত্ত্বীয় এবং ব্যবহারিক। এছাড়া ভর্তি প্রার্থীকে তত্ত্বীয় এবং ব্যবহারিকে আলাদাভাবে পাস করতে হবে।
ড্রয়িং
এ বিভাগে ভর্তিচ্ছু প্রার্থীদের সামনে মানুষ বা কোনো বস্তুকে মডেল হিসেবে রাখা হয়। পরীক্ষার্থীকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সরবরাহকৃত কাগজে পেন্সিলের মাধ্যমে মডেলটির অবয়ব ফুটিয়ে তুলতে হয়।
ডিজাইন
বিভিন্ন কর্ম (ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, বৃত্ত) আকার-আকৃতি ও রেখার সমন্বয়ে ‘সাদা-কালো’তে নির্দিষ্ট মাপে ডিজাইন করতে হয়। ফুল, লতা-পাতা, পাখি, রেখা ইত্যাদি সমন্বয়ে ডিজাইন তৈরি করতে হয়। ডিজাইন আঁকা নির্দিষ্ট কাগজে কালো কালি ও তুলির মাধ্যমে হয়ে থাকে।
যাদের স্বপ্নটা একটু অন্য রকম। হতে চান চারুশিল্পী। শিল্প যাদের ধ্যান-জ্ঞান। পড়তে পারেন চারুকলায়। তাই এখনই ভর্তির প্রস্তুতি শুরু করে দেন। সময় নষ্ট না করে চারুকলায় পড়াশোনার জোর প্রস্তুতি চালিয়ে যান। ভবিষ্যতের চারুশিল্পী নিজেকে সঠিকভাবে তৈরি করার সঙ্গে দেশ গড়ার প্রত্যয়ে বলীয়ান হয়ে এগিয়ে চলুন।
এসইউ/এমএস