ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাগো জবস

ব্যর্থতা মানে হেরে যাওয়া নয়

প্রকাশিত: ১০:১৪ এএম, ১৩ জুলাই ২০১৬

ছেলেটি বলল, ‘আঙ্কেল– বিরাট এক হোন্ডা মিছিল! বের হয়ে দেখলাম, মিছিলে প্রায় শ’খানেক মোটরসাইকেল। কিন্তু একটিও হোন্ডা নেই। দু’একটি ব্র্যান্ড চিনলেও– বাকিগুলো নাম না জানা কোম্পানির বাইক।’ ঠিক এভাবেই বহুবছর ধরেই মোটরসাইকেল মানেই হোন্ডাকে বোঝানো হয় আমাদের দেশে। আর যিনি এই জনপ্রিয় যানটি তৈরি করেছিলেন, তার নামটি হচ্ছে ‘সইচিরো হোন্ডা!’

জাপানের হামামাতসু ছোট শহরে তাঁতি মা আর কামার বাবার ঘরে জন্ম নেয়া এক কিংবদন্তি মি. হোন্ডা। বাবার একটি সাইকেল মেরামতের দোকান ছিল– ছোট্ট সইচিরো বাবাকে দোকানে সহায়তা করতো। সে সময় জাপানে একটি নিয়ম ছিল, বার্ষিক পরীক্ষার রিপোর্টটি ছাত্রদের দিয়ে দেয়া হতো– আর তা প্রত্যেকের বাড়ি থেকে অভিভাবককে দেখিয়ে পারিবারিক সীল মেরে পুনরায় স্কুলে জমা দিতে হতো। কিন্তু তিনি ভালো ছাত্র ছিলেন না। তাই নিজেই নকল সীল বানিয়ে সীল মেরে জমা দিতেন। এই বিষয়টি ধরা পড়ার পর বাবার কাছে তাকে কঠিন শাস্তি পেতে হয়েছিল।

১৯২২ সালে স্কুল শেষ করে তিনি চাকরি খুঁজতে থাকেন এবং পেয়েও যান— রাজধানী টোকিওর একটি গাড়ি মেরামতের দোকান ‘আর্টো শুকাই’ এ সহকারী হিসেবে। বয়স কম, কোন অভিজ্ঞতা নেই– কাজ শুধু ধোয়া-মোছা এবং স্টাফদের খাবার তৈরি। তবে মালিকের অনুমতি নিয়ে তাদেরই অন্য একটি দোকানে রেসিং কার ডিজাইনে সহযোগিতার কাজ করতে থাকেন।

soichiro-honda

১৯২৩ সালে এক ভূমিকম্পে দোকানের গ্যারেজে আগুন ধরলে তিনি একাই অনেক দামি ৩টি রেসিং কার রক্ষা করে মালিকের সুনজরে পড়ে যান। তারপর থেকে মালিকের সঙ্গে সরাসরি রেসিং কার ডিজাইনে সহযোগিতার কাজ করতে থাকেন।

১৯২৪ সালে জাপান রেসিং কার প্রতিযোগিতায় ১ম স্থান অধিকারী টিমে মেকানিক হিসেবে ছিল হোন্ডা। পরবর্তী ৫ বছরে হোন্ডা ‘আর্টো শুকাই’কে টোকিওর একটি জনপ্রিয় সার্ভিস সেন্টারে পরিণত করেন। সার্ভিস সেন্টারটির বেশ কয়েকটি শাখা খোলা হয় এবং এর একটি শাখায় প্রধান হিসেবে কাজ শুরু করেন ২১ বছর বয়সী হোন্ডা। কিন্তু তার ব্রত ছিলো অনেক দূর পাড়ি দেয়ার, তাই চাকরির পাশাপাশি নিজের সব জমানো টাকা খরচ করে এমনকি স্ত্রীর গহনা বন্ধক রেখে গাড়ির পিস্টন বানানো শুরু করেন। কিন্তু তার বানানো পিস্টনগুলো তেমন ভালো হচ্ছিল না– তিনি উপলব্ধি করলেন তার কারিগরী জ্ঞানটুকু আরো বাড়ানো দরকার। তাই তিনি এ বয়সেও একটি টেকনিক্যাল স্কুলে ভর্তি হন।

১৯৩৬ সালে একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় হোন্ডার একটি হাত ভেঙে যায় এবং হাসপাতালে শুয়ে থেকে তিনি দু’টি খারাপ সংবাদ শুনতে পান– প্রথমটি, টয়োটা কোম্পানিতে পরীক্ষার জন্য পাঠানো তার এতদিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল ৩০ হাজার পিস্টনের মধ্যে মাত্র ৩টি কোয়ালিটি কন্ট্রোলে পাস করে। দ্বিতীয়টি, তাকে টেকনিক্যাল স্কুল থেকে অব্যাহতি দেয়ার খবর।

soichiro-honda

সুস্থতার পর ভেঙে না পড়ে ১৯৩৭ সালে হোন্ডা নিজেই ‘টোকাই সিকি’ নামে একটি কোম্পানি দিয়ে নতুন উদ্যমে পিস্টন বানানো শুরু করেন এবং কোয়ালিটি ভালো করে সেই টয়োটা কোম্পানিতেই সরবরাহ করতে থাকেন। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন শুধু টয়োটাতেই প্রায় ৪০% পিস্টন সাপ্লাই করতেন। কিন্তু ১৯৪৫ সালে যুদ্ধ শেষের দিকে তার কারখানার শহরে আমেরিকান বিমান বাহিনী বোমা ফেলে প্রচুর ক্ষতিসাধন করে। ফলে তিনি তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি টয়োটা কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেন মাত্র সাড়ে ৪ লাখ ইয়েনে। তারপর বছরখানেকের জন্য পর্দার আড়ালে চলে যান।

এরপর ১৯৪৬ সালে ফিরে এসে প্রতিষ্ঠা করেন ‘হোন্ডা টেকনোলজি রিসার্স ইনস্টিটিউট’। যা পরবর্তী দুই বছরে ‘হোন্ডা মোটর কোম্পানি’তে রূপান্তর করেন। তিনি একটি সাধারণ বাইসাইকেলে ছোট একটি ইঞ্জিন লাগিয়ে তৈরি করেন হোন্ডার প্রথম মোটরসাইকেল। যার তেলের ট্যাঙ্কটি ছিল ছোট একটি পানির বোতল দিয়ে তৈরি।

সেই যে শুরু, তাকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। আজ বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই যার জয় জয়কার– শুধু মোটরসাইকেল নয়, গাড়ি, জেনারেটর, মেরিন মেশিনারিজ, এমনকি জেট বিমানও তৈরি করছে এই কোম্পানি।

তাই বলা যায়, ব্যর্থতা মানে হেরে যাওয়া নয়। এ যেন হয় নবোদ্যমে প্রবলতর করে নিজেকে সাজানো। সামনে এগুনো!

উইকিপিডিয়া অবলম্বনে

এসইউ/এবিএস

আরও পড়ুন