ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাগো জবস

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তি নিয়ে পড়ছেন শিহাব

আনিসুল ইসলাম নাঈম | প্রকাশিত: ০১:৪৪ পিএম, ৩০ নভেম্বর ২০২৪

আহমেদ ফাহিম শিহাব ঢাকার সন্তান। ধানমন্ডি গভর্নমেন্ট বয়েজ হাই স্কুল থেকে এসএসসি এবং বিএএফ শাহীন কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর বিদেশে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আবেদন করেন। নানা বাধা পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তি নিয়ে পড়ার সুযোগ পান। বর্তমানে পড়ছেন অর্থনীতি ও কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগে। তার পড়াশোনা ও পথচলার গল্প শুনিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম

জাগো নিউজ: আপনার শৈশব ও বেড়ে ওঠা সম্পর্কে জানতে চাই—
আহমেদ ফাহিম শিহাব: আমার শৈশব ও বেড়ে ওঠা ধানমন্ডির কলাবাগান এলাকায়। বাবা-মা এবং দুই বোন নিয়ে আমাদের পরিবার। একেবারে ছোট থাকতে ক্রিকেটার হওয়ার ইচ্ছে ছিল। তবে কৈশোরে থাকতে স্বপ্ন পাল্টায়। তখন অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হতে চাইতাম। বাবা ঢাকা ওয়াসার কর্মকর্তা ছিলেন। মা এক সময় স্কুলে শিক্ষকতা করতেন, বর্তমানে গৃহিণী। বড় বোন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন এবং ছোট বোন কানাডায় মাস্টার্স শেষ করেছেন।

জাগো নিউজ: পড়াশোনার পাশাপাশি কী ধরনের সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছিলেন?
আহমেদ ফাহিম শিহাব: আমার প্রাইমারির পাঠ শুরু হয়েছে ধানমন্ডি গভর্নমেন্ট বয়েজ হাই স্কুলে। ক্লাস ওয়ান থেকে টেন পর্যন্ত এই স্কুল থেকেই পড়াশোনা চলে। ক্লাস সেভেন থেকে ডিবেট করতাম। স্কুল ডিবেট ক্লাবের সভাপতি ছিলাম। ওয়ার্ল্ড স্কুল ডিবেট চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের জাতীয় ক্যাম্পেইনে দুবার ছিলাম। এরপর স্কুলের ডিবেট ক্লাবের কোচ ছিলাম। এসএসসি পাসের পর বিএএফ শাহীন কলেজে ভর্তি হই। কলেজে উঠে ডিবেট শুরু করি। সেখানে ইংলিশ টিমের ক্যাপ্টেন ছিলাম। স্কুলে প্রথম কুইজ ক্লাব শুরু করি। কলেজে কুইজ ক্লাবের সভাপতি ছিলাম। স্কুলের কুইজ ক্লাবের কো-ফাউন্ডার ও সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। পাশাপাশি স্পেকর্প নামের একটি বিজনেস অর্গানাইজেশনের হেড ছিলাম—এর মাধ্যমে বিভিন্ন বিজনেস কেস কম্পিটিশন জিতেছি এবং নিজের স্টার্টআপ ভিশন নিয়ে কাজ করেছি। আন্তজার্তিক রেসকিউ কমিটিতে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে জনস্বাস্থ্য-বিষয়ক একটি রিসার্চ করেছি। এ ছাড়া ইংরেজি পত্রিকায় লেখালেখি করতাম। বিভিন্ন অর্গানাইজেশনে ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করেছি। জার্নালিজম ও পাবলিকেশনের দিকেও কিছু কাজ ছিল। ২০২২ সালের শেষে এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হয়।

জাগো নিউজ: যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?
আহমেদ ফাহিম শিহাব: আমি এনসিটিবি কারিকুলামে পড়াশোনা করেছি। তবে আমার আগ্রহ ও জানার পরিধির জায়গা থেকে এই কারিকুলামটা যথেষ্ট ছিল না। বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য পর্যাপ্ত সাপোর্ট সিস্টেমের অভাব এবং প্রায়োগিক শিক্ষার ওপর যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করা হয় না। কিন্তু আমার কোনো একটা বিষয় নিয়ে জানার আগ্রহ থাকতো। সেই থেকে চিন্তা করতাম—এর থেকে ভিন্ন বা উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে যাওয়ার যায় কি না। প্রথম থেকে বিদেশে বা হার্ভার্ডে পড়াশোনার তেমন ইচ্ছে ছিল না। একাদশ শ্রেণিতে পড়াশোনাকালীন বিদেশে পড়াশোনার কথা চিন্তা করি। পাশাপাশি আমেরিকায় পড়াশোনার কথা ভাবতে থাকি। একসময় আমেরিকার টপ বিশ্ববিদ্যালয় হার্ভার্ডে পড়াশোনার স্বপ্ন দেখতে থাকি।

জাগো নিউজ: এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তি নিয়ে পড়ার সুযোগ পাওয়ার গল্প শুনতে চাই—
আহমেদ ফাহিম শিহাব: আমেরিকায় লিবারেল আর্টস কলেজে এবং হার্ভার্ডে আবেদন প্রক্রিয়া প্রায় একই। কমন অ্যাপ্লিকেশনে সাধারণত আবেদন করা হয়। প্রথমে একটি কমন অ্যাপ্লিকেশনে গিয়ে একটা প্রোফাইল তৈরি করতে হয়। এখানে নিজের সব ধরনের তথ্য দিয়ে পূরণ করতে হয়। কোনো পরীক্ষা স্কোর থাকলে যোগ করতে হয়। নিজের জীবনের সেরা কিছু অ্যাক্টিভিটিস থাকলে অ্যাড করতে হয়। ৫টি সেরা অর্জনের বিষয় উল্লেখ করতে হয়। এই পুরো প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আমাকে যেতে হয়েছে। কমন অ্যাপ্লিকেশন পূরণের পর হার্ভার্ডে কিছু সাপ্লিমেন্টারি এসে লিখতে হয়। আমি রুমম্যাট এসে লিখি। এরপর নিজের এক্সট্রাকারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিসের ওপর হার্ভার্ডের সাপ্লিমেন্টারি এসে লিখি। এ ছাড়া হার্ভার্ডে চান্স পেলে কী করবো—এটা নিয়ে একটা শর্ট এসে লিখতে হয়। এগুলো কমন অ্যাপে অ্যাড করার পর হার্ভার্ড থেকে ইন্টারভিউয়ের জন্য শর্টলিস্ট করা হয়। ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর অ্যাপ্লাই করি। এরপর ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকা হয়। আমার ইন্টারভিউটা হার্ভার্ডের একজন অ্যালামনাই নিয়েছিলেন। আমেরিকার অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে হার্ভার্ডের ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া একটু আলাদা। কারণ এখানে ব্যক্তিগত বিষয়ে গভীর থেকে জানতে চাওয়া হয়। ক্যারিয়ার প্লান ও বর্তমান অবস্থা নিয়ে বিভিন্ন বিষয় জানতে চাওয়া হয়। এভাবে দেড় ঘণ্টার ইন্টারভিউ শেষ হয়। আমার হার্ভার্ভ থেকে স্কলারশিপ প্রয়োজন ছিল। তাই কলেজ স্কলারশিপ সার্ভিসে (সিএসএস) আবেদন করি। এখান থেকে মূলত ফান্ডিং করা হয়। এরপর প্রায় দুই মাস পর অফার লেটার হাতে আসে।

আরও পড়ুন

জাগো নিউজ: বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন, অনুভূতি কেমন ছিল?
আহমেদ ফাহিম শিহাব: ২০২৩ সালের মার্চের ৩১ তারিখ ভোর পাঁচটায় অফার লেটার আসে। অনেক নার্ভাস ছিলাম সেদিন। সারারাত ঘুমাতে পারিনি। রোজার মাস, সেহরি করে মাত্র ঘুমাতে যাচ্ছিলাম। তখন অফার লেটার মেসেজ পাই। সেই সময়টা অনেক উত্তেজনার ছিল! বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা ও বিদেশে পড়ার প্রক্রিয়া এক সাথে নিতে হয়েছিল। তবে অফার লেটার হাতে পাওয়ার পর সব কষ্ট ভুলে যাই। সংবাদটি প্রথম বাবা-মাকে জানাই। এরপর আমার বোনকে, বন্ধুবান্ধব ও কাছের মানুষদের জানাই।

জাগো নিউজ: হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়?
আহমেদ ফাহিম শিহাব: হার্ভার্ড থেকে আমাকে ফুল রাইড স্কলারশিপ দেওয়া হয়। স্কলারশিপের আওতায় আমার পড়াশোনা, থাকা-খাওয়া, ট্রান্সপোর্ট খরচ দেওয়া হয়। আমাকে হার্ভার্ডে পড়াশোনার জন্য খরচ দিতে হয় না। এ ছাড়া কাজের সুযোগ রয়েছে। এফ-১ ভিসা থাকলে সেমিস্টার চলাকালীন ২০ ঘণ্টা এবং সেমিস্টার বন্ধ থাকলে ৪০ ঘণ্টা কাজের সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে আমি হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলে একজন প্রফেসরের আন্ডারে রিসার্চ অ্যাসিস্টেন্ট হিসেবে কাজ করছি।

জাগো নিউজ: এই বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেতে কীভাবে আবেদন করতে হয়?
আহমেদ ফাহিম শিহাব: আমেরিকায় বা হার্ভার্ডে আবেদনের ক্ষেত্রে কমন অ্যাপের মাধ্যমে আবেদন করতে হয়। ইন্টারভিউয়ে ডাক পেতে প্রোফাইলের ওপর অনেকটা নির্ভর করে। প্রোফাইলে টেস্ট স্কোর থাকলে অ্যাড করতে হয়। নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির অ্যাকাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট দিতে হয়। ‘এ’ এবং ‘ও’ লেভেল কারিকুলাম থাকলে স্কোর অ্যাড করতে হয়। নিজের কলেজ এবং স্কুলের শিক্ষকদের থেকে রিকমেন্ডেশন লেটার নিতে হবে। এ ছাড়া রিসার্চ সুপারভাইজার বা ডিবেট কোচ হিসেবে অ্যাডিশনাল রিকমেন্ডেশন লেটার নিতে পারলে ভালো। আন্ডারগ্র্যাজুয়েট স্কুলের জন্য স্যাট স্কোর থাকলে অ্যাড করতে হবে। এটি হোলিস্টিক অ্যাপ্লিকেশন প্রক্রিয়া। ভর্তির সময় শিক্ষার্থীর পুরো প্রোফাইল বিবেচনা করা হয়। আইইএলটিএস স্কোর দিয়ে শুধু ভাষা দক্ষতা দেখা হয়।

জাগো নিউজ: যারা এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চান, তাদের জন্য আপনার পরামর্শ—
আহমেদ ফাহিম শিহাব: নতুনদের নিজের অ্যাকাডেমিক জার্নিটা উপভোগ করতে হবে। অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার বাইরে আরও কিছু জানার ইচ্ছে থাকলে বিদেশে পড়াশোনার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। হার্ভার্ডে অ্যাকাডেমিক প্রেশার কিছুটা হাই থাকবে। এটা মানিয়ে নেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। নিজের এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিসে উন্নতি করতে হবে। এ ছাড়া এসে এবং রিকমেন্ডেশন লেটারের দিকে আগেভাগেই নজর দিতে হবে।

এসইউ/এমএস

আরও পড়ুন