ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাগো জবস

বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি

নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে: তাশরিফুল ইসলাম

আনিসুল ইসলাম নাঈম | প্রকাশিত: ০৩:৪৬ পিএম, ২৫ অক্টোবর ২০২৪

মো. তাশরিফুল ইসলাম বাংলাদেশ ব্যাংকের অফিসার (জেনারেল) পদে চাকরি পেয়েছেন। তিনি কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলার সাভিয়ানগর গ্রামের সন্তান। কিন্তু বাবার চাকরির সুবাদে বেড়ে ওঠা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাছিরনগর উপজেলার কচুয়া গ্রামে। তিনি মাদ্রাসা-ই-মিরাণীয়া কচুয়া দরবার শরীফ থেকে দাখিল (এসএসসি) এবং দারুন নাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদরাসা থেকে আলিম (এইচএসসি) পাস করেন। এরপর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করেন।

সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি পাওয়ার গল্প ও নতুনদের পরামর্শ নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—

জাগো নিউজ: আপনার শৈশব ও পড়াশোনা সম্পর্কে জানতে চাই—
মো. তাশরিফুল ইসলাম: আমার আব্বা একজন মাদ্রাসা শিক্ষক। যখন আমি প্রথম শ্রেণিতে পড়ি; তখন আমাদের বাড়ি ছেড়ে আব্বার কর্মস্থলে চলে যাই। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্তর্গত নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নের কচুয়া গ্রামেই পরে আমার শৈশব কেটেছে। এই গ্রামের প্রতিটি মানুষ আমাকে এতটাই আপন করে নিয়েছিল যে, আমার বাড়ি ছাড়ার অনুভূতি কখনোই অনুভব করিনি। দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত কচুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি। কিন্তু পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি না পাওয়ায় আমার শ্রদ্ধেয় মামা মুহাম্মদ তারিকুল ইসলাম খাঁনের তত্ত্বাবধানে বাঙ্গালপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে আবারও পঞ্চম শ্রেণি পাস করি এবং বৃত্তিপ্রাপ্ত হই। এরপর ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বাবার চাকরি করা প্রতিষ্ঠান মাদ্রাসা-ই-মিরাণীয়া কচুয়া দরবার শরীফ দাখিল মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছি। দাখিল (এসএসসি) পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকার ডেমরার দারুন নাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদরাসা থেকে আলিম (এইচএসসি) পাস করি। এরপর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেছি।

জাগো নিউজ: বাংলাদেশ ব্যাংকে ‘অফিসার (জেনারেল)’ পদে চাকরির অনুভূতি কেমন ছিল?
মো. তাশরিফুল ইসলাম: আমার কেন্দ্রীয় ব্যাংকার হওয়ার সংবাদ পাওয়ার অনুভূতি অভাবনীয় ছিল! আমি তখন সোনালী ব্যাংকে ‘অফিসার জেনারেল’ হিসেবে চাকরি করি এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে ‘সিনিয়র অফিসার’ হিসেবে জয়েন করার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। তখন বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার (জেনারেল) ফাইনাল রেজাল্টের অপেক্ষায় ছিলাম। যদি বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে জয়েনের পূর্বেই রেজাল্ট হয়ে যায়, তাহলে আর সোনালী ব্যাংকের চাকরিটা ছাড়বো না। কিন্তু অপেক্ষা করতে করতে ২০২৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি চাকরি ছেড়ে পরদিন সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্যে বাসে ওঠার পরই রেজাল্ট হয়। রেজাল্ট শিটে আমার রোল দেখে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাই। সত্যি বলতে, এর আগেও ৪টা সরকারি চাকরি পেয়েছি। কিন্তু একজন কেন্দ্রীয় ব্যাংকার হওয়ার আমন্ত্রণের সংবাদটা ছিল অন্যরকম। এটা কেবলই অনুভব করা যাবে, ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এটা অনেক চাকরিপ্রত্যাশীর স্বপ্নের জায়গা।

জাগো নিউজ: বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরির স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?
মো. তাশরিফুল ইসলাম: আমাদের পরিবারে মোটামুটি সবাই শিক্ষক। ছোটবেলা থেকে তাই শিক্ষকতার বাইরে চিন্তা করতাম না। একদিন আমার ডিপার্টমেন্টের কামরুল ভাই (বর্তমানে নন-ক্যাডার থেকে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার), ভার্সিটির মাছুম ভাইয়ের মতিঝিল অফিসে চা পান শেষে তাদের একটা ছবি ফেসবুকে পোস্ট দেন। সেই পোস্টে মাছুম ভাইকে ট্যাগ দেন এবং সেটা দেখে মাছুম ভাইকে ফলো করা শুরু করি। তার ইংরেজি লেখার দক্ষতায় অভিভূত হই। ভাবতে থাকি তার মতো ইংরেজি শিখতে ও লিখতে চাই। তার মতো বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি করতে চাই। তখন থেকেই সুপ্ত অবস্থায় স্বপ্নটা তৈরি হয়। প্রাইমারির কলিগরা আমাকে বলতেন ‘বিবি (বাংলাদেশ ব্যাংক)’। তাদের কথায় সুপ্ত স্বপ্নটা মাথাচাড়া দিয়েছিল এবং বুকে গেঁথে গিয়েছিল। সেই থেকেই সিরিয়াসলি স্বপ্ন দেখতাম একদিন সেন্ট্রাল ব্যাংকার হবো।

জাগো নিউজ: বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি পাওয়ার গল্প শুনতে চাই, প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছেন?
মো. তাশরিফুল ইসলাম: অনার্স যখন শেষ হবে; তখন বিসিএস নিয়ে প্রচুর ফ্যাসিনেশন কাজ করতো। অনেক পড়াশোনা করে ৪০তম বিসিএসে প্রথমবার অংশগ্রহণ করি। কিন্তু খুবই অল্পের (সম্ভবত .৫ বা ১ মার্ক) জন্য পিছলে যাই। এরপর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি এবং উপজেলা পর্যায়ে প্রথম হয়ে ২০২০ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি চাকরিতে জয়েন করি। জয়েন করার কিছুদিন পরই করোনার প্রকোপে স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময়ই ব্যাংক নিয়ে সিরিয়াসলি চিন্তা করি। করোনার বন্ধ শুরুর পর থেকেই টেবিলে বসলাম আর ভাবলাম প্ল্যান বি ইমপ্লিমেন্ট করতে হবে। এজন্য যা কিছু করা লাগে এই করোনার ভেতরেই করতে হবে। স্কুল খুলে ফেললে আর পড়াশোনার সুযোগ পাবো না। এরপর নিয়মিত পড়াশোনা শুরু করলাম ব্যাংক নিয়ে। ১২-১৪ ঘণ্টা করে ব্যাংকের প্রিলি ও রিটেন একসাথে কাভার করার জন্য সময় দিতাম। পুরো সময়টা সর্বোচ্চ ইউটিলাইজ করার চেষ্টা করেছি। আমি শুধু একটা কথাই মাথায় রাখতাম, জীবনের কোনো পর্যায়ে গিয়ে যেন আমার মনে না হয়, আরেকটু পরিশ্রম বেশি করলে হয়তো একটা চাকরি পেয়ে যেতাম। আমি যেন কোথাও চাকরি না পেলেও নিজের কাছে সারাজীবন নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে, আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।

জাগো নিউজ: আড়াল থেকে সব সময় কারা অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন?
মো. তাশরিফুল ইসলাম: আমার বাবা, নিঃসন্দেহে তার অবদান সর্বোচ্চ। বাবার একমাত্র কথা ছিল, ‘পড়াশোনা ঠিক রেখে যা কিছু করার করবা’। পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটবে এমন কোনো কিছুর সাথে যেন কম্প্রোমাইজ না করি। আম্মা, পড়াশোনার জন্য আমাকে এক মিনিটও অপচয় না করতে অনুপ্রেরণা দিতেন। সুস্থ কিংবা অসুস্থ যে কোনো অবস্থায়ই গৃহস্থলির সব কাজ একাই সামলে নিয়ে পড়াশোনার সুযোগ দিতেন।

জাগো নিউজ: বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি পেতে নতুনরা কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?
মো. তাশরিফুল ইসলাম: বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক বেশি প্রতিযোগিতাপূর্ণ জায়গা। এখানে জায়গা পেতে হলে মেধার পাশাপাশি মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার রহমত লাগবে। আমাদের সময়ে প্রায় দুই লাখ আবেদনকারী থেকে ২০০ জন বাছাই করা হয়। এখানে ‘বাদ দেওয়া সম্ভব নয়’ এমন প্রার্থী থাকে অন্তত এক হাজারের ওপরে। তাদের কোনো ক্রাইটেরিয়াতেই বাদ দেওয়া যাবে না। তারপরও ২০০ কিংবা ১০০ জন বাছাই করা হয়। বুঝতেই পারছেন, মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার রহমত ছাড়া এখানে কেবল পরিশ্রম দিয়ে জায়গা করে নেওয়া খুব কঠিন। নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে এবং নিজের চাকরির জন্য দোয়া করতে হবে। নিজের ব্যাটারমেন্টের জন্য নিজের সর্বোচ্চ ডেডিকেশন, নিজের পড়াশোনার প্রতি সর্বোচ্চ প্রায়োরিটি আর পড়াশোনাটা সঠিক পথে আগাচ্ছে কি না সেই দিকটা খেয়াল রাখা। নিজের গ্যাপ বুঝতে পারা এবং সেই জায়গায় বেশি সময় দেওয়াটা জরুরি। বর্তমান পরীক্ষা পদ্ধতি অনুযায়ী রিটেনে বেশি জোর দেওয়া উচিত বলে মনে করি।

জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
মো. তাশরিফুল ইসলাম: বাংলাদেশ ব্যাংকে থেকে নিজের সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলতার সাথে আমার কাজ সম্পাদন করতে চাই। পাশাপাশি একটা পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করার ইচ্ছা আছে।

এসইউ/এএসএম

আরও পড়ুন