বিসিএস জয়ে গ্রুপ স্ট্যাডিকে প্রাধান্য দিয়েছি: ইমাম হোসেন
মো. ইমাম হোসেন ৪১তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তিনি চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার রাগৈ গ্রামের সন্তান। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে তার বেড়ে ওঠা। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। ব্যবসায়ী বাবাই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম। ছেলেবেলা থেকেই গ্রামের মেঠোপথ, কাদামাটির সাথে তার নিবিড় সম্পর্ক। কানামাছি, গোল্লাছুট, সাঁতার, আম কুড়ানো, নৌকা চালানো, মায়ের শাসন, ফুটবল খেলা, মাছধরা এবং কৃষিকাজ—এসব করেই তার শৈশব কেটেছে। তিনি শাহরাস্তির রাগৈ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং দেশগাঁও ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগ থেকে স্নাতকে সিজিপিএ ৩.৮৬ ও স্নাতকোত্তরে ৩.৮৯ পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন।
সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে তিনি ৪১তম বিসিএস জয়, ক্যারিয়ার পরামর্শ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—
জাগো নিউজ: ৪১তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডার পেয়েছেন, অনুভূতি কেমন?
মো. ইমাম হোসেন: বিসিএস পুলিশ ক্যাডার হয়ে মনে হয়েছে, আমার জীবনের গতিতে নতুন এক ছন্দ যোগ হয়েছে। সেই আনন্দ একেবারেই ভিন্নমাত্রার। আমার মা-বাবা, ভাই-বোন সবাই খুশি হয়েছেন। বর্তমান বাস্তবতায় বিসিএস ক্যাডার হলে নিজের প্রতি সমাজের মানুষের প্রত্যাশা জন্ম নেয়। তাদের বাঁধভাঙা উল্লাস দেখে আমারও মনে হয়েছে, সমাজ ও দেশের প্রতি আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সবচেয়ে ভালো লাগছে এই ভেবে, দুদকের কাজের সাথে পুলিশের কাজের ধরন ও পদ্ধতিগত মিল আছে। এখানে কিছু ইনকোয়ারি ইনভেস্টিগেশনের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। যার দরুণ পুলিশের চাকরিতে নিজেকে খাপ খাওয়ানো সহজ হবে বলে মনে করি।
জাগো নিউজ: বিসিএস দেবেন এমন ভাবনা মাথায় এলো কীভাবে?
মো. ইমাম হোসেন: বিসিএস নিয়ে আগে ভাবা হয়নি। ভার্সিটিতে পড়াশোনা করবো। উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণায় মন দেবো। এরপর ভার্সিটির টিচার হবো—শুরুতে এমন চিন্তাভাবনা ছিল। ভার্সিটির পাঠ চুকানোর পর শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন নিভে যাচ্ছে বুঝতে পেরে স্কলারশিপ পেয়েও উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য দেশের বাইরে যাওয়া হয়নি। ২০১৭ সালের শেষদিকে আমার ফিল্ড অব ইন্টারেস্টকে বিদায় দিয়ে বিসিএস প্ল্যাটফর্মকে আঁকড়ে ধরেছি। পুরোদমে শুরু করেছি প্রস্তুতি। অ্যাকাডেমিক পড়াশোনা ছেড়ে বিসিএস কেন্দ্রিক পড়াশোনায় শুরুতেই মনোযোগ দেওয়া কঠিন হলেও শেষের দিকে এসে পুরোপুরি মনোযোগ দিয়েছি।
জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই, প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছেন?
মো. ইমাম হোসেন: পড়াশোনার ক্ষেত্রে গ্রুপ স্ট্যাডিকে প্রাধান্য দিয়েছি। পাশাপাশি বাংলা ও ইংরেজি পত্রিকা পড়েছি। গ্রুপ স্ট্যাডির ক্ষেত্রে গ্রুপ মেম্বারের ক্ষেত্রে ভিন্নতা ছিল। যেমন- কেউ গণিত ভালো পারেন, কেউ ইংরেজি, কেউ বিজ্ঞান বা সাধারণ জ্ঞান। মাঝেমধ্যে কোচিং সেন্টারে পরীক্ষা দিয়ে নিজেকে যাচাই করতাম। ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও বাংলা ব্যাকরণ—এসব বিষয় নিয়ে টিউশনি করাতাম। পড়াশোনায় ধারাবাহিকতা রাখার চেষ্টা করতাম। আগে যা পড়তাম, পরে নতুন কোনো টপিক পড়লেও আগের টপিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিতাম—যাতে ভুলে না যাই।
আরও পড়ুন
জাগো নিউজ: আড়াল থেকে কেউ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন?
মো. ইমাম হোসেন: আমার সবচেয়ে খারাপ দিক হলো—আমি অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হতে পারি না। যার কারণে অন্যের কোনো মোটিভেশন আমার মধ্যে কাজ করে না। কোনো বিষয়ে প্রয়োজন হলে পরামর্শ করি কিন্তু আমি যা-ই করি, আমার মতো করে করতে পছন্দ করি। বিসিএসের ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে।
জাগো নিউজ: নতুনরা বিসিএসের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?
মো. ইমাম হোসেন: নতুনদের ক্ষেত্রে বলতে চাই, প্রথমে লক্ষ্য নির্ধারণ করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে দুটি লক্ষ্য ঠিক করা যেতে পারে। একাডেমিক পারপাস একটা। অন্যটা বিসিএস বা অন্য জব কেন্দ্রিক। একাডেমিক পারপাস ঠিক রেখে কেউ বিসিএস দিতে চাইলে অনার্স ফার্স্ট ইয়ার থেকেই পড়তে পারেন। এখন বিসিএস কেন্দ্রিক জব বেশি। ক্যাডার অথবা নন-ক্যাডার। নন-ক্যাডার ছাড়াও অন্য চাকরির পরীক্ষাও পিএসসি কর্তৃক গ্রহণ করার কথা ভাবা হচ্ছে। তার মানে, যেহেতু অধিকাংশ চাকরি পিএসসি কর্তৃক নেওয়া হচ্ছে, তাই প্রার্থীরা চাকরির ক্ষেত্রে পিএসসির পরীক্ষাকেন্দ্রিক প্রস্তুতি নিতে সমস্যা নেই। তবে আমি বলবো, একাডেমিক পড়াশোনাও প্রয়োজন আছে। কারো শিক্ষা বা গবেষণা নিয়েও আগ্রহ থাকতে পারে। তাই এখন থেকে ধৈর্য রেখে পড়াশোনা করতে পারেন। অনার্স বা মাস্টার্স শেষ হলে প্রার্থীর জন্য অপশন বেছে নেওয়া সহজ হবে। দুটি প্রিপারেশন থাকলে তিনি পিক অ্যান্ড চয়েসের ভিত্তিতে যে কোনো একটি বেছে নিতে পারেন। হয় বিসিএস বা ব্যাংক বা অন্য জব, নয়তো উচ্চশিক্ষা বা গবেষণা। শুধু বিসিএসকে টার্গেট করা ঠিক হবে না। বিসিএস এখন সবচেয়ে প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরীক্ষা। রিটেনের চেয়েও প্রিলি পরীক্ষায় পাস করা চ্যালেঞ্জিং। তাই প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য প্রচুর স্ট্যাডি করা যেতে পারে। আর হাতে সময় বেশি থাকলে ম্যাথ আর ইংরেজি রিটেন পড়তে পারেন। পত্রিকা পড়ার অভ্যাস থাকাটা জরুরি। লক্ষ্যের প্রতি অবিচল থেকে ধৈর্য ধরে পড়াশোনা করতে পারলে সফলতা আসবেই। হয়তো কেউ আগে আর কেউ পরে—সফল হবেনই।
জাগো নিউজ: পুলিশ ক্যাডার নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
মো. ইমাম হোসেন: আমার পরিকল্পনা হলো দক্ষ ও চৌকস একজন পুলিশ অফিসার হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করা। দেশের আইন ও বিধি অনুযায়ী জনগণকে সর্বোচ্চ সেবা প্রদান করা এবং নিজ প্রচেষ্টায় মানুষের উপকার করা। এজন্য আমি সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত।
এসইউ/এএসএম