বিসিএস জয়
লিখিত পরীক্ষা মোটেই সহজ ছিল না: মাসুদ করিম
মাসুদ করিম ৪৩তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তার জন্ম ১৯৯৬ সালের ০২ আগস্ট কুমিল্লার লালমাই উপজেলায়। বাবা আবুল হাশেম পেশায় কৃষক, মা নুরজাহান বেগম গৃহিণী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে অনার্স এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের একটি বেসরকারি কলেজে প্রভাষক পদে কর্মরত।
সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে তিনি বিসিএস জয়, ক্যারিয়ার পরামর্শ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মমিন উদ্দিন—
জাগো নিউজ: ক্যাডার পাওয়ার অনুভূতি কেমন?
মাসুদ করিম: আসলে প্রশ্নটির উত্তর আমার পক্ষে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তবে এতটুকু বলতে পারি, গত ৩-৪ বছরে এটি ছিল আমার জন্য সবচেয়ে স্বস্তিদায়ক সংবাদ। ২০২২ সালে আমি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে গ্রাউন্ড সার্ভিস অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে চূড়ান্তভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলাম। কিন্তু বিসিএসের প্রতি একাগ্রতার কারণে আমি ওই চাকরিতে জয়েন করিনি। পরে বিসিএসের নিয়োগের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে নিজের ভেতরে একরকম হতাশা কাজ করতে শুরু করে। মাঝে মাঝে মনে হতো বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে জয়েন না করে আমি হয়তো ভুল করেছি। ৪৩তম বিসিএসে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়ে আমি এ হতাশা থেকে মুক্তি পেয়েছি। আমার হারানো বিশ্বাস ফিরে পেয়েছি।
আরও পড়ুন: নিরাপত্তা কর্মী থেকে বিসিএস ক্যাডার মোত্তালিব মিহির
জাগো নিউজ: পড়াশোনায় কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল?
মাসুদ করিম: সেই অর্থে তেমন কোনো প্রতিবন্ধকতা না থাকলেও আমার লাইফে তেমন কোনো পথনির্দেশক বা পরামর্শক পাইনি। বলতে পারেন ছোটবেলা থেকেই একরকম নিজের চেষ্টাতেই এতদূর এসেছি। নিজের কাছে যখন যেটা ভালো মনে হয়েছে; সেটাই করেছি। এ ক্ষেত্রে সর্বদাই পরিবারের সমর্থন পেয়েছি। আমার প্রতি আমার স্বল্প শিক্ষিত মা-বাবার পূর্ণ আস্থা ও সমর্থনই আমাকে বিসিএসের এই দীর্ঘ ও অনিশ্চিত জার্নিতে সাহস ও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।
জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?
মাসুদ করিম: সত্যি কথা বলতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগে বিসিএস সম্পর্কে আমার পরিষ্কার কোনো ধারণা ছিল না। প্রথম বর্ষে যখন পড়ি; তখন খুব সম্ভবত ৩৬তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হয়। খেয়াল করে দেখলাম, আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক সিনিয়র ভাই-বোনই চূড়ান্তভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। যাদের খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। তখন শুধু একটা কথাই মনের মধ্যে উঁকি দিচ্ছিল, একই পরিবেশ ও একই রকম সুযোগ-সুবিধার মধ্যে থেকে তারা যদি পারেন, তাহলে আমি কেন পারবো না? তখন থেকেই নিজের ভেতরে বিসিএস নামক স্বপ্নের বীজ অঙ্কুরিত হতে থাকে। কিন্তু সে সময়টায় তা ছিল শুধুই স্বপ্ন; এর জন্য কোনো প্রকার ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত ছিলাম না।
জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই—
মাসুদ করিম: মূলত অনার্স ফাইনালের পর থেকেই বিসিএসের জন্য উঠে-পড়ে লাগলাম। এর মধ্যে মাস্টার্সের পড়াশোনাও চালিয়ে গেলাম। তার ওপর করোনার কারণে কিছু সময় নষ্ট হয়। ফলে ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে পারিনি। যার কারণে ৪১তম বিসিএসে প্রিলিমিনারিতেই বাদ পড়লাম। তারপরেও নিজের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত না হয়ে চেষ্টা চালিয়ে গেলাম। ৪৩তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি অংশ ভালোভাবেই পেরিয়ে গেলাম; কিন্তু লিখিত পরীক্ষার অংশটি আমার জন্য মোটেই সহজ ছিল না। রিটেন পরীক্ষার প্রথম পরীক্ষাটি দেওয়ার পরেই আমি অসুস্থ হয়ে পড়লাম। অসুস্থ শরীর নিয়েই বাকি পরীক্ষা দিই। ফলে ভালো কোনো কিছুর আশাই করতে পারলাম না। পাস-ফেলের দোমনা চিন্তায় দিন কাটতে লাগলো। যা হোক, আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে লিখিত পরীক্ষায়ও পাস করলাম। লিখিত পরীক্ষার পরে একটি বেসরকারি কলেজে প্রভাষক পদে জয়েন করে ফেলি। কর্মজীবনে প্রবেশের কারণে স্বাভাবিকভাবেই লেখাপড়ায় কিছুটা ভাটা পড়ে। রিটেনের ফলাফল পাওয়ার পর পুনরায় ভাইভার জন্য ভালোভাবে পড়তে আরম্ভ করি। খুব ভালো একটি ভাইভা দিই। মূলত ভাইভা দেওয়ার পর থেকেই মনের ভেতর একটা আশা জাগতে থাকে যে, কিছু একটা হলেও হতে পারে। ফলাফল প্রকাশের দিন যত ঘনিয়ে আসে আশার সাথে উৎকণ্ঠাও পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে। চাপমুক্ত থাকার জন্য চূড়ান্ত ফল প্রকাশের দুদিন আগে গ্রামের বাড়ি চলে যাই এবং পরিবারের সাথে সময় কাটানোর চেষ্টা করি। আমি খুবই সৌভাগ্যবান যে, আমার বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফলের সময় আমার মা-বাবার সঙ্গে ছিলাম। আমার সফলতার খবর শুনে তারা যে কী পরিমাণ খুশি হয়েছিলেন, তা নিজ চোখে দেখতে পেরেছি। আমার কাছে মনে হয়েছে বাবা-মাকে আনন্দিত দেখার চেয়ে তৃপ্তিদায়ক দৃশ্য পৃথিবীতে আর কিছু হতে পারে না।
আরও পড়ুন: আরও বিসিএস দেওয়ার সুযোগ আছে: চিশতিয়া পারভীন
জাগো নিউজ: কারো কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন কি?
মাসুদ করিম: অণুপ্রেরণা হিসেবে তেমন কোনো ব্যক্তির নাম বলতে পারছি না। তবে আমার ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা হিসেবে যা কাজ করেছে, তা হচ্ছে আমার বিশ্ববিদ্যালয় ও হল লাইফের পরিবেশ। ডিপার্টমেন্টের সেমিনার রুম, হলের রিডিং রুম এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে সিনিয়রদের চেষ্টা ও একাগ্রতা দেখেই মনের ভেতরে এক ধরনের উৎসাহ ও প্রেরণা কাজ করতো।
জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
মাসুদ করিম: জীবন সম্পর্কে আমি কখনোই ধরাবাধা কোনো ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে সামনে এগোইনি। যখন যা ভালো মনে হয়েছে, সময়োপযোগী মনে হয়েছে, নিজের জন্য কল্যাণকর মনে হয়েছে; তা-ই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম বর্ষ থেকে আমি ২-৩টি টিউশন করতাম। এসব টিউশন করানোর মধ্য দিয়ে আমি একটি বিষয় উপলব্ধি করতে পারলাম, আমি পড়াতে ভালোবাসি এবং পড়িয়ে আনন্দ পাই। এখন যেহেতু বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি; সেহেতু শিক্ষকতার পেশায় নিজেকে যতটুকু সম্মুখে নিয়ে যাওয়া যায় এবং শিক্ষক হিসেবে নিজেকে যতটা যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলা যায়—সেই লক্ষ্যেই কাজ করার চেষ্টা করবো।
এসইউ/জেআইএম